ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর

ব্রিক্সিট নিয়ে যত কথা

প্রকাশিত: ০৩:৪৫, ৫ আগস্ট ২০১৬

ব্রিক্সিট নিয়ে যত কথা

ব্রিক্সিট ইংরেজী ভাষার অভিধানে একটি নতুন শব্দ। ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের (ইৎ) সঙ্গে বহির্গমন বা এক্সিট (বীরঃ) যোগ করে এই শব্দটির উদ্ভব হয়েছে। এর আগে এমনিভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে গ্রীসের বেরিয়ে যাওয়ার প্রস্তাবনা গ্রেক্সিট (এৎবীরঃ) হিসেবে আখ্যায়িত হয়ে ইংরেজীসহ ইউরোপের বিভিন্ন ভাষায় নতুন শব্দ হিসেবে যোজিত হয়েছিল। চলতি বছর জুনের ২২ তারিখে আমি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যামব্রিজে ছিলাম। সেখানকার হার্ভার্ড ও বস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিবিদের সঙ্গে আলোচনা শেষে আমরা আশা করেছিলাম যে তার পরের দিন অর্থাৎ ২৩ জুন ব্রিক্সিটের ওপর যুক্তরাজ্যে যে গণভোট অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে তাতে ব্রিক্সিট মতবাদীরা পরাজিত হবেন এবং যুক্তরাজ্যের জনগণ ইউরোপীয় ইউনিয়নে থেকে যাওয়ার অনুকূলে সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত দেবেন। ২০ জুন প্রেসিডেন্ট ওবামাও যুক্তরাজ্যকে ইউরোপীয় ইউনিয়নে থেকে যাওয়ার জন্য আহ্বান জানান। এর আগে জার্মানির চ্যান্সেলর এঞ্জেলা মের্কেল ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টি ফ্রাঁসোয়া ওঁলান্দে প্রকারান্তরে যুক্তরাজ্য ইউরোপীয় ইউনিয়নে থেকে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন। কিন্তু ২৩ জুন রাতে ও ২৪ জুন সকালে জানা গেল যে, যুক্তরাজ্য সার্বিকভাবে শতকরা ৫২ ভাগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে যাওয়ার অর্থাৎ ব্রিক্সিটের অনুকূলে সমর্থন দিয়েছেন। এই সমর্থনের গণভোটে প্রায় ৩ কোটি জনগণ অর্থাৎ যুক্তরাজ্যের সব ভোটারের প্রায় শতকরা ৭১.৮ ভাগ ভোট দিয়েছে। এলাকাওয়ারী হিসেবে ব্রিক্সিটের অনুকূলে ইংল্যান্ডে ভোট পড়েছে শতকরা ৫৩.৮ ও ওয়েলসে ৫২.৫ ভাগ। যুক্তরাজ্যের অন্তর্ভুক্ত স্কটল্যান্ড, ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকার অনুকূলে সমর্থন দিয়েছে শতকরা ৬২ ভাগ ভোট নিয়ে আর উত্তর আয়ারল্যান্ডে তেমনি ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকার অনুকূলে ভোট এসেছে ৫৫.৮ ভাগ । আমি যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের বৈদেশিক সাহায্যের আর্থিক তত্ত্বাবধান সম্পর্কিত একটি কর্মশালায় অংশগ্রহণ করতে জুনের শেষ ও জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে লন্ডনে ছিলাম। এই সময়ে সে দেশের অর্থনীতি ও আর্থিক ব্যবস্থাপনায় প্রভাবশালী এবং কর্মরত কয়েকজন ব্যক্তিত্ব, কমন্স সভার নেতৃস্থানীয় কয়েক সদস্য এবং এই ক্ষেত্রে কর্মরত কিছু গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধির সঙ্গে ব্রিক্সিট নিয়ে আলোচনা করি। আলোচনায় প্রতিভাত হয় যে, যুক্তরাজ্যের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা ব্রিক্সিটের অনুকূলে ছিলেন না। সাধারণ জনগণ সম্ভবত জাতীয়তাবাদী আবেগের তাড়নায় ব্রিক্সিটের অনুকূলে ভোট দিয়েছেন। এই প্রেক্ষিতে একজন অর্থনীতিবিদ মার্টিন উলফ ব্রিক্সিটকে আলোচনার উপসংহারে একটি উপদ্রব বা বর্জনীয় ঝামেলা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন (ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস, লন্ডন, জুলাই ৫, ২০১৬) আলোচনায় প্রতিভাত হয়, যুক্তরাজ্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ মূলত ৩টি কারণে ব্রিক্সিটের অনুকূলে ভোট দিয়েছেনÑ ক. যুক্তরাজ্যে জাতীয়তা ও স্বকীয়তাবোধে উজ্জীবিত জনগণ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হিসেবে তাদের ওপর বহুজাতিক কর্তৃত্ব বা তত্ত্বাবধানের কারণে অস্বস্তিবোধ করছিলেন; তারা দেখেছেন যুক্তরাজ্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যে আর্থিক সুবিধাদি পাচ্ছে তার চেয়ে বেশি ইউরোপীয় ইউনিয়নকে চাঁদা হিসেবে দিচ্ছে। খ. ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিধান অনুযায়ী যুক্তরাজ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত অন্যান্য দেশ, বিশেষত পূর্ব ইউরোপ থেকে অভিবাসন বেড়ে যাওয়ায়, শ্রমমূল্য কমে গেছে যা যুক্তরাজ্যের সাধারণ মানুষের কাছে অনভিপ্রেত মনে হয়েছে এবং গ. ইউরোপীয় ইউনিয়ন সম্পর্কিত চুক্তি ও সমঝোতার আলোকে ইউরোপের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের অবাধ বাণিজ্য চালু হওয়ায় যুক্তরাজ্যস্থিত শিল্প ও কৃষি উৎপাদন যথাযথভাবে রক্ষিত হচ্ছে না। ব্রিক্সিটের অনুকূলে এসব কারণে সৃষ্ট মানসিকতার সমর্থনের প্রকাশ ঘটেছে ১৬ জুনে ইউরোপীয় ইউনিয়নে থেকে যাওয়ার সমর্থক শ্রমিকদলীয় সাংসদ জো কোকসকে ‘ব্রিটেন সবকিছুর আগে’ এই মতবাদের উগ্রবাদী টমাস মেইর কর্তৃক পশ্চিম ইয়র্কশায়ারে গুলি করে হত্যার মাধ্যমে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯৩ সালে। এর উৎপত্তি ইউরোপীয় কয়লা ও ইস্পাতকে কেন্দ্র করে। ১৯৫১ সালে ইউরোপীয় কয়লা ও ইস্পাত ইউনিয়নের ৬টি দেশের মধ্যে এর মুক্ত বাণিজ্য প্রচলন করে। একে ভিত্তি করে ১৯৬০ সালে ৭ সদস্য নিয়ে যুক্তরাজ্যের প্রস্তাব অনুযায়ী ইউরোপীয় মুক্ত বাণিজ্য সমিতির সৃষ্টি হয়। এই মুক্ত বাণিজ্য এলাকার মধ্যস্থিত দেশসমূহ নিজেদের মধ্যে শুল্কবিহীন মুক্ত বাণিজ্যের প্রচলন করে। কিন্তু তারা ৩য় পক্ষের দেশ হতে আমদানি করা পণ্যসামগ্রীর ওপর সদস্য দেশসমূহের ভিন্ন ভিন্ন শুল্ক আরোপ করার অধিকার সংরক্ষণ করে। এর আগে ১৯৫৮ সালে এই মুক্ত বাণিজ্য এলাকার সূত্রকে ভিত্তি করে ইউরোপীয় শুল্ক ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠিত হয়। এই শুল্ক ইউনিয়নের শর্ত অনুযায়ী সদস্য দেশসমূহ নিজেদের মধ্যে শুল্কবিহীন মুক্ত বাণিজ্য সংরক্ষণ করে সব সদস্য দেশের তরফ থেকে তৃতীয় দেশসমূহ হতে আমদানিকৃত পণ্য সামগ্রীর ওপর একই হারে শুল্ক আরোপ করে। এই শুল্ক ইউনিয়নের অভিজ্ঞতার আলোকে ১৯৯৩ সালে মাসট্রিকট চুক্তির আওতায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন সুনির্দিষ্ট শর্ত অনুযায়ী প্রতিষ্ঠিত হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নের শর্ত হিসেবে শুল্ক ইউনিয়নের সদস্য থাকাকালীন অবস্থায় সমন্বিত বা একীভূত শুল্ক নীতির পরবর্তী ধাপের ওপরে একই অর্থনৈতিক নীতি অনুসরণ করার বাধ্যকতা সদস্য দেশসমূহ গ্রহণ করে। পরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে ১১টি রাজ্য ১৯৯৯ সালে ইউরোকে সাধারণ মুদ্রা হিসেবে গ্রহণ করে ইউরো জোন প্রতিষ্ঠা করে। ইউরো জোনের মুদ্রানীতি এই সব দেশের জন্য সমন্বিতভাবে ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ করে। বর্তমানে ২৮ সদস্যবিশিষ্ট এই ইউনিয়নে ৫১ কোটি লোকের বাস। এই এলাকায় মাথাপিছু বার্ষিক আয় প্রায় ৩২ হাজার ডলার। ইউরোপীয় ইউনিয়নে ৭টি প্রধান সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান আছে। এরা হলো যথাক্রমেÑ ১. ইউরোপীয় কাউন্সিল ২. ইউরোপীয় ইউনিয়ন কাউন্সিল ৩. ইউরোপীয় পার্লামেন্ট ৪. ইউরোপীয় কমিশন ৫. ইউরোপীয় ইউনিয়ন ন্যায়বিচারের আদালত ৬. ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং ৭. ইউরোপীয় নিরিখ প্রতিষ্ঠান। উল্লিখিত তিন ক্ষেত্রে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার বিপরীতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হিসেবে যুক্তরাজ্য যে উপযোগ পেয়ে আসছিল তা যুক্তরাজ্যের সাধারণ জনগণ সম্ভবত সঠিকভাবে মূল্যায়িত করতে সমর্থ হয়নি। এসব উপযোগ ৪ ভাগে উল্লেখ করা যায়Ñ ১. যুক্তরাজ্য তার উৎপন্ন পণ্যসামগ্রীর জন্য ২৮ দেশ সংবলিত ইউরোপীয় ইউনিয়নের একক বাজারের সুযোগ পেয়েছিল। ইউরোপীয় ইউনিয়নের আওতায় মুক্ত বাণিজ্যের সুযোগ অবারিত না থাকলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন দেশের আরোপিত আমদানি শুল্কের বাধায় যুক্তরাজ্যের উৎপাদন ও রফতানি ব্যাহত হবে; ২. ইউরোপীয় ইউনিয়ন সংহতিমূলক প্রক্রিয়ায় পরোক্ষভাবে যুক্তরাজ্যসহ অন্য সদস্য দেশসমূহের প্রতিরক্ষা নীতি, কার্যক্রম ও অবস্থানে সমন্বয় আনতে সক্ষম হয়েছিল। এই ক্ষেত্রে ন্যাটো বা উত্তর আটলান্টিক চুক্তির সংগঠনের আওতাধীন দেশসমূহ রাশিয়ার তরফ থেকে সম্ভাব্য আগ্রাসনের প্রতিকূলে সমন্বিতভাবে ও অপেক্ষাকৃত মিতব্যয়ী পর্যায়ে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিল, যুক্তরাজ্যের ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে সরে যাওয়া এই সংহতিতে দুর্বলতা সৃষ্টি করতে পারে; ৩. ইউরোপীয় ইউনিয়নের আওতায় আন্তঃদেশ অর্থপ্রবাহে যে অবাধ প্রক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছিল তার ভিত্তিতে লন্ডন, নিউইয়র্কের প্রতিযোগী হিসেবে পৃথিবীর অন্যতম প্রধান আর্থিক কেন্দ্র হিসেবে সক্রিয়ভাবে ও নিপুণতার সঙ্গে গড়ে উঠেছিল। ইউরোপীয় ইউনিয়নে যুক্তরাজ্য থাকলে ইউরোপীয় মুদ্রা ইউনিয়নে তার যোগ দেয়া এবং ইউরোপে একক মুদ্রা বাজার গড়ে তোলা সে সঙ্গে সকল সদস্য দেশের জন্য সমন্বিত একক অর্থনৈতিক নীতি ও কার্যক্রম প্রণয়ন ও অনুসরণ করা সহজতর হতো; ৪. ইউরোপীয় ইউনিয়নের গঠন ও সম্প্রসারণ যুক্তরাজ্যেকে আটলান্টিক মহাসাগরের পূর্বপারের সবচেয়ে বড় বন্দরের নিলয় এবং আমদানি ও রফতানির বাণিজ্য কেন্দ্র হিসেবে প্রসারিত করেছিল। ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্য সরে গেলে এ ক্ষেত্রে এ দেশের সম্প্রসারণ নিঃসন্দেহে ব্যাহত হবে। ব্রিক্সিটের ফলে প্রাথমিকভাবে যুক্তরাজ্যের শেয়ার বাজারে ধস নামে। একই সূত্র অনুসরণ করে ব্রিটিশ পাউন্ডের মূল্যমান ডলারের আপেক্ষিকতায় তাৎক্ষণিকভাবে বেশ নিচে নেমে আসে। ঐতিহ্যবাহী ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের গবর্নর মার্ক কারনি অবশ্য সঙ্গে সঙ্গে এবং প্রকাশ্যে বলেছেন যে, ব্রিক্সিট যুক্তরাজ্যের শেয়ার বাজারে এবং পাউন্ডের মূল্যমানে মেয়াদী বিপর্যয় আনবে না। এই সময়ে এই বিষয়ে আমি লন্ডনে, আর্থিক ও বাণিজ্য জগতের কয়েকজন দিকপালের সঙ্গে আলোচনা করেছি। আমি দেখেছি সপ্তাহখানেকের মধ্যে ব্রিক্সিট উৎসারিত শেয়ার বাজারের ধস থেমে গেছে। এমনকি প্রাথমিক ধসের পর শেয়ারের সূচকমূল্যে উর্ধমুখী প্রবণতা সংশ্লিষ্ট সকলের দৃষ্টিতে এসেছে। তেমনি এক সপ্তাহের মধ্যে ব্রিটিশ পাউন্ডের মূল্য নেমে যাওয়া অনেকাংশে বন্ধ হয়। এর মূল কারণ মূলত দুটিÑ ১. শেয়ার বাজারের বিনিয়োগকারীরা বুঝতে পারেন যে গণভোটে ব্রিক্সিট জয়ী হলেও তাৎক্ষণিকভাবে যুক্তরাজ্যের ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। ইউরোপীয় ইউনিয়ন সম্পর্কিত (লিসবন) চুক্তির ৫০ ধারা অনুযায়ী যুক্তরাজ্যের তরফ হতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে যাওয়ার প্রস্তাব আনুষ্ঠানিকভাবে পাঠানোর পর অন্য সকল সদস্যের সম্মতি পাওয়ার পরই বহির্গমন সম্ভব হবে। এই প্রক্রিয়ায়, বিশেষজ্ঞদের ধারণা ন্যূনপক্ষে দুই বছর লাগবে। ২. ব্রিক্সিটের অনুকূলে গণভোট যুক্তরাজ্যের সংসদের অনুমোদন বা আইনের বাইরে স্বয়ংক্রিয়ভাবে যুক্তরাজ্যকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরে নিয়ে যাবে না। এই প্রসঙ্গে যুক্তরাজ্যের কয়েকজন অর্থনীতিবিদ বলেছেন, আবেগতাড়িত গণভোটকে বস্তুনিষ্ঠ সিদ্ধান্তের রূপ দিতে হলে আরেকটি গণভোট অনুষ্ঠিত হওয়া প্রয়োজন। অবশ্য এই প্রস্তাব যুক্তরাজ্যের এই গণভোটকালীন প্রধানমন্ত্রী গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ দেখিয়ে ডেভিড ক্যামেরন নাকচ করে দেন। এতদসত্ত্বেও ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের বহির্গমন সহজ কিংবা তাৎক্ষণিকভাবে ঘটবে না। ১৯৭২ সালে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ‘ইউরোপীয় সম্প্রদায় আইন’ গ্রহণ করে যুক্তরাজ্যকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত করে। ব্রিক্সিট পরবর্তী ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের প্রত্যাহার বিষয়ে সমঝোতায় আইনগত ভিত্তি দেয়ার জন্য ব্রিটিশ পার্লামেন্ট কর্তৃক ১৯৭২ সালের ইউরোপীয় সম্প্রদায় আইন প্রত্যাহার করতে হবে। এই প্রত্যাহারে নতুন নির্বাচনের ভিত্তিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ সংসদ সদস্যরা যদি সমর্থন না দেন তা হলে ব্রিক্সিট অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়ার আইনী ভিত্তি থাকবে না। যুক্তরাজ্যের পরবর্তী নির্বাচন ২০২০ সালে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। ব্রিক্সিট সম্পর্কিত মতানৈক্যের আলোকে এই নির্বাচন তার আগেও অনুষ্ঠিত হতে পারে এবং এরূপ নির্বাচনে ব্রিক্সিটবিরোধীরা জয়ী হলে ব্রিক্সিট অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব না-ও হতে পারে। ডেভিড ক্যামেরন গণভোটের প্রক্রিয়ায় ব্রিক্সিটবিরোধী ছিলেন। সেই কারণে গণভোটের ফল পাওয়ার পর পরই তিনি প্রধানমন্ত্রিত্বের পদ থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দেন। তার ঘোষণার পর রক্ষণশীল দলের নেতৃত্বে অভিষিক্ত হন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থেরেসা মে। মে ঘোষণা করেন যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরে গেলেও যথাযথ বাণিজ্য ও মুদ্রানীতি অনুসরণ করে যুক্তরাজ্য তার উৎপাদনশীলতা সংরক্ষণ করতে ও বাড়াতে সক্ষম হবে। হাউস অব কমন্স ও তার বাইরে থেরেসা মের এই সময়কার বক্তৃতা শোনার সুযোগ আমার হয়েছিল। তার বক্তৃতায় তিনি যুক্তরাজ্যের ঐতিহ্যবাহী গণতন্ত্রের প্রতি পরিপূর্ণ শ্রদ্ধা দেখিয়ে ব্রিক্সিট সম্পর্কিত বিষয়ে ২য় গণভোট অনুষ্ঠিত করার সম্ভাবনা নাকচ করে দেন। অবশ্য একই সময়ে স্কটল্যান্ডের তরফ থেকে সেখানকার ভোটারদের ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে আসার বিপক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটদানের প্রেক্ষিতে বলা হয় যে, যুক্তরাজ্যের স্বার্থ সংরক্ষণ করার লক্ষ্যে তারা ইউনিয়নে থাকার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবেন। তাদের এই অবস্থানের আলোকে কেউ কেউ স্কটল্যান্ডের যুক্তরাজ্যে থাকার বিষয়ে আগে নেয়া গণভোটের (২০১৫) আলোকে বলেন, ওই ঘটনার অনুবৃত্তিক্রমে স্কটল্যান্ড যুক্তরাজ্য থেকে বেরিয়ে স্বাধীন দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার চেষ্টা করতে পারে। এ প্রসঙ্গে স্কটল্যান্ডের প্রথম মন্ত্রী নিকোলা স্টারজিওন বলেন, ব্রিক্সিটের ক্ষেত্রে অধিকতর সুচিন্তিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা জনস্বার্থক হবে। তার মতে, ব্রিক্সিট গণভোটে ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকার পক্ষে স্কটল্যান্ডের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটের আলোকে স্কটল্যান্ডকে ইউনিয়নের বাইরে নিয়ে যাওয়া গণতান্ত্রিকভাবে অগ্রহণীয়। উত্তর আয়ারল্যান্ডের নেতৃত্বের তরফ হতে অনুরূপ অবস্থান ব্যক্ত করা হয়। (চলবে) লেখক : সংসদ সদস্য, সাবেক মন্ত্রী
×