ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জঙ্গী প্রতিরোধে এবার মাঠে নামছেন সাড়ে তিন কোটি ব্যবসায়ী

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ৫ আগস্ট ২০১৬

জঙ্গী প্রতিরোধে এবার মাঠে নামছেন সাড়ে তিন কোটি ব্যবসায়ী

এম শাহজাহান ॥ জঙ্গী-সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় এবার দেশের সাড়ে তিন কোটি ব্যবসায়ী মাঠে নামছেন। জঙ্গীবাদ মোকাবেলায় সারাদেশের ব্যবসায়ীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে একই প্লাটফর্মে আসবেন। এ লক্ষ্যে ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই থেকে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ বিরোধী জাতীয় সম্মেলন করার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। এই সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে-দেশ থেকে জঙ্গীবাদ সমূলে উৎপাটনে সরকারকে সব ধরনের সহযোগিতা দেয়া। এছাড়া জঙ্গীবাদ ইস্যুতে বহির্বিশ্বে যে ভাবমূর্তির সঙ্কট তৈরি হয়েছে তা পুনরুদ্ধারের বিষয়েও কৌশল নির্ধারণ করা হবে। শুধু তাই নয়, জঙ্গীদের অর্থায়ন নিয়ন্ত্রণে বেসরকারীখাতের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দেয়া হবে এই সম্মেলনে। এছাড়া বিনিয়োগ ও রফতানি প্রবৃদ্ধির ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রাখতে দেশী-বিদেশী উদ্যোক্তাদের আস্থার সঙ্কট দূর করার বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। জানা গেছে, গুলশানের হলি আর্টিজান ও শোলাকিয়ায় জঙ্গী হামলা এবং সর্বশেষ কল্যাণপুরে জঙ্গী আস্তানা চিহ্নিত হওয়ার পর থেকে বিদেশী উদ্যোক্তাদের মধ্যে এক ধরনের আস্থার সঙ্কট তৈরি হয়েছে। নিরাপত্তা ইস্যুতে বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের বিদেশী রাষ্ট্রদূতরা সরকারের সঙ্গে বৈঠক করছেন। প্রতিটি বৈঠকেই সার্বিক নিরাপত্তা ও আইন-শৃঙ্খলার বিষয়টি তুলে ধরছেন কূটনীতিকরা। তারা বলছেন, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য এবং উন্নয়ন কর্মকা- অব্যাহত রাখতে হলে সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টি আগে নিশ্চিত করতে হবে। যদিও সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপে ইতোমধ্যে তারা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই থেকেও এবার এ বিষয়ে করণীয় ও কৌশল নির্ধারণ করা হবে। এলক্ষ্যে এফবিসিসিআই স্ট্যান্ডিং কমিটি অন ল্য এ্যান্ড অর্ডার, এন্টি-স্মাগলিং-আগামীকাল ৬ আগস্ট শনিবার ফেডারেশন ভবনে জরুরী সভা আহ্বান করেছে। সভায় সভাপতিত্ব করবেন কমিটির চেয়ার‌্যমান ও এফবিসিসিআইয়ের সাবেক প্রথম সহসভাপতি আবুল কাশেম আহমেদ। এফবিসিসিআই সভাপতি আব্দুল মাতলুব আহমেদ সভায় উপস্থিত থাকবেন। এই সভায় জাতীয় সম্মেলনের প্রস্তুতির বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এদিকে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, জঙ্গী-সন্ত্রাসবাদ একটি বৈশ্বিক সমস্যা। শুধু বাংলাদেশ নয়, সারাবিশ্বই এই সঙ্কটের মধ্যে রয়েছে। তারপরও হলি আর্টিজানের ঘটনার পর সরকারের পক্ষ থেকে জঙ্গী নির্মূলে সব ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় কল্যাণপুরে জঙ্গীদের বিরুদ্ধে বড় ধরনের অপারেশন সফল হয়েছে। তিনি বলেন, এফবিসিসিআই থেকেও জঙ্গী বিরোধী জাতীয় সম্মেলন করা হচ্ছে। দেশের সব জেলা চেম্বার ও এ্যাসোসিয়েশন প্রতিনিধিরা ওই সম্মেলনের অংশগ্রহণ করবেন। মূলত জঙ্গী বিরোধী জনমত তৈরিতে এই সম্মেলন বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। তিনি বলেন, জঙ্গী ইস্যুতে সমস্ত জাতি আজ ঐক্যবদ্ধ। এখন মানুষে মানুষে ঐক্য হচ্ছে। ব্যবসায়ীরাও ঐক্যবদ্ধ হচ্ছেন। জানা গেছে, জঙ্গী-সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় সরকারের পাশে থাকবে দেশের ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিরা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধান অতিথি করে আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে রাজধানী ঢাকায় এই সম্মেলন করার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। জঙ্গীবাদ একটি বৈশ্বিক সমস্যা, তাই এই ইস্যুতে বাংলাদেশ থেকে কোন বিনিয়োগকারী যাতে মুখ ফিরিয়ে না নেন, সে বিষয়ে বিশ্ব সম্প্রদায়কে বিশেষ বার্তা দেয়া হবে। দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীদের নিরাপত্তা রক্ষায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতার বিষয়ে দিক নিদের্শনামূলক পরামর্শ প্রদান ও গঠনমূলক সমালোচনা করা হবে এই সম্মেলনে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আবুল কাশেম আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, জঙ্গী-সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় সরকারকে সব ধরনের সহযোগিতা দিতে ব্যবসায়ী সম্প্রদায় প্রস্তুত রয়েছে। যেকোন ক্রান্তিকালে ব্যবসায়ীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে থাকেন। জঙ্গীবাদ মোকাবেলায় দেশের সাড়ে তিন কোটি ব্যবসায়ী রাজপথে নামবে। এজন্যই এফবিসিসিআইয়ের উদ্যোগে জাতীয় সম্মেলন করার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ ব্যবসায়ীদের প্রথম শত্রু। অর্থনৈতিক স্বার্থে এদের দমন করতেই হবে। সারাদেশের ব্যবসায়ীরা এই সম্মেলনে অংশ নেবেন। জানা গেছে, জঙ্গী ইস্যুতে দেশের প্রধান রফতানি শিল্প পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা চাপের মুখে রয়েছেন। নিরাপত্তা ইস্যুতে বিদেশী ক্রেতারা (বায়ার) বাংলাদেশ সফর করতে উৎসাহিত বোধ করছেন না। এমনকি দেশী-বিদেশী বিনিয়োগও কিছুটা অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। এই বাস্তবতায়ও এফবিসিসিআই থেকে জঙ্গীবিরোধী সম্মেলন করা হচ্ছে। সংগঠনটির সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ সম্প্রতি রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের সঙ্গে দেখা করে এ ধরনের একটি কনভেনশন করার কথা জানিয়ে এসেছেন। জানা গেছে, যেকোন দুর্যোগ ও সঙ্কট তৈরি হলে এফবিসিসিআই থেকে এ ধরনের কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়ে থাকে। গত ২০১৩ সালে হরতাল-অবরোধের বিরুদ্ধে এবং শান্তির দাবিতে সাদা পতাকা হাতে রাজপথে মিছিল করেন ব্যবসায়ীরা। করেন শান্তি সমাবেশ। তৎকালীন বিরোধীদল বিএনপির ডাকা টানা অবরোধ ও জামায়াত-শিবিরের তা-বের মুখে অর্থনৈতিক সব কাজকর্মে স্থবিরতা নেমে এসেছিল। যাত্রীবাহী পরিবহনে পেট্রোলবোমা ও অগ্নিসংযোগ করে মানুষ পুড়িয়ে মারা হয়েছে। শুধু তাই নয়, সেই সময় কারখানায় অগ্নিসংযোগ করে হাজার কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট করেছে পিকেটাররা। ওই অবস্থায় এফবিসিসিআইয়ের উদ্যোগে একযোগে দেশের ৬৪টি জেলা চেম্বার ও সকল এ্যাসোসিয়েশন শান্তির সপক্ষে কর্মসূচী গ্রহণ করে। সাদা পতাকা হাতে নিয়ে রাজপথে নেমে আসেন ব্যবসায়ীরা। রফতানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পখাতের বড় সংগঠন বিজিএমইএ’র সহসভাপতি ফেরদৌস পারভেজ বিভন জনকণ্ঠকে বলেন, এ্যাপেক্স বডি হিসেবে এফবিসিসিআইয়ের এই উদ্যোগের সঙ্গে রয়েছেন পোশাক খাতের ব্যবসায়ীরা। জঙ্গী-সন্ত্রাবাদ সারাবিশ্বের সমস্যা। এই সমস্যা উত্তরণে যেকোন কর্মসূচীর সঙ্গে থাকবে বিজিএমইএ। জানা গেছে, ৬৪টি জেলা চেম্বার ছাড়াও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও এফবিসিসিআইয়ের অধিভুক্ত আরও প্রায় ২০টি চেম্বার রয়েছে। এসব বাণিজ্য সংগঠনের বাইরেও দেশে প্রায় ৩ কোটি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী রয়েছেন। এফবিসিসিআইয়ের এই কর্মসূচীতে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও সম্পৃক্ত হবেন।
×