ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মনুষ্যত্বের অধঃপতন

প্রকাশিত: ০৪:৪৩, ৪ আগস্ট ২০১৬

মনুষ্যত্বের অধঃপতন

প্রতিটি মানুষই শিশু হয়ে জন্মায়। সেই শিশু একদিন বড় হয়। ভাল মন্দ বিচার করার ক্ষমতা সৃষ্টিকর্তা প্রত্যেক মানুষকে দিয়েছেন। তাই তো আমরা মানুষের মনুষ্যত্বের কথা বলি। যখন দেখি কিছু মানুষের মধ্যে মনুষ্যত্ববোধ হারিয়ে যায় তখন সেই মানুষগুলো অন্যায়, অপরাধসহ নানা অপকর্ম করে বেড়ায়। আর সেই রকম একটি অপরাধ হচ্ছে নারী নির্যাতন। পৃথিবীতে এমন কোন দেশ নেই যেখানে নারীরা কম-বেশি নির্যাতিত হচ্ছে না। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে তাকালে দেখা নারীরা নানাভাবে নির্যাতিত হচ্ছে। কি উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবার- সব পরিবারের নারী নানাভাবে বঞ্চনার শিকার। ঘরের বাইরে নারীরা নিগ্রহের শিকার। কিন্তু কেন? কিছু মানুষ নারীকে মানুষ হিসেবে মনে করে না। শিক্ষিত পরিবারে নারীরা কি নির্যাতিত হচ্ছে না? স্বামীর পরকীয়ার প্রতিবাদ করতে গিয়ে স্ত্রী নির্যাতনের শিকার হচ্ছে, যৌতুকের জন্য হাজার হাজার নারী নির্যাতনের শিকার হচ্ছে, শুধু স্বামী নয়, শ্বশুর-শাশুড়িসহ পরিবারের অন্যদের দ্বারা নারীরা নির্যাতিত হচ্ছে। কত নারীকে জীবন দিতে হয়েছে। শিক্ষিত লোক যখন নারী নির্যাতন করে তাহলে সেই শিক্ষার কী মূল্য আছে? ঘরের বাইরে, রাস্তা-ঘাটে, গাড়িতে নারীর লাঞ্ছনার ঘটনা আমরা পত্র-পত্রিকায় পড়েছি। ধর্ষণের পরে হত্যা এই রকম বর্বরতাও সমাজের বিবেককে দংশন করছে। স্ত্রী যখন বান্ধবী, নারী যখন বন্ধু, নারী যখন মানুষ এই চিন্তাধারা, এই দর্শন যখন একজন পুরুষকে প্রভাবিত করে তখন সেই পুরুষ নারী নির্যাতন করতে পারে না। নারীরা মায়ের জাত, সেই মায়ের জাতের গর্ভে শিশুর জন্ম হয়। সেই শিশু একদিন পৃথিবীর মুখ দেখে। কিন্তু সেই একই নির্যাতনের শিকার শিশুরা। সম্পত্তিগত বিরোধ, পারিবারিক কলহ, লোভলালসা, হিংসা-প্রতিহিংসা নানা কারণে শিশুরা নির্যাতিত হচ্ছে। যেখানে শিশুশ্রম আছে সেখানেও নির্যাতন হচ্ছে। নির্মম ও বর্বর কায়দায় শিশুদের হত্যা করা হচ্ছে। অনেক শিশুহত্যাকারী ধরা পড়েছে, শাস্তি পেয়েছে। তারপরও শিশুহত্যা হচ্ছে। আমি তো মনে করি মনুষ্যত্বের অধঃপতনে শিশুহত্যা বাড়ছে। যার মধ্যে মনুষ্যত্ব নেই সে শিশুহত্যার মতো অপরাধ করবে। কিন্তু এই অবস্থা আমরা চাই না। আমরা চাই শিশুদের একটি নিরাপদ পৃথিবী। নারীকে বুঝার ক্ষমতা, নারীকে মানুষ হিসেবে মনে করা মনুষ্যত্বের এই মূল চেতনাটি সবার মাঝে জাগ্রত করে তুলতে হবে। যে মানুষটি শিশু নির্যাতন করছে তাকে ভাবতে হবে- আমি যদি একজন শিশুকে হত্যা করতে উদ্যত হয় আমি যেন আমার পরিবারের শিশুদের কথা একবার চিন্তা করি। মনুষ্যত্ব হচ্ছে একজন মানুষের মধ্যে থাকা ভাল-মন্দ বিচার করার একটি আয়না। তাই প্রতিটি মানুষকে তার মনুষ্যত্ব ও বিবেককে যেন প্রশ্ন করে- আমি মানুষ, পশু নই। মনে রাখতে হবে সৃষ্টিকর্তা একদিন সবকিছুর বিচার করবেন। মানুষ যেন সেই দিনের কথা মনে রাখে। দক্ষিণ মধ্যম হালিশহর, চট্টগ্রাম থেকে
×