ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

২৬ সেবা সংস্থার প্রধানদের নিয়ে সমন্বয় সভায় মেয়র খোকন

নিরাপত্তা ও সেবা প্রদানের সঙ্গে উন্নয়ন কাজ একযোগে চলবে

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ৪ আগস্ট ২০১৬

নিরাপত্তা ও সেবা প্রদানের সঙ্গে উন্নয়ন কাজ একযোগে চলবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গুলশান, শোলাকিয়া ও কল্যাণপুরের ঘটনায় রাজধানীবাসীসহ সারা দেশের মানুষ আতঙ্কিত, বিস্মিত ও স্তম্ভিত। এ নিয়ে নাগরিকদের মাঝে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী সমন্বয়ের মাধ্যমে নাগরিকদের নিরাপত্তা ও সেবা প্রদানের পাশপাশি উন্নয়ন কর্মকা- একসঙ্গে চলবে। এজন্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) আওতাধীন সরকারী- বেসরকারী সেবা সংস্থার প্রধানকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়েছেন সংস্থাটির মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। রাজধানীতে বুধবার সকালে ডিএসসিসি কতৃক নগর ভবনের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত ২৬ টি সেবা সংস্থার প্রধানকে নিয়ে সমন্বয় সভায় মেয়র এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি দুই সপ্তাহের মধ্যে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের নিচের অবৈধ ট্রাকস্ট্যান্ড উচ্ছেদের সময় বেঁধে দেন। একই সঙ্গে রাজধানীর সরকারী-বেসরকারী সেবা সংস্থার প্রধানকে তাদের নিজস্ব ভবন রং করার নির্দেশ দেন। যেসব সেবা সংস্থা এ কাজ করবেন তারা হোল্ডিং ট্যাক্সের ১০% ছাড় পাবেন বলে ঘোষণা দেন। মেয়র বলেন, আমাদের সেবা সংস্থাগুলোর সমন্বয়ের অভাবে নাগরিকদের প্রত্যাশা যথেষ্টভাবে পূরণ করতে পারি না। তাই প্রধানমন্ত্রী সকল সেবা সংস্থাকে সমন্বয় করে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। তারই আলোকে আজকের এই সভা। সাঈদ খোকন বলেন, বাংলাদেশ জঙ্গী, সন্ত্রাসী, হত্যাকারী বা অপসংস্কৃতি লালনকারী দেশ নয়। তাই আমরা এসব দুর্ঘটনায় আশ্চর্য ও স্তম্ভিত হয়েছি। নাগরিকদের রক্ষায় তাৎক্ষণিক সরকারের নেয়া কঠোর পদক্ষেপের কারণে মানুষের মাঝে ইতোমধ্যেই অনেকটা স্বস্তি ফিরে এসেছে। এসব সন্ত্রাসীকে রুখতে আমরা নাগরিকদের নিরাপত্তা প্রদানের পাশাপাশি উন্নয়ন ও সেবা প্রদান করতে চাই। এজন্য সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। মেয়র বলেন, সম্প্রতি গুলশান, শোলাকিয়া ও কল্যাণপুরের ঘটনায় রাজধানীবাসী বিস্মিত ও ভীত হয়েছেন। তবে এরপর চারদিকে যে আলোচনার ঝড় উঠেছে তাতে বোঝা যায় আমাদের স্থিতিশীল ও মুক্তচিন্তা চেতনার সমাজ ব্যবস্থা রয়েছে। রাত ১২টা, একটার পর রাস্তায় জ্যাম দেখলেই বোঝা যায় মানুষ কর্মব্যস্ত। এ ধরনের ঘটনার সঙ্গে আমরা অভ্যস্ত নই। এই ঘটনা কিন্তু পৃথিবীর বহু দেশেই ঘটছে। তারা অভ্যস্ত। রাজধানীর সরকাীির-বেসরকারী সেবা সংস্থার প্রধানকে উদ্দেশ করে মেয়র বলেন, আপনারা আপনাদের সকল অফিস ভবন রং করুন। অনেক সরকারী-বেসরকারী সেবা সংস্থার ভবনের রং বহু পুরনো, যা অত্যন্ত দৃষ্টিকটু। এগুলোর রং করা দরকার। একই সঙ্গে মেয়র সকল সেবা সংস্থায় মাসে অন্তত একদিন পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালানোর আহ্বান জানান। একই সঙ্গে সেবা সংস্থার ভবনগুলোতে গাছ লাগানোর নির্দেশ দেন। যেসব সেবা সংস্থা এ কাজ করবে তারা হোল্ডিং ট্যাক্সের ১০% ছাড় পাবে বলে ঘোষণা দেন তিনি। ট্রাকস্ট্যান্ড প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের নিচের অবৈধ ট্রাকস্ট্যান্ড উচ্ছেদ করা হবে। ফ্লাইওভারের নিচের পিলার ঘেঁষে যত্রতত্র ট্রাক রাখা হয়। উচ্ছেদের পর আবার দখল হয়। এর স্থায়ী সমাধান করতে হবে। এছাড়া উচ্ছেদের পর সেই অবস্থা ধরে রাখার জন্য ট্রাফিক পুলিশের ডিসিকেও (দক্ষণ) দায়িত্ব দেয়ার নির্দেশ দেন মেয়র। এজন্য মেয়র ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার শেখ মোঃ মারুফ হাসানকে দিনক্ষণ ঠিক করার তাগিদ দেন। এ সময় অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, আমরা এ বিষয়ে আন্তরিক আছি। আপনারা চাইলে উচ্ছেদ করে দেব। এরপর মেয়র বলেন, কমিটিকে আমি দুই সপ্তাহ সময় দিচ্ছি। এর মধ্যে ওই ট্রাকস্ট্যান্ড উচ্ছেদ করতে হবে। জানা গেছে, ট্রাকস্ট্যান্ড উচ্ছেদে ট্রাফিক পুলিশের ডিসি দক্ষিণ, ডিএমপির (ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ) ডিসি ওয়ারী, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এবং ৪৮ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবুল কালাম অনুকে নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়। উল্লেখ্য, গত ৭ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের সকল সিটি কর্পোরেশনের উন্নয়ন কর্মকা- ত্বরান্বিত করতে সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন সরকারী-বেসরকারী সেবাদানকারী ও উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের নেতৃত্বে সমন্বয় করে সরকার গৃহীত সার্বিক কর্মকা- সম্পাদন করতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে সিটি কর্পোরেশনের ডাকা সমন্বয় সভায় সকল সংস্থার প্রধানকে বাধ্যতামূলক হাজির থাকতে বলা হয়। এরপর এটিই হচ্ছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ডাকা প্রথম সমন্বয় সভা। সমন্বয় সভায় ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী তাকসিম এ খান, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার শেখ মুহম্মদ মারুফ হাসান, বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রি জেনারেল আলী আহাম্মেদ খান, রাজউক চেয়ারম্যান এম বজলুল করিম চৌধুরী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) শহিদুল ইসলাম, বিভাগীয় কমিশনার হেলাল উদ্দিন আহম্মদ, বিটিসিএলের (দক্ষিণ) ব্যবস্থাপক (জিএম) খান আতাউর রহমান, ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নজরুল হাসান (অব), ডিএসসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মোঃ সাইদুর রহমান, বিআরটিএ পরিচালক বিজয় ভূষণ পাল, স্থাপত্য অধিদফতরের প্রধান স্থপতি কাজী গোলাম নাসির, তিতাস গ্যাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মীর মসিউর রহমানসহ ২৬ টি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা অংশ নেন।
×