ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আর হানাহানি নয়

প্রকাশিত: ০৩:৫৫, ৫ আগস্ট ২০১৬

আর হানাহানি নয়

জ্ঞানার্জনই যাদের তপস্যা, শিক্ষার আলো যাদের আলোকিত করার কথা, শান্তির বারতা নিয়ে যাদের দেশ ও সমাজে পরিভ্রমণ করা ব্রত, প্রগতির ঝা-া হাতে যাদের এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য, তারা আজ লিপ্ত হানাহানি, সংঘর্ষ, সংঘাতে। শুধু তাই নয়, মারণাস্ত্র হাতে তারা হত্যাও করছে সহমর্মী সহপাঠীকে। এরা নিজেদের অপ্রতিরোধ্য ভেবে অস্ত্র হাতে মারমুখী অবয়বে শিক্ষাকে লাঞ্ছিত করতে পিছপা হচ্ছে না। অন্তর্কলহ এমনভাবে পরাভূত করেছে তাদের মনোজগতকে যে, সহকর্মীকেও শত্রুভাবাপন্ন হিসেবে প্রতিপন্ন করে তাকে বিনাশে উদ্যত হয়ে উঠছে। এরা মানে না কোন আইন, নীয়মনীতি। আধিপত্য বিস্তার আর নেতৃত্বের সংঘাতে গত পঁয়তাল্লিশ বছরে কত যে তরুণ-তরুণীর প্রাণ হরণ হয়েছে, তার ইয়ত্তা মেলে না। খুন, সন্ত্রাস আর অমানবিকতার মোড়কে আক্রান্ত অবস্থায় জীবনের অপচয়ে আবৃত থেকে তারা হয়ে ওঠে অপরাধী। সমাজকে কলুষিত করে তোলা ছাড়াও নানা অপরাধে জড়িত হওয়ার ক্ষেত্রকে করে সম্প্রসারিত। গত চার দশকে এমন চিত্র দেখা গেছে। রাজনৈতিক আদর্শ ও চেতনা কানাকড়ি মূল্য পায় না এসব আধিপত্য বিস্তারকারী ও সন্ত্রাসী মনোভাবে বেড়ে ওঠা তরুণদের কাছে। কেন তারা হয়ে পড়ে এমন নির্মম, নিষ্ঠুর এবং শিক্ষা, শান্তি, প্রগতিবিরোধী তা নিয়ে কোন মনস্তাত্ত্বি¡ক ব্যাখ্যা বা গবেষণা মেলে না। তবে সহজভাবে বলা যায়, শিক্ষাঙ্গনে অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্থানীয় নেতৃবৃন্দের দ্বন্দ্ব, প্রতিযোগিতা ও আধিপত্যের কারণে এসব ঘটনা ঘটে। এসব নিয়ে মামলাও হয়। কিন্তু বিচার কাজ ও শাস্তির কোন নজির অদ্যাবধি মেলেনি। স্বাধীনতার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাত ছাত্রনেতা হত্যার বিচারে কারাদ- হলেও পঁচাত্তরপরবর্তী সামরিক জান্তা শাসকরা তাদের কারামুক্ত করে রাজনীতিতে অনুপ্রবেশের সুযোগ করে দেয়। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ক্ষমতাসীন জান্তা শাসকরা ছাত্রদের চরিত্র হনন, শিক্ষা ব্যবস্থাকে সঙ্কুুচিত করে কম শিক্ষিত তৈরির অপচেষ্টায় ছাত্র রাজরনীতির নামে সন্ত্রাসী উৎপাদন চালু করে। তাদের হাতে অবৈধ অস্ত্র ও অর্থ তুলে দেয়। পরবর্তীকালে এরা সমাজে বিভীষিকা হিসেবে বিচরণ করে আসছে। জান্তা শাসকরা ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘাত বাধিয়ে খুনখারাবির ঘটনা ঘটিয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় সেই সন্ত্রাসী মানসিকতার পরিবর্তন হয়নি। বরং দিন দিন তা বাড়ছেই। এখন নিজ দলের নেতাকর্মীকে পেটানো, হত্যা করার মতো নৃশংসতায় লিপ্ত হচ্ছে তারা। দেশ যখন জঙ্গীবাদে আতঙ্কিত এবং এই জঙ্গীরা তরুণ এবং উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত, তখন আদর্শবাদী ছাত্র সংগঠনগুলো নিজেদের মধ্যে কলহ, সংঘর্ষ, হানাহানিতে লিপ্ত হওয়ায় আতঙ্কের মাত্রাকে বহুগুণে বাড়িয়ে তোলে। দেশ যখন বন্যাকবলিত, জঙ্গীদের গুপ্ত হত্যারোধে দেশবাসী সচেষ্ট তখন সরকার সমর্থক ছাত্র সংগঠনের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতায় জড়িয়ে পড়াসহ খুনোখুনী গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। তাদের অসহিষ্ণুতার পরিধি এমন দাঁড়িয়েছে যে, শোকের মাস আগস্টের প্রথম প্রহরেই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে একজন ছাত্রলীগ নেতার নিহত হওয়ার ঘটনা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা কোন শুভবুদ্ধির পরিচায়ক নয়। চট্টগ্রামে জঙ্গীবিরোধী মানববন্ধনে নিজেদের মধ্যে মারামারি, বরিশাল বিএম কলেজে সংঘর্ষের ঘটনা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। সাংগঠনিক নিয়মশৃঙ্খলা, আদর্শ, সম্প্রীতিকে উপেক্ষা করে যারা এসব ঘটনা ঘটায়, তাদের সংগঠন করার যেমন কোন অধিকার নেই, তেমনি তাদের আইনের আওতায় নিয়ে যাওয়া সমীচীন। শিক্ষাঙ্গনে ছাত্র রাজনীতিকে কলুষতা, হানাহানিমুক্ত করা হোক আর শিক্ষা-দীক্ষার প্রসার ঘটুক এমনটাই কাম্য সবার।
×