ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

হজ ক্যাম্প উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী

যারা নিরীহ মানুষ হত্যা করছে, তারা ইসলামকে হেয় করছে

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ৪ আগস্ট ২০১৬

যারা নিরীহ মানুষ হত্যা করছে, তারা ইসলামকে হেয় করছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদের কবল থেকে দেশকে রক্ষা করার দোয়া চেয়ে হজযাত্রীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিপথগামী তরুণরা ইসলামের নামে ঠাণ্ডা মাথায় খুন করে পৃথিবীতে বাস করা কঠিন করে তুলছে। দুঃখ লাগে, কষ্ট লাগে যখন দেখি কিছু বিপথগামী তরুণ ঠাণ্ডা মাথায় নিরীহ মানুষ হত্যা করে। যারা নিরীহ মানুষ হত্যা করছে তারা ইসলামকে অন্যের কাছে হেয় করছে। অন্যের কাছে ইসলাম সম্পর্কে ভীতি সৃষ্টি করছে। রাজধানীর আশকোনায় বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে হজ ক্যাম্প উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এসব মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় তিনি হজ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশকে এশিয়ার রোল মডেল হিসেবে উল্লেখ করে হাজীদের কাছে দোয়া চেয়ে বলেছেন, হাজী সাহেবরা ভালমতো হজ পালন করে আসেন- এটা চাই। সুস্থ থাকেন, ভাল থাকেন- এটাই কামনা করি। দেশের জন্য দোয়া করবেন, দেশের মানুষের জন্য দোয়া করবেন। জঙ্গীবাদ-সন্ত্রাসবাদের হাত থেকে এ দেশের মানুষ যেন মুক্তি পায়। সেজন্য দোয়া চাই। ব্যক্তিগতভাবে আপনাদের কাছে দোয়া চাই। সহি-সালামতে আপনজনের কাছে ফিরে আসুন। তিনি প্রশ্ন রাখেন, ইসলাম ধর্মটাকেই তারা কার স্বার্থে হেয়প্রতিপন্ন করছে। যারা খুন-খারাবি করে, মানুষ হত্যা করে ধর্মকে হেয় করছে তাদের বিরুদ্ধে জাতিকে সোচ্চার হতে হবে। ঘরে-বাইরে, কর্মস্থলে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। জঙ্গীদের ঠাঁই বাংলাদেশে হবে না। শেখ হাসিনা বলেন, তারা মানুষ খুন করে কী অর্জন করছে, সেটা আমি জানি না। কিন্তু আমাদের ধর্ম আমরা যারা পালন করি, তাদের জন্য এই পৃথিবীতে বসবাস করাটা কঠিন করে দিচ্ছে। তারা আমাদের ইসলাম ধর্ম; যে ধর্ম সব থেকে শান্তির বাণী বলেছে, সহনশীলতার কথা বলেছে, সকল ধর্মের অধিকারের কথা বলে গেছে- সেই ধর্মটাকেই আজকে এভাবে হেয়প্রতিপন্ন করে তারা কার স্বার্থ রক্ষা করছে, আর কী অর্জন করছে- সেটাই আমার প্রশ্ন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার দুঃখ লাগে, খুব কষ্ট লাগে, যখন আমি দেখি কিছু বিপথগামী ঠা-া মাথায় নিরীহ মানুষ হত্যা করে। আমি বলব, যারা নিরীহ মানুষকে হত্যা করছে, তারা ইসলাম ধর্মের কোন ভাল কাজ করছে না বরং ইসলাম ধর্মটাকে অন্যের কাছে হেয় করে দিচ্ছে। অন্যদের কাছে ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে একটা ভীতি সৃষ্টি করে দিচ্ছে। শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশে জঙ্গী-সন্ত্রাসের কোন ঠাঁই হবে নাÑ মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী সবাইকে এর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ারও আহ্বান জানান। যারা বিপথে গিয়ে খুন-খারাবি করে, মানুষ হত্যা করে আমাদের পবিত্র ধর্মকে হেয়প্রতিপন্ন করছে তাদের বিরুদ্ধে সমগ্র জাতিকে সোচ্চার হতে হবে। বাবা-মা-অভিভাবক-শিক্ষক থেকে শুরু করে সবাইকে যার যার কর্মস্থলে এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে যে, বিপথে যেন আমাদের ছেলে-পেলেরা না যেতে পারে। শেখ হাসিনা এ সময় তার সরকার আমলে হজ ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন ও ধর্ম পালনে মানুষের সুবিধায় নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে বলেন, আমরা এভাবে প্রতিটি কাজ করে যাচ্ছি যাতে আমাদের এ পবিত্র ধর্মটা যেন মানুষ যথাযথভাবে পালন করতে পারে। হজযাত্রী পরিবহনের সুব্যবস্থা, তাদের আবাসনের সুন্দর ব্যবস্থা, জেদ্দার পাশাপাশি মক্কায় হজ অফিস করা, জেদ্দা বিমানবন্দরে টার্মিনাল প্লাজা ভাড়া করে সেখানে চিকিৎসা, তথ্য-প্রযুক্তি সেবার ব্যবস্থা করাসহ নানান পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে তিনি বলেছেন, অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা যাতে না হয় সেদিকে আমরা লক্ষ্য রাখছি। বর্তমান সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে হজে যাওয়া মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। যেখানে ২০০৬ সালে হজযাত্রী ছিল ৪৭ হাজার ৯৮৩ জন, সেখানে এ বছর হজযাত্রী ১ লাখ ১ হাজার ৭৫৮ জন। বেশিসংখ্যক মানুষকে হজের সুযোগ দেয়ায় সৌদি সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা বলেন, দক্ষিণ এশিয়া বা এশিয়ার মধ্যে হজ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ সবসময় সব থেকে ভাল অবস্থানে আছে। সৌদি আরবের হজ মন্ত্রণালয়ও ব্যাপক প্রশংসা করছে। বাংলাদেশকে ২০১৪ সালে হজ ব্যবস্থাপনায় শ্রেষ্ঠ হিসেবে স্বীকৃতিও দিয়েছিল। নতুন করে কেউ যেন হজে যাওয়ার নাম করে অবৈধভাবে সৌদি আরবে থেকে যেতে না পারে- সে বিষয়ে সরকার সতর্ক থাকার কথা স্মরণ করে দিয়ে তিনি বলেন, কেউ যেন হজ বা ওমরাহর নাম করে গিয়ে অবৈধভাবে সৌদি আরবে থেকে না যায়, সে ব্যাপারেও আমরা যথেষ্ট সতর্ক। এ ব্যাপারে সৌদি সরকারের আপত্তি ছিল। সেদিকে আমরা যথেষ্ট দৃষ্টি দিয়েছি। এ বছর যারা নিবন্ধন করেও হজে যেতে পারছেন না, আগামী বছর তাদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে। এজন্য প্রয়োজনীয় হজ নীতিমালা অনুসরণ করা হবে।
×