ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

শিশু নির্যাতন বন্ধে...

প্রকাশিত: ০৪:৪২, ৪ আগস্ট ২০১৬

শিশু নির্যাতন বন্ধে...

শিশুরা নিষ্পাপ, ফুলের মতো পবিত্র। তাদের প্রতি ভালবাসা ও স্নেহ মমতা মানুষের স্বভাবজাত প্রকৃতি আর তাদের প্রতি নিষ্ঠুরতা ও পাশবিক আচরণ বিকৃত মানসিকতার পরিচায়ক। আজ যারা শিশু তারাই আগামী দিনে দেশ ও জাতির কর্ণধার। শিশুর সুস্থ ও স্বাভাবিক বিকাশের ওপর একটি জাতির ভবিষ্যত সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি নির্ভরশীল। অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, এই শিশুদের অনেকের ওপরই এখন চলছে অমানবিক নির্যাতন। যা কেবল জাহিলিয়াতের যুগকে মনে করিয়ে দেয়। কেননা এটি আধুনিক সভ্য জগতের সঙ্গে পুরোপুরি বেমানান। আজ একের পর এক নির্মমভাবে খুন হচ্ছে অবুঝ শিশু। স্কুল-কলেজ, রাস্তাঘাট কিংবা খেলার মাঠ থেকে হঠাৎ উধাও! পরবর্তীকালে মোবাইল ফোনে স্বজনদের কাছে মোটা অঙ্কের মুক্তিপণ দাবি। অতঃপর রাস্তাঘাটে ক্ষত-বিক্ষত লাশ উদ্ধার। অনেক শিশুকে খুন করার পর টুকরো টুকরো করে লাশ বস্তাবন্দী করে নদী, খাল কিংবা ডোবায় ফেলে দিচ্ছে অপহরণকারীরা। শিশু হত্যার ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় চরম আতঙ্কে অভিভাবকরা। ঘরে বাইরে কোথাও আর নিরাপদ থাকছে না কোমলমতি শিশুরা। মুক্তিপণ আদায়ের জন্য কোমলমতি শিশুদের টার্গেট করছে অপরাধীরা। এমনকি মুক্তিপণ দিয়েও বাঁচানো যাচ্ছে না শিশুদের। অতি সম্প্রতি কেরানীগঞ্জে মুক্তিপণ দুই লাখ টাকা দেয়ার পরও হত্যা করা হয় ১১ বছরের শিশু আবদুল্লাহকে। অপহরণের পাঁচদিন পর প্রতিবেশীর তিনতলা বাসার ছাদে একটি প্লাস্টিকের ড্রাম থেকে তার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। এভাবে আবদুল্লার মতো কোমলমতি শিশুদের অপহরণ, বলাৎকার ও হত্যার ঘটনা বেড়েই চলছে। বেসরকারী পর্যায়ে শিশুদের নিয়ে কাজ করা ‘শিশু অধিকার ফোরাম’ (বিএসএএফ) তথ্য বলছে- ২০১৪ সালে সারাদেশে ২০৯ জন শিশু অপহরণের শিকার হয়। আর ২০১৫ সালে এ সংখ্যা দাঁড়ায় ২৪৩ জনে। ২০১৫ সালে অপহরণের পর হত্যা করা হয় ৪০ জন শিশুকে। এলিট ফোর্স র‌্যাবের পরিসংখ্যান মতে, ২০১৫ সালে মোট ১৫৪ জন অপহৃত ব্যক্তিকে উদ্ধার করা হয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শিশু রয়েছে। একই সময়ের মধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে ৩০১ জন অপহরণকারীকে। বিশ্বজুড়ে শিশু অধিকার রক্ষায় জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদ প্রণয়ন করে। এ সনদের সমর্থনকারী বিশ্বের ২২টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশও অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার ১৯৯৪ সালে জাতীয় শিশুনীতি প্রণয়ন করে। কিন্তু তিক্ত বাস্তবতা হলো, এসব নীতি বা সনদের কোনটাই আজ শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারছে না। আজ যে বা যারা আমাদের নিষ্পাপ কোমলমতি শিশুদের জীবন প্রদীপ অকালেই নিভিয়ে দিতে চায় অথবা দিচ্ছেÑ আমরা কি পারি না কঠোর হাতে তাদের দমন করতে? আমাদের সরকার কি পারে না, তাদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর আইন পাস করতে? কিংবা বিদ্যমান আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন ঘটাতে? আসুন, আমরা সবাই মিলে নিষ্পাপ কোমলমতি শিশুদের নির্যাতনমুক্ত ও আনন্দঘন জীবন উপহার দিতে সচেষ্ট হই। তাদের জন্য নিশ্চিত করি শঙ্কাহীন শৈশব। ইসলামপুর (মেজরটিলা), সিলেট থেকে
×