ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পান্থ আফজাল

অনন্য ববিতা

প্রকাশিত: ০৬:২৯, ৪ আগস্ট ২০১৬

অনন্য ববিতা

ষাটের দশকের শেষ দিকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের চলচ্চিত্রে আগমন ঘটে যশোরের ফরিদা আখতার পপি নামের এক কিশোরীর, যার চলচ্চিত্রে নাম রাখা হয় ‘ববিতা’। ববিতার ছোটবেলা কেটেছে যশোরে। সেখানে তিনি ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুলে ইংলিশ মিডিয়ামের ছাত্রী ছিলেন। মোহসীন পরিচালিত ‘রাতের পরে দিন’ সিনেমাটি যখন মুক্তি পায় সেই সময় ‘প্রতিনিধি’ সিনেমাটিও মুক্তি পেয়েছিল। ‘রাতের পরে দিন’ সিনেমায় ববিতার নায়ক ছিলেন ওয়াসীম। সিনেমাটি মুক্তির পর সুপার ডুপার হিট ব্যবসা করে। এতে ববিতা আর প্রয়াত সাইফুদ্দিন ‘কচি ডাবের পানি দু’আনাতে খেয়ে যান’ গানটি গেয়েছিলেন। ‘রাতের পরে দিনের’ ব্যাপক সাফল্যের পর হোটেল পূর্বাণীতে ববিতা জন্মদিনের বিশেষ একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন। অনুষ্ঠানে জাফর ইকবাল ও ববিতা ইংরেজী গান গেয়েছিলেন। ববিতা বলেন, সেই সময়টার কথা আজ সত্যিই ভীষণ মনে পড়ছে। কারণ আমার মনে পড়ে আমাকে এক ভক্ত র‌্যাপিং পেপার দিয়ে মুড়িয়ে একটি ডাব উপহার দিয়েছিলেন। এটি পেয়েতো সবাই মজা পেয়েছিলাম। সেই স্মৃতি আজও চোখে ভাসে। ববিতা প্রায় তিন দশক ধরে চলচ্চিত্রে অভিনয় করছেন। তার অভিনীত সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত সত্যজিৎ রায় পরিচালিত ‘অশনি সঙ্কেত’ (১৯৭৩)। এই চলচ্চিত্রে অনঙ্গ বৌ চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি আন্তর্জাতিক শিল্পীর মর্যাদা লাভ করেন এবং ব্যাপক প্রশংসিত হন। চিত্রনায়িকা ববিতার জন্মদিন ছিল গত ২৯ জুলাই। নিজের বয়স সম্পর্কে তিনি মৃদু হেসে বললেন, বয়স কত হলো সেটা জানার আর তেমন কী দরকার! নাইবা বললাম নিজের বয়স। থাকনা অজানা আমার এই বয়সের কথা। তবে বুঝতে পারি দিনে দিনে বয়স বেশ বেড়ে গিয়েছে। ‘জন্মদিন আসা মানেই জীবন থেকে একটি বছর চলে যাওয়া। এদিন আমার আনন্দের চেয়ে মনটা খুব খারাপ হয়ে যায়। মনে হয় যেন মৃত্যুর কাছাকাছি এগিয়ে যাচ্ছি। প্রতিবার জন্মদিনে আমার এমনই অনুভব হয়। বাবা-মায়ের কথা মনে পড়ে। আমার এক জন্মদিনে বাবা আমাকে একটি ইংরেজী ডিকশনারি উপহার দিয়েছিলেন। তাতে মা পপি সম্বোধন করে বাবা অনেক কিছু লিখেছিলেন। বাবার দেয়া আমার জন্মদিনের সেই শ্রেষ্ঠ উপহারটি আমি এখনও যতœ করে রেখে দিয়েছি। আর এখন খুব মিস করি আমার ছেলে অনিককে। বিগত কয়েক বছর কানাডায় অনিকের সঙ্গে জন্মদিন উদ্যাপন করেছি। কিন্তু এই বছর আর কানাডায় যাওয়া হলো না’- নিজের জন্মদিনের অভিব্যক্তি এভাবেই প্রকাশ করলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চিত্রনায়িকা ববিতা। এবারের জন্মদিনের তেমন কোন বিশেষ আয়োজন ছিল না নায়িকা ববিতার। তিনি বলেন, সত্যি বলতে কী বেশ কয়েক বছর পর আমি ঢাকায় জন্মদিন উদ্যাপন করছি। ভেবেছিলাম এবার একটু আয়োজন করে জন্মদিন উদয্াপন করব। কিন্তু দেশের সার্বিক পরিস্থিতি ভাল নয়। নিজের মনটাও আসলে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনার জন্য ভাল নেই। সাদামাটা একটি দিন যাবে আমার। আবার এমনও দেখা যেতে পারে আমার দুই বোন সুচন্দা আর চম্পা আসতেও পারে। দিনের কোন একটি সময়ে ডিসিআইআই (ডিসট্রেস চিলড্রেন ইনফ্যান্ট ইন্টারন্যাশনাল) থেকে ছোট ছোট বাচ্চারা আসবে নাচতে, গাইতে। কারণ এর গুডউইল এ্যাম্বাসেডর হিসেবে এখনও কাজ করছি আমি। ওদের সঙ্গেই জন্মদিনের বিশেষ মুহূর্ত কেটে যাবে আমার। বিশেষ এই দিনটিতে আমি সবার কাছে দোয়া চাই যেন সবসময় ভাল থাকি, সুস্থ থাকি। আর দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য দোয়া করি, যেন সবাই যার যার অবস্থানে ভাল থাকেন।
×