ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিদেশীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আজ টাস্কফোর্সের বৈঠক

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ৪ আগস্ট ২০১৬

বিদেশীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আজ টাস্কফোর্সের বৈঠক

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তরাঁ ও শোলাকিয়ায় ঈদগাহ ময়দানের অদূরে জঙ্গী হামলার প্রেক্ষিতে বিদেশী কূটনীতিক ও নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকারের বিভিন্ন বিভাগ সমন্বিতভাবে কাজ করবে। এ লক্ষ্যে সরকারের উচ্চপর্যায়ে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। বিদেশীদের নিরাপত্তায় এখন থেকে এ টাস্কফোর্স সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণ করবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র এ তথ্য জানায়। বিদেশীদের নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য আজ বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় এ টাস্কফোর্সের প্রথম বৈঠক বসছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন। বিদেশীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে এ টাস্কাফোর্সের সভাপতিও তিনি। এর সদস্য রয়েছেনÑ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্যসচিব, পররাষ্ট্র সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, সশস্ত্রবাহিনী বিভাগ, বাংলাদেশ পুলিশ ও জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধি। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টাও এ টাস্কফোর্সের বিকল্প সভাপতি হিসেবে থাকছেন। বিভিন্ন পরিস্থিতিতে কূটনীতিকদের সঙ্গে যোগাযোগ, তথ্য আদানপ্রদান, তাদের নিরাপত্তায় দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ ও সমন্বয়ের লক্ষ্যে এ টাস্কফোর্স কাজ করবে। বৃহস্পতিবারের বৈঠকে টাস্কফোর্সের সদস্যরা উপস্থিত থাকবেন। রাজধানীর গুলশান ও শোলাকিয়ায় জঙ্গী হামলার প্রেক্ষিতে বিদেশীদের নিরাপত্তায় সরকার থেকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। তাদের নিরাপত্তার লক্ষ্যে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে নিদের্শনাও রয়েছে। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী একটি টাস্কফোর্স গঠিত হয়েছে। টাস্কফোর্স এখন বিভিন্ন উদ্যোগ নেবে। এর আগে গত ৫ জুলাই সরকারের পক্ষ থেকে বিদেশীদের কাছে নিরাপত্তা বিষয়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরা হয়েছিল। সে সময় বিদেশী কূটনীতিকরা তাদের বিভিন্ন উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। তারা নিরাপত্তা নিশ্চিতে বেশ কয়েকটি সুপারিশও করেন। তাদের সেসব সুপারিশ বাস্তবায়নের বিষয়েও টাস্কফোর্স পর্যালোচনা করবে। বিদেশী কূটনীতিকরা নিরাপত্তা বাড়ানোর বিষয়ে সরকারের কাছে ইতোমধ্যেই ছয়টি সুপারিশ করেছেন। সেসব সুপারিশের মধ্যে রয়েছেÑ কূটনৈতিক জোনে নিরাপত্তা নিশ্চিত, বিদেশী ক্লাবে নিরাপত্তা প্রদান, বিদেশী প্রতিষ্ঠানের অফিসে নিরাপত্তা বৃদ্ধি, ঢাকার বাইরে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার অফিসে নিরাপত্তা নিশ্চিত, বিমানবন্দরে চেক আউট ও চেক ইনের সময় বিদেশীদের নিরাপত্তা প্রদান ও ঢাকার বাইরে থাকা সকল বিদেশীকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। সূত্র জানায়, বিদেশীদের নিরাপত্তায় সরকার থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়ার পর বেশ কয়েকটি দূতাবাসের পক্ষ থেকে আরও কয়েকটি দাবি করা হয়েছে। এর মধ্যে জাপান দূতাবাস থেকে তাদের সকল প্রতিষ্ঠানে অস্ত্রধারী নিরাপত্তা প্রহরী নিয়োগের অনুমতি চাওয়া হয়েছে। আর বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহারেরও অনুমতি চেয়েছে জাপান, ইতালি, নেদারল্যান্ডস ও কানাডা। ঢাকার বিভিন্ন দূতাবাসে নিরাপত্তায় নিয়োজিত বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা কর্মীদের অস্ত্রবহন ও বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহারের অনুমতি আগে কখনও দেয়া হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থার (ইউএসএআইডি) কর্মকর্তা জুলহাজ মান্নান নির্মমভাবে খুন হওয়ার প্রেক্ষিতে নিজ দেশের কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা জোরদারের একটি বেসরকারী নিরাপত্তা সংস্থার সদস্যদের অস্ত্র বহনের অনুরোধ জানিয়ে সরকারকে চিঠি দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। তবে মার্কিন দূতাবাসের ওই অনুরোধে সাড়া দেয়নি সরকার। এখন গুলশানে হামলার পর আবারও বেসরকারী নিরাপত্তা প্রহরীদের অস্ত্রবহন ও বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহারের অনুমতির বিষয়টি সামনে এসেছে। বিষয়টি সরকারের বিবেচনায় থাকলেও এখনও কোন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। তবে এ বিষয়ে এখনও পর্যালোচনা চলছে। আজ বৃহস্পতিবারের বৈঠকে এসব বিষয় নিয়েও আলোচনা হতে পারে। গত পহেলা জুলাই রাতে গুলশান দুই নম্বরের ৭৯ নম্বর সড়কে হলি আর্টিজান রেস্তরাঁয় হামলা চালায় একদল অস্ত্রধারী জঙ্গী। দেশী-বিদেশী অন্তত ৩৩ জন সেখানে জিম্মি হন। হামলাকারীদের ঠেকাতে গিয়ে বোমায় নিহত হন দুই পুলিশ কর্মকর্তা। পরে কমান্ডো অভিযান চালিয়ে ওই রেস্তরাঁর নিয়ন্ত্রণ নেয় সশস্ত্রবাহিনী। ১৩ জিম্মিকে জীবিত উদ্ধার করা হলেও ২০ জনের লাশ পাওয়া যায় জবাই করা অবস্থায়। সে ঘটনার পর থেকেই বিদেশীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। এ পদক্ষেপের অংশ হিসেবে বিদেশীদের নিরাপত্তায় টাস্কফোর্স গঠিত হয়েছে।
×