ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

হাজারীবাগে আল আনসারের সমন্বয়কসহ গ্রেফতার ৫

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ৪ আগস্ট ২০১৬

হাজারীবাগে আল আনসারের সমন্বয়কসহ গ্রেফতার ৫

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর হাজারীবাগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে দুটি জঙ্গী আস্তানার সন্ধান মিলেছে। এরমধ্যে একটি আস্তানা থেকে আল আনসার নামের একটি নতুন জঙ্গী সংগঠনের সমন্বয়কসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। আর পুলিশের অভিযানে সন্ধান পাওয়া জঙ্গী আস্তানা থেকে জিহাদী বইপত্রসহ ১৪ শিবির নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়েছে। সব মিলিয়ে দুটি পৃথক অভিযানে গ্রেফতার হয়েছে ১৯ জন। গ্রেফতারকৃতরা জঙ্গী কার্যক্রমে জড়িত বলে প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। মঙ্গলবার রাতভর অভিযান চালিয়ে আল আনসার নামের নতুন জঙ্গী সংগঠনের প্রধান সমন্বয়কারী হাফেজ মাওলানা মোহাম্মদ রাশিদুল আলম (৩৮), তার সহযোগী আবু বক্কর মনি (৩২), আব্দুল্লাহ আল মামুন মিয়া (২৬), রাইসুল ইসলাম রাসেল (২৫) ও আব্দুল মালেককে (৩৫) গ্রেফতার করা হয়। র‌্যাব-২ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ জনকণ্ঠকে জানান, গ্রেফতারকৃতরা মূলত নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন হরকত-উল-জিহাদের (হুজি) আদলে গঠিত। এর নেপথ্যেও রয়েছে হুজি সদস্য ও তাদের মদদদাতারা। গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে জঙ্গী তৎপরতার সব ধরনের আলামত পাওয়া গেছে। এমনকি সংগঠনের প্রতিটি সদস্যের প্রতিদিনের কাজের ফিরিস্তিও পাওয়া গেছে। কে কোন কাজ করবে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত লেখা সংবলিত দলিলাদি উদ্ধার হয়েছে। সংগঠনটি সাত থেকে আট মাস আগ থেকে সংক্রিয়। প্রধান সমন্বয়কারী নিজেই সদস্যদের প্রশিক্ষণ দিত। তার শারীরিকসহ নানা ধরনের প্রশিক্ষণ দেয়ার অভিজ্ঞতাও আছে। বিভিন্ন বিষয় অনুবাদ করে সদস্যদের বয়ান করাও ছিল সমন্বয়কারীর অন্যতম কাজ। সংগঠনটির ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্পর্কে অনেক তথ্য পাওয়া গেছে। সে সম্পর্কে অনুসন্ধান অব্যাহত আছে। নতুন জঙ্গী সংগঠনটি আল কায়েদার অনুসারী। সংগঠনের সদস্যদের আল কায়েদার সদস্যদের আদলে গড়ে তোলার কাজ চলছিল। এদিকে মঙ্গলবার রাতেই হাজারীবাগের মধুবাগের ১৮৯ নম্বর বাড়ির নিচতলায় একটি জঙ্গী আস্তানার সন্ধান পায় পুলিশ। অভিযানে আস্তানা থেকে বিপুল পরিমাণ জিহাদী বই উদ্ধার হয়। সেখান থেকে গ্রেফতার হয় ছাত্রশিবিরের ১৪ নেতাকর্মী। পুলিশ জানায়, অভিযানকালে গ্রেফতারকৃতরা সেখানে গোপন বৈঠক করছিল। সেখান থেকে বিপুল সংখ্যক উগ্র মতবাদের বই ও সরকারবিরোধী লিফলেট উদ্ধার হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে সাইফুল ইসলাম (৩২) দলটির পরিচালক বলে দাবি করেছে। সাইফুল ছাত্র শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তবে সে সংগঠনটির কোন পদে আছে তা জানায়নি। মাত্র তিন মাস আগে ২২ হাজার টাকা ভাড়ায় ওই বাসায় উঠেছিল গ্রেফতারকৃতরা। তারা দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ঢাকায় এসে সেখানে জড়ো হয়েছিল। এর আগে গত জুলাইয়ে রাজধানীর খিলগাঁওয়ের এ ব্লকের একটি বাড়িতে জঙ্গী আস্তানার সন্ধান পায় পুলিশ। সেখান থেকে গ্রেফতার হয় খিলগাঁও থানা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মোঃ মোতাহার হোসেন (২৭) ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাকসহ (২৪) ১৯ জন। গ্রেফতারকৃতদের সম্পর্কে কোন তথ্য না রেখেই আশ্রয় দেয়ার দায়ে গ্রেফতার হয় জামায়াতের মতাদর্শে বিশ্বাসী বাড়িওয়ালা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক রিয়াদুল করিম (৬৫)। তাদের কাছ থেকে ৭টি বোমা, ৪টি চাপাতি, বিপুল পরিমাণ জিহাদী বই ও কম্পিউটার জব্দ করা হয়। কম্পিউটারটিতে জঙ্গী কর্মকা-ের নানা আলামত ছিল। গত মাসে টঙ্গীর চেরাগআলী এলাকার আউচপাড়া মুক্তার বাড়ি সড়কের ৪৪ নম্বর ৬তলা জেসমিন আক্তারের বাড়িতে জঙ্গী আস্তানার সন্ধান পায় র‌্যাব। আস্তানা থেকে উদ্ধার হয় ১টি অত্যাধুনিক বিদেশী পিস্তল, ১৩৩ রাউন্ড তাজা বুলেট, ৩টি কমান্ডো নাইফ (জেএমবির ভাষায় নান চাকু), ৩টি ছুরি, ২টি চাইনিজ কুড়াল, ১টি চাপাতি, ৭টি হ্যান্ডগ্রেনেড, ১৩টি ইলেক্ট্রিক ডেটোনেটর, ৭টি পাওয়ার জেল, ২ কেজি পটাশিয়াম, আধা কেজি সোডা, ১টি ডামি টার্গেট, বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক ও বিস্ফোরক তৈরির সরঞ্জাম এবং জিহাদী বইপত্র। গ্রেফতার হয় নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন জেএমবির এক সমন্বয়কারীসহ চারজন। প্রসঙ্গত, গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তরাঁ ও বেকারিতে হামলা করে ১৭ জন বিদেশী ও দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ ২২ জনকে হত্যা এবং কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় ঈদ জামাতে হামলার চেষ্টাকালে জঙ্গী হামলায় দুই পুলিশ ও এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়। এর আগে জঙ্গী হামলায় ব্লগার, লেখক, প্রকাশক ও প্রগতিশীলসহ নানা শ্রেণী পেশার মানুষ নিহত হন। এরই প্রেক্ষিতে সারাদেশে সাঁড়াশি অভিযান চলছে। অভিযানে জঙ্গী আস্তানার সন্ধানের পাশাপাশি নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠনের সদস্যদের গ্রেফতারের ওরপই বেশি প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশে জামা’আতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি), জাগ্রত মুসলিম জনতা অব বাংলাদেশ (জেএমজেবি), হরকত-উল-জিহাদ (হুজি), শাহাদাৎ-ই-আল-হিকমা, হিযবুত তাহরীর ও আনসারুল্লাহ বাংলা টিম নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন হিসেবে ঘোষিত।
×