ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারে অতিরিক্ত ১২০ কোটি টাকা দিচ্ছে সৌদি আরব

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ৪ আগস্ট ২০১৬

মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারে অতিরিক্ত ১২০ কোটি টাকা দিচ্ছে সৌদি আরব

আনোয়ার রোজেন ॥ মূল নকশায় না থাকায় রাজধানীর বহুল আলোচিত মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার প্রকল্পের এফডিসি থেকে সোনারগাঁও হোটেল পর্যন্ত অংশের অর্থায়ন ঝুলেছিল। অবশেষে সংশোধিত নকশার প্রকল্প অনুমোদনের ছয় মাস পর এতে অতিরিক্ত অর্থায়ন করতে রাজি হয়েছে সৌদি আরব। সৌদি ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্টের (এসএফডি) মাধ্যমে এজন্য অতিরিক্ত দেড় কোটি মার্কিন ডলার বা প্রায় ১২০ কোটি টাকা ঋণ সহায়তা দেবে দেশটি। এ অর্থ দিয়ে এফডিসি গেট থেকে কাওরানবাজারের সোনারগাঁও হোটেল পর্যন্ত নির্মাণ করা হবে নতুন ফ্লাইওভার। এর দৈর্ঘ্য হচ্ছে ৪৫০ মিটার। এ অংশটি নির্মিত হলে এফডিসি রেলক্রসিং এড়িয়ে সহজেই যান যোগাযোগ স্থাপিত হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া মূল ফ্লাইওভার ও বর্ধিত অংশের অর্থায়নকারী সংস্থা একই হওয়ায় সর্বশেষ দফায় বাড়ানো সময়ের মধ্যেই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার আশা করছেন তারা। এ বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সরকার ও সৌদি আরবের মধ্যে একটি চুক্তি সই হতে যাচ্ছে। বাংলাদেশ সফররত এসএফডির উপব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ এম আলগানাম চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। রাজধানীর শেরে বাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে চুক্তিতে সরকারের পক্ষে সই করবেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহউদ্দিন। ইআরডি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এ প্রসঙ্গে ইআরডির দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে জানান, মূল প্রকল্প বাস্তবায়নে সৌদি আরব শুরু থেকেই অর্থায়ন করছে। পরবর্তীকালে এফডিসি থেকে সোনারগাঁও হোটেল পর্যন্ত অংশটি মূল নকশায় না থাকায় তারা অর্থায়নে রাজি হচ্ছিল না। গোটা প্রকল্পের গুরুত্ব বুঝিয়ে শেষে তাদের রাজি করানো হয়েছে। এসএফডির শীর্ষ কর্মকর্তাদের একজন বর্তমানে ঢাকায়। তার উপস্থিতিতেই অতিরিক্ত অর্থায়নবিষয়ক চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হবে। সূত্র জানায়, ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার মগবাজার-মৌচাক-মালিবাগ-শান্তিনগর ও তেজগাঁওয়ের যানজট নিরসন ও অবাধ যান চলাচল নিশ্চিত করতে ২০১১ সালে প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়। সে সময় ফ্লাইওভারের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল ৭৭২ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এর মধ্যে এসএফডির একক ঋণ সহায়তার পরিমাণ মোট ব্যয়ের প্রায় অর্ধেক বা ৩৭৫ কোটি ২৫ লাখ টাকা। প্রকল্পের বাকি অর্থায়ন সরকার ও ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের। পরে চলতি বছরের জানুয়ারিতে সংশোধনীর মাধ্যমে প্রায় ৪৪৬ কোটি টাকা বাড়িয়ে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় এক হাজার ২১৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা। দেড় বছর বাড়িয়ে প্রকল্প বাস্তবায়নের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয় আগামী বছরের জুন পর্যন্ত। প্রকল্পে নতুন অংশ যুক্ত হওয়ায় অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। সংশোধিত প্রকল্পে এফডিসি থেকে সোনারগাঁও হোটেল পর্যন্ত অংশের ব্যয় ধরা হয় ৮৫ কোটি টাকা। আর এ প্রেক্ষাপটেই সৌদি আরব নতুন করে অর্থ সহায়তা দিচ্ছে। জানা গেছে, নতুন অংশ নির্মাণে সৌদি আরব অতিরিক্ত অর্থায়ন হিসেবে দিচ্ছে পাঁচ কোটি সৌদি রিয়াল (দেড় কোটি ডলার সমতুল্য)। শর্ত অনুযায়ী এ ঋণের বার্ষিক লোন চার্জ দিতে হবে দুই শতাংশ। পাঁচ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ২৫ বছরে এই ঋণ পরিশোধ করতে হবে সরকারকে। প্রকল্পটির আওতায় যেসব কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছেÑ আট দশমিক ৭০ কিলোমিটার ফ্লাইওভার নির্মাণ, তিন হাজার ৮৪৩ দশমিক ৭০ বর্গকিলোমিটার অবকাঠামো অধিগ্রহণ এবং ৪০ শতাংশ ভূমি অধিগ্রহণ। সূত্র জানায়, যানজট নিরসন ও নগরীতে অবাধ যান চলাচল নিশ্চিতে ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কোঅর্ডিনেশন বোর্ড এবং ১৯৯৯ সালের আরবান ট্রান্সপোর্ট প্রজেক্টের সমীক্ষায় নগরীর ২০টি পয়েন্টে ফ্লাইওভার/ ইন্টারসেকশন আন্ডারপাস, বাস, বে-বাস টার্মিনাল ও পার্কিং এরিয়া নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়। এসব প্রস্তাবের ভিত্তিতেই মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারটি নির্মাণ করা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে প্রকল্প পরিচালক (পিডি) নাজমুল আলম জনকণ্ঠকে বলেন, নির্মাণাধীন মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের প্রায় ৭০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এটি তিন ধাপে চালু হওয়ার কথা রয়েছে। প্রথম ধাপে গত ৩০ মার্চ ফ্লাইওভারটির সাতরাস্তা থেকে হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল পর্যন্ত দুই দশমিক ১১ কিলোমিটার অংশ যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। বাকি কাজের মধ্যে হাতিরঝিল থেকে এফডিসি অংশ ও বাংলামোটর থেকে মৌচাক অংশের কাজও শেষেরদিকে। এফডিসি থেকে সোনারগাঁও হোটেল পর্যন্ত অংশের কাজও নির্ধারিত সময়ের আগেই শেষ করা যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। উল্লেখ্য, ফ্লাইওভারটির বিভিন্ন অংশের নির্মাণ কাজ করছে ভারতের সিমপ্লেক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড ও নাভানার যৌথ উদ্যোগের প্রতিষ্ঠান ‘সিমপ্লেক্স-নাভানা জেভি’, চীনা প্রতিষ্ঠান দ্য নাম্বা ফোর মেটালার্জিক্যাল কনস্ট্রাকশন ওভারসিজ কোম্পানি (এমসিসিসি) ও তমা কনস্ট্রাকশন লিমিটেড। সব কাজ তত্ত্বাবধান করছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ।
×