ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বিউটি পারভীন

রিও অলিম্পিকে ঝড় তুলবেন শিপার্স-ফ্র্যাঙ্কলিন

প্রকাশিত: ০৬:০১, ৩ আগস্ট ২০১৬

রিও অলিম্পিকে ঝড় তুলবেন শিপার্স-ফ্র্যাঙ্কলিন

অলিম্পিক মহাযজ্ঞ শুরুর ঘণ্টাধ্বনি শোনা যাচ্ছে। অনেক আগে থেকেই অলিম্পিক ভিলেজে বিশ্বের সবগুলো দেশ থেকে হাজার হাজার ক্রীড়াবিদ এসে আবাস গড়েছেন। ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরো শহর পুরোপুরি প্রস্তুত এখন লড়াই দেখার জন্য। এ্যাথলেটিক ট্র্যাক প্রস্তুত বিশ্বসেরা তারকাদের দৌড়টা শুরুর। আর নীলজলের পুলগুলো প্রস্তুত সাঁতারুদের বক্ষে গ্রহণ করতে। জলে আর ডাঙ্গায় গতির ঝড় তুলবেন কারা? কে হবেন বিজয়ী- দেখতে উন্মুখ হয়ে আছে বিশ্ব। এ দুটি ইভেন্ট নিশ্চিতভাবে অলিম্পিকের বাড়তি আকর্ষণ এবং উত্তেজনার। তবে বিশেষভাবে কিছু তারকার দিকে সবার দৃষ্টি থাকবে কেন্দ্রীভূত। এর মধ্যে মহিলাদের স্প্রিন্টে হল্যান্ডের ২৪ বছর বয়সী স্প্রিন্টার ড্যাফনে শিপার্স এবং সাঁতারে যুক্তরাষ্ট্রের তরুণী ২১ বছর বয়সী মিসি ফ্রাঙ্কলিন তুলতে পারেন ঝড়। দুই মাধ্যমের এ দুই মহিলা ক্রীড়াবিদের দিকে নজর থাকবে বিশ্ববাসীর। লন্ডন অলিম্পিকেই অন্যভাবে দেখা গিয়েছিল শিপার্সকে। মূলত হেপ্টাথলন এ্যাথলেট হলেও সেবার লড়েছিলেন ২০০ মিটার স্প্রিন্টে। হেপ্টাথলনে ১২তম স্থান নিয়ে শেষ করেন, আর ২০০ মিটারে দখল করেন ষষ্ঠ অবস্থান। এ কারণে নতুন কিছু করার চিন্তাটা তার কোচের মাথাতেই আসে। মাত্র দুই বছর আগে পুরোপুরি হেপ্টাথলন ছেড়ে দিয়ে স্প্রিন্ট জগতে নিয়মিত হয়ে যান ডাচ্ সুন্দরী শিপার্স। আর তার এ সিদ্ধান্তটা বেশ ফলপ্রসূই ছিল তা গত দুই বছরের নৈপুণ্য থেকেই প্রমাণ পাওয়া যায়। লন্ডন অলিম্পিকে কোন পদক জিততে না পারলেও এবার তিনি ট্রিপল জিততে পারেন এমন সম্ভাবনা অনেক। কারণ বর্তমানে বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংয়ের ২০০ মিটারে তিনি আছেন শীর্ষে। এমনকি অলিম্পিকের আগে টানা দুটি ডায়মন্ড লীগ মিটে (মোনাকো ও লন্ডন) তিনি দারুণ টাইমিং গড়েই জিতেছেন। লন্ডন মিটের রেকর্ড অল্পের জন্য মিস করেন ২২.১৩ সেকেন্ড টাইমিং নিয়ে। সামান্য সময়ে স্প্রিন্টে আসলেও ৫ ফুট ১০ ইঞ্চি উচ্চতার দারুণ ফিটনেসের অধিকারী এ এ্যাথলেট আসন্ন রিও অলিম্পিকের অন্যতম ফেবারিট। স্প্রিন্টে জ্যামাইকা ও যুক্তরাষ্ট্রের বহু দিনের একক আধিপত্য এবার খর্ব হয়ে যেতে পারে। সর্বশেষ ৮ অলিম্পিকে মেয়েদের ১০০ মিটারে উত্তর আমেরিকা কিংবা জ্যামাইকার স্প্রিন্টাররাই জিতেছেন। আর ২০০ মিটারে এই আটটির মধ্যে সাতটিরই শ্রেষ্ঠত্ব গেছে এ দুটি দেশের পক্ষে। এবার ১০০ মিটারে শিপার্সের সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ অলিম্পিক ও বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন জ্যামাইকান শেলী এ্যান ফ্রেজার-প্রাইস। আর ২০০ মিটারে এখন ওয়ার্ল্ড লিডিংয়ের শীর্ষে শিপার্স। বিশেষ করে গত অলিম্পিকের চ্যাম্পিয়ন এ্যালিসন ফেলিক্স এবার রিও অলিম্পিকে কোয়ালিফাই করতে ব্যর্থ হওয়ায় অপ্রতিদ্বন্দ্বী শিপার্স। তবে ডদনা এ্যাশার-স্মিথ হতে পারেন বড় প্রতিপক্ষ। মহিলাদের স্প্রিন্ট র‌্যাঙ্কিংয়ে ১০০ মিটারে শীর্ষে ২৪ বছর বয়সী জ্যামাইকান গতিতারকা এলেইন থম্পসন। এবার জ্যামাইকার জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ী এ স্প্রিন্টার ১০.৭০ সেকেন্ড টাইমিং নিয়ে আছেন তালিকার এক নম্বরে। বর্তমান অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন, অনুশীলন সতীর্থ ও স্বদেশী শেলী ১০.৭৪ টাইমিং নিয়ে দ্বিতীয়, ভেরোনিকা ক্যাম্পবেল ব্রাউন ১০.৮৩ সেকেন্ড নিয়ে ৯ নম্বরে। আর ২০০ মিটারে শিপার্স ২১.৬৩ সেকেন্ড নিয়ে এক নম্বরে, ২১.৬৬ সেকেন্ড টাইমিংয়ে এলেইন দুইয়ে এবং ২১.৯৭ সেকেন্ড সময় নিয়ে ক্যাম্পবেল ব্রাউন তৃতীয়। শিপার্স অবশ্য এবার মোনাকো ডায়মন্ড লিগে ১০০ মিটার জিতেছেন। ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপসে আগে থেকেই ৪ী১০০ মিটার রিলে ইভেন্টে অংশ নিতেন। সে কারণেই কোচের পরামর্শে স্প্রিন্ট ইভেন্টে অনুশীলন শুরু করেন। এর সুফল শিপার্স পেয়েছেন ২০১৩ সালের অনূর্ধ্ব-২৩ ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপসে। সেখানে তিনি ১০০ মিটারে স্বর্ণপদক জয় করে নিজেকে একজন স্প্রিন্টার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। এরপর বেশ কয়েকবার জিতেছেন সেরা হয়েই। গত বছর বেজিং বিশ্ব আসরে অবশ্য ১০০ মিটারে রৌপ্য জিতেছেন, কিন্তু ২০০ মিটারে স্বর্ণ জিতে নিজেকে আসন্ন অলিম্পিকের অন্যতম ফেবারিট হিসেবেই প্রমাণ করেছেন। বেজিং বিশ্ব আসরে ২১.৬৩ সেকেন্ডে ২০০ মিটার শেষ করে তিনি নতুন ইউরোপিয়ান রেকর্ড গড়েন। এ কারণে শিপার্সের দিকে দৃষ্টি সবার। এ ডাচ্ তরুণীও দারুণ আত্মবিশ্বাসী। এ বছর ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপসের ১০০ মিটারে ১০.৯০ সেকেন্ড টাইমিংয়ে স্বর্ণপদক জেতেন শিপার্স। ১২ আগস্ট ১০০ মিটার, ১৫ আগস্ট ২০০ মিটার এবং ১৮ আগস্ট ৪ী১০০ মিটার রিলের ফাইনাল। এ তিনটা দিন শিপার্স ঝড় তুলতে পারবেন কিনা তা দেখতে সবাই থাকবে উদগ্রীব। সাঁতারে সবার চোখ থাকবে তরুণী ফ্র্যাঙ্কলিনের দিকে। সাঁতারে সবসময়ই মার্কিন মহিলারা সেরা। এবার সেই সেরার ঝা-া তুলে ধরার ভার থাকবে ৬ ফুট ২ ইঞ্চি উচ্চতার এ দীর্ঘাঙ্গিনীর হাতে। গত অলিম্পিকে অভিষেক ঘটা এ তরুণী মাত্র ১৭ বছর বয়সেই সবার নজর কেড়েছিলেন। জিতেছিলেন চারটি র্স্ব্ণ ও ১টি ব্রোঞ্জ। অনেকেই সে কারণে কিংবদন্তি মার্কিন সাঁতারু মাইকেল ফেলপসের সঙ্গে তুলনা করে তাঁকে ‘মহিলা ফেলপস’ বলেও অভিহিত করেছিলেন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ফর্ম কিছুটা পড়তির দিকে ফ্র্যাঙ্কলিনের। মূলত, ব্যাকস্ট্রোকের রানী তিনি। অবশ্য এবার রিও অলিম্পিকে দলীয় কোন রিলে ইভেন্টে থাকছেন না ফ্র্যাঙ্কলিন। মাত্র দুই ইভেন্টে অংশ নেবেন তিনি। বাকি ইভেন্ট গুলোতে দুর্দান্ত তারই সতীর্থ কেটি লিডেকি। এবার মহিলাদের ২০০ মিটার ফ্রিস্টাইল ও ব্যাকস্ট্রোক- এ দুটি ইভেন্টেই শুধু অলিম্পিকের পুলে নামবেন মিসি। ৮ আগস্ট ফ্রিস্টাইলের এবং ১১ আগস্ট ব্যাকস্ট্রোকের ফাইনালের দিন মিসির দিকে নজর থাকবে সবার। ২০১১ সালের অক্টোবরে ফিনা সাঁতার বিশ্বকাপে সবার দৃষ্টি কাড়েন কিশোরী মিসি। ২০০ মিটার ব্যাকস্ট্রোকে গড়েন নতুন বিশ্বরেকর্ড। সে বছরই ডিসেম্বরে নিজের দ্বিতীয় বিশ্বরেকর্ড গড়ে দেখান মিসি। ৪ী১০০ মিটার মিডলে রিলেতে সেই রেকর্ড গড়ার সতীর্থ ছিলেন নাতালি কাফলিন, রেবেকা সোনি ও ডানা ভলমার। একের পর এক সাফল্য পাচ্ছিলেন। কিন্তু সেটা ধরে রাখতে পারেননি ফ্র্যাঙ্কলিন। বিশেষ করে গত বছর কাজানে অনুষ্ঠিত বিশ্ব এ্যাকুয়াটিক চ্যাম্পিয়নশিপসে তেমন আহামরি কিছু করতে পারেননি। চারটি ব্যক্তিগত ও চারটি রিলে ইভেন্টেই শুধু অংশগ্রহণ করেছেন। ১০০ ও ২০০ মিটারের ফ্রিস্টাইল ও ব্যাকস্ট্রোক। ৪ী১০০ মিটার ফ্রিস্টাইল রিলেতে ব্রোঞ্জ এবং ২০০ মিটার ফ্রিস্টাইলে ব্রোঞ্জ জেতেন তিনি। ১০০ মিটার ব্যাকস্ট্রোকে হতে পেরেছেন পঞ্চম। বিশ্ব আসরের প্রথম স্বর্ণটি আসে দলগত ইভেন্টে। ৪ী২০০ মিটার ফ্রিস্টাইল রিলেতে মার্কিন মহিলা সাঁতার দল প্রথম হওয়াতে সেই স্বর্ণপদক জোটে ফ্র্যাঙ্কলিনের গলায়। আর ২০০ মিটার ব্যাকস্ট্রোকে রৌপ্য এবং ৪ী১০০ মিটার মিশ্র ফ্রিস্টাইল রিলেতে স্বর্ণ জিততে পেরেছেন। তবে এরপরও এবার রিও অলিম্পিকে ফ্র্যাঙ্কলিনের দিকে দৃষ্টি থাকবে সবার।
×