ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সুনামগঞ্জে লাওরেরগড় সীমান্তে বিজিবির নামে চাঁদাবাজি

প্রকাশিত: ০৬:২৬, ৪ আগস্ট ২০১৬

সুনামগঞ্জে লাওরেরগড় সীমান্তে বিজিবির নামে চাঁদাবাজি

নিজস্ব সংবাদদাতা, সুনামগঞ্জ, ৩ আগস্ট ॥ সীমান্তের নাম লাওরেরগড়। গোমাঘাট বিএসএফ ফাঁড়ি থেকে ৩৬শ’ গজ দূরে বিজিবির লাওরেরগড় ফাঁড়ি। বিজিবি ফাঁড়ি হতে ওপারের বিএসএফ চিকেনবাড়ি ফাঁড়ির দূরত্ব ১৫শ’ গজ। মেইন পিলার আছে পাঁচটি। সাব পিলার ৩৫টি। সীমান্ত নদীর নাম যাদুকাটা। এই নদী দিয়ে প্রতিদিন ওপার থেকে চোরাই পথে আসে পাথর। এসব পাথরবাহী নৌকাকে স্থানীয় ভাষায় বলা হয় বারকি নাও। জানা যায়, প্রতিদিন মৃত্যুপুরীতে পাঠিয়ে দেয়া হয় ৩/৪ হাজার বারকি শ্রমিককে। ভোর ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত চলে এই রমরমা ব্যবসা। এই ব্যবসার মূল চাবিকাঠি থাকে লাওরেরগড় গ্রামের এক দালালসহ ১০/১২ জনের সিন্ডিকেটের হাতে। প্রতিদিন এদের দৌরাত্ম্য প্রকাশ্যে ঘটলেও হয়রানি ও মিথ্যা মামলার ভয়ে কেউ মুখ খুলতে চায় না। সরেজমিন দেখা যায়, দালালদের নির্দেশে নৌকাপ্রতি শ্রমিকদের গুনতে হয় এক শ’ টাকা। নৌকা মালিকসহ সব খরচ বাদ দিয়ে ৫/৬শ’ টাকার বেশি নিজেদের ভাগে থাকে না বলে জানায় বারকি শ্রমিকরা। তবুও এই পথে কেন নামছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে কয়েক শ্রমিক বললেন, এই সীমান্ত এলাকায় এর চেয়ে ভাল আয়ের পথ আর নেই। আবার কেউ কেউ জানান, আমাদের অভ্যাস হয়ে গেছে। এটাই আমাদের নিয়তি। প্রতিদিন সি-িকেটের দালালরা ওপারে পাড়ি দেয়ার অনুমতি দেয় হাজার থেকে দেড় হাজার নৌকা। নৌকা পিছু এক শ’ টাকা চাঁদায় প্রতিদিন ওঠে এক থেকে দেড় লাখ টাকা। আর এ টাকা দালালরা তোলে বিজিবির নামে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করে। শুধু চাঁদাই নয়, চাঁদার সঙ্গে শ্রমিকদের কপালে জোটে লাঞ্ছনা আর শারীরিক নির্যাতন। ভোর ৫টা থেকে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে রাখা হয় বারকি শ্রমিকদের। পরে তাদের ওপারে পাথর কুড়াতে যেতে হয় দালালদের নির্দেশে। সীমান্তের ওপারে প্রতিদিন হাজার/দেড় হাজার নৌকা যায় নিশ্চিত মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে। ওপারে বিএসএফের গুলি খেয়ে কখনও বারকি শ্রমিক ফিরে আসে, আবার কখনও লাশের হদিসও মেলে না। ওপারে পাহাড়ের পাদদেশে লাশ পড়ে থাকলেও পরিবারের অন্য সদস্যদের নিরাপদ রাখার স্বার্থে কেউ এ ব্যাপারে মুখ খোলে না। এক শ্রমিক বললেন, গরিবের ঘরে জন্ম আমাদের। আর এটাই আমাদের নিয়তি। জানা যায়, লাওরেরগড় সীমান্তে চাঁদাবাজি হয় বিজিবির নামে। এ কারণে সাধারণ মানুষ ও বারকি শ্রমিকরা টু শব্দটি করে না। আর এ সুযোগে দালালদের সিন্ডিকেট শ্রমিকদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে প্রতিদিন হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। দিনের শেষে সন্ধ্যায় সিন্ডিকেট বসে চাঁদাবাজির টাকা ভাগ-বাটোয়ারা করতে। এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল নাসির উদ্দিন বললেন, বিজিবির নামে কেউ চাঁদাবাজি করলে এবং অভিযোগ পেলে আমি ডিরেক্ট এ্যাকশনে যাব।
×