ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রিও অলিম্পিকের মশাল

আতঙ্ক দূর করে জ্বলে ওঠার অপেক্ষায় অলিম্পিক মশাল

প্রকাশিত: ০৬:৫১, ৪ আগস্ট ২০১৬

আতঙ্ক দূর করে জ্বলে ওঠার অপেক্ষায় অলিম্পিক মশাল

মশাল জ্বলে ওঠার দিন সাতেক আগে অলিম্পিক শহরে সত্যি সত্যিই নাকি ঢুকে পড়েছিল ‘আইএস’ নামের আতঙ্ক। সময়ের সঙ্গে টক্কর দিয়ে সেই আতঙ্ক বর্তমানে অনেকটাই স্তিমিত হয়ে পড়েছে। মশাল জ্বলার আগেই ‘আইএস’ ভূত প্রায় সরেই গেছে গোটা রিও ডি জেনিরোতে। ব্রাজিলের সাবেক রাজধানী, আটলান্টিক মহাসাগরের কোল ঘেঁষে অবস্থিত এই পুরনো শহরেই বসছে বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনের সবচেয়ে বড় আসর অলিম্পিক গেমস। যা ‘দ্য গেটেস্ট শো অন আর্থ’ হিসেবে বিবেচিত। প্রস্তুত রিও, ফুটবলের দেশ খ্যাত ব্রাজিলে অলিম্পিক। বিকিনি খ্যাত সুন্দরীদের কোপাকাভানা বিচের কারণে রিও ডি জেনিরোর প্রতি সারা বিশ্বের পর্যটকদের বাড়তি একটা আগ্রহ রয়েছে। আয়োজকদের বিষয়টা অজানা নয়। আর এ কারণেই অলিম্পিকের জন্য বেছে নেয়া হয়েছে রিও। নিরাপত্তায় ৬৫ হাজার সেনা সদস্যের সঙ্গে নিয়োজিত রয়েছে পুলিশসহ প্রায় দেড় লাখ ফৌজি। রিওতে পা রাখার পরই টের পাওয়া গেছে অলিম্পিক গেমস ঘিরে দিলমা রোসেফ সরকার কতটা সতর্ক। বিমান বন্দর থেকে কোপাকাভানা বিচের অতি নিকটে বাংলাদেশ থেকে আসা ক্রীড়া সাংবাদিকদের ঘাঁটি। পরশু ভোর তিনটায় সাওপাওলো হয়ে ডমেস্টিক ফ্লাইটে রিও বিমান বন্দরে নামার পরই দেখা গেল বিভিন্ন দেশ থেকে আগত ক্রীড়া দলের বহর। এরমধ্যে অন্যতম হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। সাঁতারের বরপুত্র মাইকেল ফেলপদের যেভাবে কর্ডন করে ১২ কিলোমিটার দূরে গেমস ভিলেজে নেয়ার প্রস্তুতি দেখেই টের পাওয়া যাচ্ছিল ব্রাজিল সরকার কতটা সতর্ক। আফ্রিকা, দক্ষিণ আমেরিকার কয়েকটি দেশের ক্রীড়া বহরও প্রায় একই সময়ে বিমান বন্দরে অপেক্ষমাণ গেমস ভিলেজে যাওয়ার জন্য। তাদের নিরাপত্তা অনেকটাই সাদামাটা, কড়া পুলিশী প্রহরায় থাকলেও মিডিয়াকর্মীদেরও মিশে যেতে কোন সমস্যা হয়নি। গলায় এ্যাক্রেডিটেশন ঝুলানো ব্রাজিলের স্থানীয় সাংবাদিকরা বিভিন্ন ক্রীড়াবীদ, কর্মকর্তাদের সঙ্গে ইন্টারভিউ করছিলেন বেশ আগ্রহ ভরে। স্বাচ্ছন্দ্যে উত্তরও দিয়ে যাচ্ছিলেন তারা। আমাদের সেই সুযোগটা হয়নি। কারণ আমরা তো সবেমাত্র পা রেখেছি রিওতে। গলায় মাস্তানির যে এ্যাক্রেডিটেশনটা থাকে। সেটা তখনও আমরা পাইনি। মাস্তানি বলতে এই এ্যাক্রেডিটেশনের বিরাট একটা পাওয়ার। যা দেখিয়ে, বা গলায় ঝুলিয়ে রাখলেই অন্যরকম একটা আদর, সন্মান মিলে। যাওয়া যায় যেখানে ইচ্ছে সেখানে। সাধারণ মানুষের জন্য যা কল্পনার বাইরে। গেমসের জন্য নির্ধারিত ভেন্যু ও ক্রীড়াবীদদের আবাসনস্থল গেমস ভিলেজের চারদিকে প্রায় আধা কিলোমিটার পর্যন্ত সাধারণ মানুষের জন্য কার্ফুর মতো। যানবাহন থেকে মানুষের হাঁটাচলার পথ ঘুরিয়ে দেয়া হয়েছে অন্যদিক দিয়ে। কিন্তু গলায় এ্যাক্রেডিটেশনটা থাকলে ভারি অস্ত্রে সজ্জিত সেনাবহরের গাড়ির সামনে দিয়েই প্রবেশ করা যায় সবখানে। যদিও তার অগে একটা আনুষ্ঠানিকতা সারতে হয়। আর সেটা হলো নিরাপত্তা তল্লাশি। মানিব্যাগ থেকে শুরু করে কোমরের বেল্ট, হাতঘড়ি, সেলফোন সবকিছু একটা ট্রলিতে জমা করে ছেড়ে দিতে হয় চেকিং মেশিনের বেল্টে। আর নিজেকে যেতে হয় পাশের দরজা দিয়ে, যেখানে পাওয়ার ফুল মেটাল ডিক্টেটর ইঙ্গিত দিতে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে এরপরও শরিরের কোথাও, জামা, প্যান্টের পকেটে নিষিদ্ধ কোন কিছু আছে কিনা জানিয়ে দিতে। অনেকটা হয়রানিই বলা চলে। তবুও সান্ত¡না বলতে বিশ্বের নামী-দামী ক্রীড়াবীদদের খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ। যেখানে তারা অনুশীলন করছেন। নিজেকে তৈরি করছেন পদকের লড়াইয়ের জন্য। এ্যাক্রেডিটেশন কার্ডের এটাই সার্থকতা। তবে খুব কাছে পেয়েও একটা সেলফি মারার সুযোগ পাওয়া যায়নি রিও বিমানবন্দরে মাইকেল ফেলপেসের। যুক্তরাষ্ট্রের ক্রীড়া দলটির জন্য শুধু রাজসিক অভ্যর্থনাই নয়। নিরাপত্তা এতটাই জোরদার ছিল যে, মিডিয়া কার্ড গলায় ঝুলিয়েও সীমানার বাইরে যাওয়ার সুযোগ হয়নি। টিভি আর প্রিন্ট বলে কোন কথা নেই। বিমান বন্দরের গেট থেকে বাসে ওঠা, কেবল দূর থেকেই দেখতে হলো। ফটোগ্রাফার, টিভি ক্যামেরাম্যানদের জন্য গোটা আয়োজনটা বেশ কষ্টের। ছবি তোলা থেকে ফুটেজ নেয়া সব নির্ধারিত করে দেয়া নিরাপদ দূর থেকে সারাতে হলো। অনেককে আক্ষেপ করতে শোনা গেল, অন্তত আরও একটু কাছে যাওয়ার সুযোগ পেলে ফেলপস দর্শনটা স্বার্থক হতো। কিন্তু সম্ভব হলো না বেরসিক নিরাপত্তাকর্মীদের জন্য। অনেক তারকা খেলোয়াড় যুক্তরাষ্ট্র দলে থাকলেও দেখার মতই যেন আগ্রহ নিয়ে সবাই অপেক্ষায় ছিলেন সাঁতারের বীর পুরুষ ফেলপস দর্শনে। যা হোক, তুরস্ক হয়ে দীর্ঘ বিমান পথ পাড়ি দিয়ে ঢাকা থেকে প্রায় দিন লেগে গেল রিও পৌঁছতে। বিমান থেকে নেমে পরশু ভোরে হেটেলে ওঠার পর ক্লান্ত, অবসন্ন শরীরটা ঘণ্টা কয়েককের জন্য বিছানায় এলিয়ে দিয়ে কিছুটা সতেজ করার পরই ৯টার মধ্যে বেরিয়ে পড়তে হলো প্রধান মিডিয়া সেন্টারের উদ্দেশ্যে, যেখান থেকে এ্যাক্রেডিটেশন কার্ড, সংবাদ প্রেরণের জন্য ইন্টারনেট লাইন নেয়ার ফিসহ নাম তালিকাভুক্ত করতে। প্রায় ১৬ হাজার সাংবাদিকের জন্য নির্ধারিত মিডিয়া সেন্টারে ভোর থেকেই ভিড়। লম্বা লাইন ধরে ধাপে ধাপে অনুসাঙ্গিক কাজ সম্পন্ন করতে বেজে গেল প্রায় রাত ৯টা, বাংলাদেশের ঘড়িতে সম্ভবত পরদিন ভোর ৬টা। শরীর চলছিল না। তবুও দায়িত্ব বলে কথা। বসে পড়তে হলো ল্যাপটপে। অলিম্পিক মশাল জ্বলে ওঠার সময় বলতে আর মাত্র চব্বিশ ঘণ্টা। সঙ্গত কারণে নিজের অবস্থা যাই হোক। লিখতে হবে তো কিছু একটা। এই অল্প সময়ের অভিজ্ঞতার আলোকে। যা চোখে পড়লো রিওতে পা রাখার পর।
×