ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নয়া মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান রিয়াজুল হকের বর্ণাঢ্য কর্মজীবন

প্রকাশিত: ০৬:০২, ৪ আগস্ট ২০১৬

নয়া মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান রিয়াজুল হকের বর্ণাঢ্য কর্মজীবন

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য ও সাবেক সচিব কাজী রিয়াজুল হককে এই কমিশনের নতুন চেয়ারম্যান নিযুক্ত করা হয়েছে। তিনি ড. মিজানুর রহমানের স্থলাভিষিক্ত হলেন। কাজী রিয়াজুল হক মানবাধিকারের বিষয়Ñ বিশেষত শিশু, নারী, প্রবীণ ও অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে এক দশক ধরে একনিষ্ঠভাবে কাজ করছেন। তিনি ২০১০ সালের জুন মাসে রাষ্ট্রপতি কর্র্তৃক জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সার্বক্ষণিক সদস্য নিযুক্ত হন এবং ২০১৬ সালের ২২ জুন পর্যন্ত সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। কাজী রিয়াজুল হক বাংলাদেশ সরকার ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ফোরামে প্রতিনিধিত্ব করেন। তিনি জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত ইউনিভার্সেল পিরিয়ডিক রিভিউয়ে (ইউপিআর) জাতীয় মানবাধিকার কমিশন বাংলাদেশের ফোকাল পয়েন্ট ছিলেন। তার নেতৃত্বে রাষ্ট্রপক্ষ, নাগরিক সমাজ ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে পরামর্শসাপেক্ষে কমিশন এ ইউপিআর প্রতিবেদন তৈরি করে। তিনি কমিশনের পক্ষ থেকে এ ইউপিআর প্রতিবেদন জেনেভায় অনুষ্ঠিত জাতিসংঘ সম্মেলনে উপস্থাপন করেন। রিয়াজুল হক জাতিসংঘ কর্তৃক প্রবীণদের অধিকার সংক্রান্ত সনদ আইন ও নীতিমালা প্রণয়নে এশিয়া প্যাসিফিক ফোরামের ওয়ার্কিং গ্রুপের সদস্য হিসেবে কাজ করেন। তিনি জাতিসংঘের আমন্ত্রণে সংস্থার সদর দফতরে প্রবীণদের অধিকার সুরক্ষা বিষয়ে কর্মপত্র উপস্থাপন করেন। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রবীণদের অধিকার বিষয়ে আইন ও নীতিমালা প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় সক্রিয়ভাবে কাজ করেন। রিয়াজুল হক জেনেভায় জাতিসংঘ অফিসে বাংলাদেশে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী শিশুদের অধিকার বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলো গৃহীত কার্যক্রমের ওপর কর্মপত্র উপস্থাপন করেন, যা আন্তর্জাতিক পরিসরে প্রশংসিত হয়। তিনি কমনওয়েলথ ফোরাম ফর ন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস ইনস্টিটিউটের (সিএফএনএইচআরআই) আমন্ত্রণে জেনেভায় অনুষ্ঠিত মানবাধিকার কর্মীদের সুরক্ষা বিষয়ে অতিথি বক্তা হিসেবে প্রবন্ধ উপস্থাপন করে পুরস্কৃত হন। এছাড়াও তিনি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পরিসরে শিশু অধিকারসহ মানবাধিকার সম্পর্কিত অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ওপর তার সুগভীর চিন্তন তুলে ধরেন। রিয়াজুল হক জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের বিষয়ভিত্তিক কমিটির মূল উদ্যোক্তা। বিষয়ভিত্তিক কমিটি গঠন কমিশনের কাজের অগ্রাধিকার নির্ধারণ ও কমিশন সদস্যদের মধ্যে কর্মদায়িত্ব বণ্টনে প্রশংসনীয় উদ্যোগে হিসেবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পেয়েছে। তিনি মানবাধিকার কমিশনের পাঁচ বছর মেয়াদী কর্মকৌশল নির্ধারণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। কমিশনের শিশু অধিকার, বিজনেস এ্যান্ড হিউম্যান রাইটস ও অভিবাসী শ্রমিকের অধিকার বিষয়ক কমিটি সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি। শিশু আইন, বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ও প্রতিবন্ধীদের অধিকার, শিশুশ্রম বন্ধে নীতিমালা ও মানবপাচার প্রতিরোধ আইন নিয়ে একনিষ্ঠভাবে কাজ করেন। উপযুক্ত আইন ও নীতিমালা প্রণয়ন প্রক্রিয়ার সময় কমিশনের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে লিখিত সুপারিশ পাঠানো হয়। রিয়াজুল হক নাগরিক সমাজের সঙ্গে পরামর্শক্রমে এসব সুপারিশ প্রণয়ন করেন। তিনি নাগরিক সমাজ, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তা শ্রেণীর সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করছেন। কাজী রিয়াজুল হক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জনের পর ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে যোগ দেন। তিনি মানবসম্পদ উন্নয়নের ওপর পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা ডিগ্রী অর্জন করেন। অধিকন্তু, তিনি থাইল্যান্ডের এশিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এআইটি), ব্রিটেনের সিভিল সার্ভিস কলেজ, বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে অবস্থিত ইন্টারন্যাশনাল ল’ ইনস্টিটিউট থেকে ব্যবস্থাপনা, পাবলিক পলিসি ও আইন বিষয়ে পড়াশোনা করেন। রিয়াজুল হক প্রায় ৩০ বছর বাংলাদেশ সরকারের সচিব, জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করেন। একই সঙ্গে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায়ও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন। তিনি ন্যাশনাল কাউন্সিল অব ইউনেস্কো বাংলাদেশের সচিব হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। কাজী রিয়াজুল হক সরকারী উদ্যোগে দারিদ্র্য বিমোচনে বৃহৎ প্রতিষ্ঠান পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠায় ও জাতীয় পল্লী উন্নয়ন নীতিমালা প্রণয়নে মুখ্য ভূমিকা রাখেন। তিনি খুলনার জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে নোবেলজয়ী কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবৈধভাবে দখল হয়ে যাওয়া শ্বশুরবাড়ি উদ্ধার করেন। তিনি খুলনার গল্লামারিতে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপন করেন এবং খুলনা শিশু হাসপাতাল ও খুলনা ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন। সরকারী চাকরি থেকে অবসর নেয়ার পর বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের লিগ্যাল এডুকেশন এ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক পদে চার বছরের অধিক সময় দায়িত্ব পালনকালে শিশু অধিকার ও জুভেনাইল জাস্টিস, মানবপাচার ও অভিবাসন বিষয়ে অনেক প্রশিক্ষণ কর্মসূচী পরিচালনা করেন। সুপ্রীমকোর্টের বিচারপতি, সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিগণ এসব প্রশিক্ষণে রিসোর্স পার্সন হিসেবে সেশন পরিচালনা করেন। ইউনিসেফ, ইএসএআইডি, ইউএনডিপি, আইওএম এবং অস্ট্রেলিয়ার বার এ্যাসোসিয়েশনের সহায়তায় এসব কর্মসূচী বাস্তবায়িত হয়। মানবাধিকার, দারিদ্র্য বিমোচন, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও সমাজসেবামূলক কাজে কাজী রিয়াজুল হকের সক্রিয় অংশগ্রহণ ও অবদান এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কমিশনের প্রতিনিধিত্ব ও গবেষণাধর্মী উপস্থাপনার ফলে অনেক সামাজিক প্রতিষ্ঠান তাকে আজীবন সদস্যপদ প্রদান করেছে। -বিজ্ঞপ্তি
×