ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পর্দা ওঠার অপেক্ষায় অলিম্পিক গেমস- তবু ঘুমিয়ে রিও

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ৪ আগস্ট ২০১৬

পর্দা ওঠার অপেক্ষায় অলিম্পিক গেমস- তবু ঘুমিয়ে রিও

পর্দা ওঠার অপেক্ষায় বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনের সবচেয়ে বড় আসর অলিম্পিক গেমসের। অথচ আয়োজক শহর ঘুমিয়ে। গোটা রিও ডি জেনিরো নিরুত্তাপ। সু-সজ্জিত হাইওয়েগুলোর দুই পাশে গেমসের লোগো খচিত ব্যানার দেখা গেলেও আলো ঝলমলে কোন তোরণ চোখে পড়েনি। জন সাধারণের মধ্যে গেমস নিয়ে নেই কোন আগ্রহ। যে যার মতো নিত্য কাজে ব্যস্ত। ২০১৪ বিশ্বকাপ ফুটবলের আয়োজক ছিল ব্রাজিল। মাত্র দেড় বছরের মধ্যে আয়োজন করতে যাচ্ছে তারা আরেকটি বড় আসর। ২০৭টি দেশ এবার অংশ নিচ্ছে ৩০৬ পদকের লড়াইয়ে। বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা না হলেও ‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ খ্যাত অলিম্পিকে থাকছে লাল সবুজের বাংলাদেশ। রিও অলিম্পিকে স্বাধীনতা পরবর্তী এবারই প্রথম সবচেয়ে বেশি সাত ক্রীড়াবীদ অংশ নিচ্ছে বাংলদেশ থেকে। মোট প্রতিযোগীর সংখ্যা মঙ্গলবার পর্যন্ত ছিল ১০ হাজার দুই শত তিরানব্বই। এটা বাড়ার আর সম্ভাবনা নেই। আটলান্টিক মহাসাগরের বিশ্বখ্যাত কোপাকাভানা বিচ ঘেঁষে তৈরি করা হয়েছে ক্রীড়বিদদের সুবিশাল আবাসন ভিলেজ। ১৬ হাজার প্রিন্ট মিডিয়া সাংবাদিকের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে অত্যাধুনিক মিডিয়া সেন্টার। ইলেকট্রনিক্স মিডিয়া ও ফটোসাংবাদিদের জন্য রয়েছে একই ব্যবস্থা। খেলার ধরন বুঝে ছোট বড় ১৬ নতুন ভেন্যু সবার নজর কাড়তে বাধ্য। এক কথায় গেমস আয়োজনে অর্থ খরচে কোন কার্পণ্য করেনি ব্রাজিল। আইএস হুমকিসহ নানা প্রতিকূলতা পাড়ি দিয়ে সফল আয়োজনে কোন ঘটাতি আছে বলে মনে হয় না। এমনকি ক্রীড়াবীদ, দর্শকের নিরাপত্তা নিয়েও সজাগ দেশটি। সবকিছুই ঠিকঠাক। এত বড় মঞ্চের এটি আয়োজনে যে ধরনের উদ্যোগ নেয়া দরকার সবই নেয়া হয়েছে। কিন্তু একটা জায়গায় মার খেয়ে গেল ব্রাজিল। আর সেটা নিজ দেশের জনগণের মনে দাগ কাটাতে পরেনি। অলিম্পিক উন্মদনা সৃষ্টির ক্ষেত্রে ব্যর্থ। কোপাকাভানা বিচে বিশ্বকাপ ফুটবলের সময় গোটা দুনিয়ার পর্যটক আর স্থানীয়দের বিশাল মিলন মেলা সৃষ্টি হয়েছিল। এই নয়নাবিরাম জায়গাটিতে রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা ঢাকার ট্রাফিক জ্যামের মতো ভিড় দেখা গেছে। মানুষের এই ভিড় এবার একেবারেই নেই। অলিম্পিকের মূল আকর্ষণ কিন্তু জমকালো উদ্বোধনী অনুষ্ঠানও। পাশাপাশি ‘ক্লোজিং’। আর খেলা তো রয়েছেই। কিন্তু গেমসের পর্দা উন্মোচন হতে বাকি চব্বিশ ঘণ্টা। অথচ বাড়তি পর্যটকের খবর নেই। এ বিষয়ে কথা হয় ব্রাজিলের একটি দৈনিকের ক্রীড়া সাংবাদিক রোজারিওর সঙ্গে। তার মতে সবচেয়ে বেশি ডুবিয়েছে ‘জিকা ভাইরাস’ এর অপপ্রচার। এটা নাকি ব্রিটিশ আর মার্কিনীদের বানোয়াট সংবাদ। তবে একেবারে যে দেখা দেয়নি তাও। কিন্তু এটা নিয়ন্ত্রণর মধ্যে রয়েছে। ব্রাজিলের ক্ষতি করার জন্যই এই আপপ্রচার বলে মনে করেন তিনি। যদি এটা মহামারি আকারে দেখা দিত তাহলে পুরো দল নিয়ে অলিম্পিকে আসত না যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন। এদিকে আগেই জানা ছিল বিষয়টা। তারপরও রোজারিও নিশ্চিত করলেন, অলিম্পিক মশাল পেলের হাতেই শোভা পাবে। ফুটবলের জীবন্ত কিংবদন্তিকে এই সম্মান জানাতে ভুল করবে না ব্রাজিল। যদিও বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক রোনাল্ডোর নামও রয়েছে বলে অন্য আরেক সূত্রে জানা গেছে। তবে এই দু গ্রেট মিলে মশাল হাতে দৌড়ালেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। রিও বিখ্যাত সমুদ্র সৈকত, রাস্তায়, ফুটপাথে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, পর্তুগালের জার্সি বিক্রির হিড়িক নেই। যদিও অলিম্পিকে ফুটবলও একটি গুরুত্বপূর্ণ খেলা। তবে ব্রাজিলের মানুষকে শুধু দোষ দিয়ে লাভ নেই। আয়োজকদের প্রত্যাশা ছিল কমপক্ষে পাঁচ লাখ বিদেশী পর্যটক হাজির থাকবে গেমস উপলেক্ষে। পাঁচ লাখ দূরের কথা। ৫০ হাজার পর্যটকও টানতে পারেনি রিও অলিম্পিক। জলন্ত প্রমাণ বিকিনি খ্যাত সুন্দরীদের কোপকভানা বিচের নিষ্প্রভ চেহারা। আয়োজনে বড় দিক থেকেই শুধু নয়, পাশাপাশি মর্যদার মঞ্চটাও সবচেয়ে উঁচু। এবারের ৩১তম আসরের আয়োজক ব্রাজিল। যারা গোটা বিশ্ব ফুটবল পাগল জাতি হিসেবে পরিচিত। আর ফুটবলের দেশেই এবার প্রথমবারের মতো বসতে যাচ্ছে অলিম্পিক আসর। শুধু ব্রাজিল নয়, দক্ষিণ আমেরিকায় এটিই প্রথম অলিম্পিক। ফলে গোটা মহাদেশটির ইজ্জত রক্ষার দায়িত্ব বর্তেছে ব্রাজিলের ওপর, যা তাদের প্রমাণ বা রক্ষা করতে হবে সফল আয়োজনের মধ্যে দিয়ে। ব্রাজিল কি পারবে সফল হতে। নাকি অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা না আবার কলঙ্কের দাগ এঁকে দেয়? তবে সার্বিক পরিস্থিতি প্রমাণ করছে আধুনিক অলিম্পিকের ইতিহাসে এবারেরও নাকি সবচেয়ে বাজে হয়ে ওঠতে পরে। জিকা আতঙ্কসহ নানা কারণে নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছেন বিশ্বের অনেক নামী-দামী ক্রীড়াবিদ। ডোপ কেলেঙ্কারিতে বিপর্যন্ত শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে থাকা রাশিয়া। এতে দেশটির অনেক বড় বড় তারকা থাকছেন না গেমসে। এসব দিক বিবেচনা করে অনেকেই বলা বলি করছেন রিও নাকি হয়ে ওঠতে পারে পানসে অলিম্পিক শহরে।
×