ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অতিরিক্ত শব্দে শিশুর শেখার ক্ষমতা নষ্ট

প্রকাশিত: ০৩:৪৯, ৫ আগস্ট ২০১৬

অতিরিক্ত শব্দে শিশুর শেখার ক্ষমতা নষ্ট

কথা বা শব্দাবলী শিখতে পারা শিশুর জন্য একান্তই গুরুত্বপূর্ণ। এটা এক ধরনের দক্ষতা যা শিশুর শিক্ষাগত ক্ষমতা বা সামর্থ্য অর্জনের ভিত্তি রচনা করে। তবে শিশু কি শিখছে, কিভাবে শিখছে কতটা শিখছে তা পরিবেশ থেকে সে কতখানি ও কি ধরনের উদ্দীপনা লাভ করছে তার দ্বারাও প্রভাবিত হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে লক্ষ্য করা গেছে যে ঘরে কিংবা স্কুলে ব্যাকগ্রাউন্ড আওয়াজ শিশুর নতুন নতুন শব্দ শেখাকে কঠিন করে তোলে। আরও দেখা গেছে যে বাড়তি ভাষার সঙ্কেত বা সূত্রাবলী গোলমেলে পরিবেশের বিরূপ প্রভাব কাটিয়ে উঠতে শিশুদের সাহায্য করতে পারে। উইসকনসিন ম্যাডিসন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালিত এক গবেষণায় এই তথ্যটি বেরিয়ে এসেছে। গবেষণার ফল সম্প্রতি ‘চাইল্ড ডেভেলপমেন্ট’ সাময়িকীতে প্রকাশ করা হয়। গবেষণাটি করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মনস্তত্ত্ব¡ বিভাগের ছাত্র ব্রায়ানা ম্যাকমিলান। তিনি বলেন, আধুনিক বাড়ি ঘরগুলো টিভি, রেডিও ও লোকজনের কথাবার্তার মতো কোলাহলময় শব্দে পরিপূর্ণ যার ফলে মনটা বিক্ষিপ্ত হয় বা অন্যদিকে চলে যায়। এতে কচি বয়সে শিশুর কথা বা শব্দ শেখার ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ে। তাই বাচ্চাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলা বা ভাবের আদান প্রদান করার সময় বয়স্কদের উচিত চারপাশের পরিবেশে কত জোরে জোরে কথা বলা হচ্ছে সে ব্যাপারে সচেতন হওয়া। পরিবেশে কোলাহল বা গোলমালের এই প্রভাব সংক্রান্ত গবেষণায় দেখা যায় যে খুব বেশি কোলাহল বা হৈচৈ বা বেসুরো ধ্বনি কগনিটিভ এবং মনোদৈহিক উভয় দিক দিয়ে শিশুর ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। স্কুলের লেখাপড়ায় অধিকতর নেতিবাচক ফল এবং হৃদস্পন্দনের হার ও রক্তে কার্টিসল নামক হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি থেকে এটা দেখা যায়। কথা বা শব্দ শেখা সম্পর্কিত বেশিরভাগ গবেষণা ল্যাবটেরির নীরব পরিবেশে পরিচালিত হয়ে থাকে। তবে চলতি গবেষণাটি শুধু শব্দ বা কথা শেখার ওপরই দৃষ্টিবিদ্ধ করেনি উপরন্তু শিশুরা বাড়িতে বা স্কুলে যে ধরনের হৈচৈ বা কোলাহলের মধ্যে থেকে থাকতে পারে সেই পরিবেশ অনুকরণেরও চেষ্টা করা হয়েছে। ২২ থেকে ৩০ মাস বয়সী ১০৬টি শিশুকে তিন ধরনের পরীক্ষা নেয়ার মাধ্যমে এই গবেষণা চালানো হয়। এতে তাদের অপরিচিত বস্তুর নাম শেখানো হয়। তারপর সেই বস্তুগুলো লেবেল এঁটে দেয়ার পর তারা সেগুলো চিনতে পারছে কিনা সেই পরীক্ষা নেয়া হয়। তার আগে প্রথমে শিশুদের দুটি নতুন শব্দ যুক্ত বাক্য শোনানো হয়েছিল। এরপর নতুন নামগুলো কোন্ কোন্ বস্তুর সঙ্গে মিল খায় তা তাদের শেখানো হয়। পরিশেষে তাদের সেই শব্দাবলী মনে করার ক্ষমতার পরীক্ষা নেয়া হয়। প্রথম পরীক্ষায় ২২ থেকে ২৪ মাস বয়সী ৪০টি শিশুকে নতুন শব্দাবলী শেখার সময় হয় অধিকতর উচ্চৈঃস্বরে কিংবা নিচু স্বরে বক্তব্য শোনানো হয়েছিল। অপেক্ষাকৃত নিচু স্বরে বক্তব্য শোনা বাচ্চারাই কেবল সাফল্যের সঙ্গে নতুন শব্দাবলী শিখেছে। দ্বিতীয় পরীক্ষা ২৮ থেকে ৩০ মাস বয়সী ৪০টি শিশুর ভিন্ন একটি গ্রুপকে নেয়া হয়। সেই পরীক্ষায় এটা নির্ণয়ের চেষ্টা করা হয় যে অপেক্ষাকৃত বেশি বয়সের শিশুরা পরিবেশের গোলমেলে শব্দের বিরূপ প্রভাব অপেক্ষাকৃত ভালভাবে কাটিয়ে উঠতে পারে কিনা। এ ক্ষেত্রেও দেখা গেছে যে ব্যাকগ্রাউন্ড ধ্বনি নিচু লয়ে থাকলেই কেবল অপেক্ষাকৃত বেশি বয়সী বাচ্চারা সাফল্যের সঙ্গে নতুন শব্দ বা কথা শিখতে পেরেছে। তৃতীয় পরীক্ষায় অপেক্ষাকৃত বেশি বয়সী ২৬টি শিশুকে নীরব পরিবেশে দুটো শব্দের লেবেল দেখানো হয়। এরপর চারটি শব্দের মধ্যে দুটি তারা সবে শুনেছে এবং দুটি হচ্ছে নতুন। এই চারটি লেবেলের অর্থই তাদের শেখানো হয়েছিল দ্বিতীয় পরীক্ষার সেই কোলাহলময় পরিবেশে। এক্ষেত্রে দেখা যায় যে এই শিশুরা নতুন শব্দ ও সেগুলোর অর্থ কেবল তখনই শিখেছে যখন নীরব পরিবেশে সেই লেবেলগুলো তারা প্রথম শুনেছিল। এ থেকেই বোঝা যায় যে ব্যাকগ্রাউন্ড ধ্বনির কারণে মন অন্যদিকে সরে না গেলে শব্দের ধ্বনিগত অভিজ্ঞতা শিশুদের পরে এসব ধ্বনিকে অর্থের সঙ্গে যুক্ত করতে সাহায্য করে। সূত্র : লাইফ সায়েন্স
×