ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রাম বন্দর অটোমেশনের নামে ১১৮ কোটি টাকা অপচয়

প্রকাশিত: ০৪:১৮, ৫ আগস্ট ২০১৬

চট্টগ্রাম বন্দর অটোমেশনের নামে ১১৮ কোটি টাকা অপচয়

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ চট্টগ্রাম বন্দর অটোমেশনের নামে কোটি কোটি টাকা অপচয় হয়েছে। এ সংক্রান্ত চিটাগাং পোর্ট ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ১১৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয় হলেও মূল লক্ষ্য অর্জিত হয়নি। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) মূল্যায়নে উঠে এসেছে এ চিত্র। সম্প্রতি সমাপ্ত প্রকল্পের মূল্যায়ন প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে সংস্থাটি। এ বিষয়ে আইএমইডির দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, প্রকল্পটি গ্রহণের মূল উদ্দেশ্য ছিল সিটিএমএস (কম্পিউটারাইজড টার্মিনাল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম) স্থাপন করা। এছাড়া ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ ও উন্নয়ন অর্থাৎ রাস্তা ও ব্রিজ নির্মাণ, বন্দরের পরিবেশ উন্নয়ন ও সক্ষমতা বাড়ানো। কিন্তু দেখা গেছে যে উদ্দেশে প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে তার অধিকাংশই পূরণ হয়নি। আইএমইডির প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, প্যাকেজ-১ এর আওতায় প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে সিটিএমএস এবং এমআইএস স্থাপন করা। এটি করা হয়েছে। কিন্তু সিটিএমএস চালু হলেও তা সম্পূর্ণ চালু করা সম্ভব হয়নি। এর কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, সিটিএমএস কার্যকর করার জন্য আমদানি-রফতানিকারক, সিএ্যান্ডএফ এজেন্ট, ফরেন ফরোয়ার্ডার এবং আইসিডি অপারেটরসহ সংশ্লিষ্ট সকল এজেন্সির অংশগ্রহণ প্রয়োজন হয় এবং সংশ্লিষ্ট সকলকে তৎপর হয়ে সংশ্লিষ্ট অংশের কার্য সম্পাদনের পর কম্পিউটারে ইন্টেরিওর দিতে হয়। পোর্ট অপারেশন এর সঙ্গে যুক্ত সংশ্লিষ্ট সকলকে প্রকল্পের আওতায় প্রশিক্ষণ দেয়া হলেও কম্পিউটার টার্মিনাল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (সিটিএমএস) পুরোপুরি কার্যকর করা হয়নি। অন্যদিকে বাংলাদেশ মারপোল-৭৩/৭৮ স্বাক্ষরকারী একটি দেশ। সে হিসেবে বন্দরের পরিবেশ আন্তর্জাতিক মানের রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ কারণে জাহাজের পোড়া তেল সংগ্রহের জন্য প্রকল্পের আওতায় বে ক্লিনার-২ নামে একটি ভেসেল সংগ্রহ করা হয়। কিন্তু এ ভেসেলের কোন কার্যক্রম নেই। এর কারণ হিসেবে আইএমইডি বলছে বাংলাদেশের পোর্টগুলোতে জাহাজ হতে পোড়া তেল সংগ্রহ একটি লাভজনক ব্যবসা। এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী এ তেল সংগ্রহ করে তা রিফাইন করে বাজারে বিক্রি করে। সংস্থাটির মতে বে ক্লিনার-২ না কিনে এ অর্থ দিয়ে বন্দর উন্নয়নে অন্য কাজ করা যেত। আইএমইডি বলছে, এ প্রকল্পের আওতায় স্থাপিত সিটিএমএস এর রক্ষণাবেক্ষণ কাজ বিদেশী কোম্পানি দিয়ে পরিচালনা করা হচ্ছে। অথচ প্রকল্পের উদ্দেশ্য অনুসারে চট্টগ্রাম বন্দরের আইটি সেকশনের মাধ্যমে সিটিএমএস এর সব কার্যক্রম সম্পাদন হওয়ার কথা। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এর আর্থিক সহায়তায় ৭৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০০৫ সালের জুলাই থেকে ২০০৯ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়। এটি বাস্তবায়নের দায়িত্বে ছিল নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের আওতায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। সর্বশেষ সংধোনীর মাধ্যমে প্রকল্পের ব্যয় বাড়িয়ে করা হয় ১৩৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। সেই সঙ্গে বাস্তবায়নকাল বাড়িয়ে করা হয়েছিল ২০১১ সালের জুন পর্যন্ত। কিন্তু এ সময়ের মধ্যেও কাজ শেষ করতে না পারায় প্রকল্পটির প্রকৃত বাস্তবায়নের সময় লাগে ২০১৩ সালের জুন পর্যন্ত। এ সময়ে ব্যয় হয়েছিল ১১৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা। প্রকল্পটির ব্যয়ের ক্ষেত্রে সার্বিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে মোট অনুমোদিত ব্যয়ের ৮৮ দশমিক ৩০ শতাংশ। বাস্তব অগ্রগতির ক্ষেত্রে বলা হয়েছে শতভাগ।
×