ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কোহিনূর শম্পা

ফেলপস-বোল্ট সবার নজরে

প্রকাশিত: ০৬:০১, ৩ আগস্ট ২০১৬

ফেলপস-বোল্ট সবার নজরে

দুজনেই কিংবদন্তি। একজন ট্র্যাক এ্যান্ড ফিল্ড আর অন্যজন পুলে। ক্রীড়াজগতের ‘গ্রেটেশ শো অন আর্থ খ্যাত’ অলিম্পিক এলেই সবার দৃষ্টি কেড়ে নেন তারা। এবারও তার ব্যতিক্রম নয় বরং একটু বেশি-ই। কেননা জলদানব আর ইতিহাসের দ্রুততম মানবের এটাই যে শেষ অলিম্পিক! অসাধারণ পারফর্মেন্স উপহার দিয়ে নিজেদের অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন মাইকেল ফেলপস আর উসাইন বোল্ট। রিও অলিম্পিকে ইতিহাস গড়ে শুধুই নিজেদের ছাড়িয়ে যাওয়ার। ২০০৮ ও ২০১২ সালের অলিম্পিকে ১০০, ২০০, ও ৪ গুনিতক ১০০ মিটার রিলের স্বর্ণ পদক জিতে তিনিই হন প্রথম স্প্রিন্টার যিনি অলিম্পিকে নিজের জেতা তিনটি স্বর্ণপদকই অক্ষণœ রাখতে পেরেছিলেন। এবার রিও অলিম্পিকে নিজের সাফল্য ধারা অতিমানবীয় পর্যায়ে নেয়ার পালা। রিওতে যদি আবারও তিনটি স্বর্ণপদক জিততে পারেন, তবে ‘ট্রিপল ট্রিপল’ এর অবিসংবাদিত রেকর্ড শোভা পাবে তার গলায়। আর তার এই বিস্ময়কর রেকর্ড কবে ভাঙবে কিংবা আদৌ কোনদিন ভাঙতে পারবে কিনা প্রশ্নের উত্তর জমা থাকবে কালের গর্ভে। বর্তমানে বোল্টের যে ফর্ম তাতে তিনটি স্বর্ণপদক জেতা প্রায় নিশ্চিত। শুধু তাই নয় বোল্ট চোখ রেখেছেন আরেক নজিরবিহীন কীর্তির ওপরও। আর তা হলো ২০০ মিটার স্প্রিন্টের বিশ্ব রেকর্ড ১৯ সেকেন্ডের নিচে নামিয়ে আনা! ২০০৯ সালে তিনি ১০০ ও ২০০ মিটার স্প্রিন্টে দুটি বিশ্বরেকর্ড গড়েন। ১০০ মিটারে ৯:৫৮ ও ২০০ মিটারে ১৯:১৯ সেকেন্ড নিয়ে গড়া দুটি বিশ্ব রেকর্ডকে গত সাত বছরে হুমকির মুখে ফেলতে পারেননি কেউ। বোল্ট লন্ডন অলিম্পিকে ২০০ মিটার শেষ করেছিলেন ১৯:৩২ সেকেন্ডে। এবার বোল্টের ফর্মের কথায় আসা যাক, গত ১১ জুন কিংস্টনে তিনি ১০০ মিটারের শিরোপা জিতেছেন ৯:৮৮ সেকেন্ডে। যা চলতি বছরে দ্বিতীয় দ্রুততম পারফর্মেন্স। এ বছর এখন পর্যন্ত দ্রুততম সময় ফ্রান্সের জিমি ভিকাওটের। তা হলো ৯:৮৬ সেকেন্ড। তবে এটি ছিল বাতাসের অনুকূলে দৌড়ানো। রিও অলিম্পিকে বোল্টের বড় প্রতিপক্ষ কে? তার দুই অনুশীলন সতীর্থ ইয়োহান ব্লেক ও নিকোল এ্যাশমিড। ড্রাগ প্রতারক হিসেবে বার বার বোল্টের পেছনে পড়া যুক্তরাষ্ট্রের জাস্টিন গ্যাটলিন ও জিমি ভিকাওটরা আছেন ১০০ ও ২০০ মিটারে বোল্টের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে। ব্লেক ও এ্যাশমিড দুজনেই ১০০ মিটারের হিটে ৯:৯৪ সেকেন্ড সময় নিয়েছেন। গ্যাটলিন গত বছর বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে উসাইন বোল্টের সঙ্গে দৌড়ে ১৯:৭৪ সেকেন্ড সময় নেন। যেখানে জ্যামাইকান স্প্রিন্টার বোল্ট নিয়েছিলেন ১৯:৫৫ সেকেন্ড। তবে ১০০ মিটারে বোল্টকে প্রায় ছুঁয়ে ফেলেছিলেন গ্যাটলিন। ৯:৭৯ সেকেন্ড সময় নিয়ে প্রথম হন বোল্ট। ৯:৮০ সেকেন্ডে দ্বিতীয় হন ২০১০ সালে ডোপ পাপী হিসেবে চার বছর বহিষ্কৃত হওয়া গ্যাটলিন। ফলাফল নিশ্চিত করতে ফটো ফিনিশের আশ্রয় নিতে হয়েছিল বিচারকদের। বোল্টের যা কিছু অর্জন ও রেকর্ড তাতে তিনি স্বাভাবিকভাবেই অনন্য। রিও অলিম্পিকে সেটি আরও উজ্জ্বল করতে চান বোল্ট। অলিম্পিকের শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখতে গত সপ্তাহেই ব্রাজিলের অন্যতম শহর রিওতে পা রেখেছেন জ্যামাইকান তারকা। রিওতে পা রেখেই তিনি বলেন, ‘জানি অলিম্পিকে আমাকে কতটা দরকার। আমাকে জিততে হবে। ফিরিয়ে আনতে হবে পুরনো দিনগুলো। আমি এখানে সবকিছু জিততেই এসেছি। সব ইভেন্টে সোনা জেতাই আমার মূল লক্ষ্য। আমার কোচ যদি আমার ওপর আস্থা রাখেন, তাহলে অবশ্যই আমি তার কথায় বিশ্বাস স্থাপন করব। আমি স্বর্ণ হারাব না। তবে টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণকারী প্রত্যেক দৌড়বিদই যোগ্য। যেমন ইয়োহান ব্লেক তেমনি টেভন বোমেল কিংবা জাস্টিন গ্যাটলিন।’ আর রিও অলিম্পিকের শেষেই বুটজোড়া তুলে রাখবেন কিনা- সম্প্রতি এক সাক্ষাতকারে এমন প্রশ্ন করা হলে হাস্যরসে মেতে ওঠেন বোল্ট। দর্শক সারিতে বসা নিজের স্পন্সর পুমার সিইওকে দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘সেটা তো আমার বস সিদ্ধান্ত নেবে। কিন্তু আমি চুক্তির দ্বারা আবদ্ধ।’ ২০ বছর পর নিজেকে কোথায় দেখতে চান, পৃথিবীর দ্রুততম দৌড়বিদের জবাব, ‘নিজের পুরোটা জীবনই এ্যাথলেটিক্সের সঙ্গে কাটাতে চাই।’ বোল্ট যেমন ট্র্যাক এ্যান্ড ফিল্ডে তেমনি পুলে সর্বকালের অন্যতম সেরা সাতারু মাইকেল ফেলপস। অসাধারণ পারফর্ম উপহার দিয়ে ইতোমধ্যেই নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। ২০১২ সালে লন্ডন অলিম্পিকের পরপরই সরে গিয়েছিলেন সাতার থেকে। কিন্তু সাতারের প্রতি অসম্ভব ভালবাসার কারণে আবারও সুইমিং পুলে ফিরেন জলদানব। এই মুহূর্তেও শরীর ও মন দুটিই চনমনে তার। প্রস্তুতি-পর্বও শেষ। এবার ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোতে ক্যারিয়ারের শেষ অলিম্পিক খেলবেন তিনি। আর আমেরিকান এই জীবন্ত কিংবদন্তিও চান ক্যারিয়ারের শেষ গেমসেও জ্বলে উঠতে। যুক্তরাষ্ট্রে জলদানবখ্যাত এই সাঁতারু অসংখ্য রেকর্ডের মালিক। অলিম্পিকেই রেকর্ড ২২টি পদক রয়েছে (১৮টি স্বর্ণ) তার। ৪ বছর আগে লন্ডনে যেমন আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। এবারও তেমনটিই রয়েছেন। সর্বশেষ লন্ডন অলিম্পিকে তিনি ৪টি স্বর্ণ ও দুটি রৌপ্য জিতেছিলেন (মোট ৬টি পদক)। লন্ডন অলিম্পিকের পরপরই তিনি বলেছিলেন, এখানেই শেষ। তবে আবারও ফিরে এসেছেন। ৩১ বছর বয়সী ফেলপস জানান, ৪ বছর আগে তিনি আরও কিছু জয় করতে পারতেন। কিন্তু সেসব জয় করে মনকে তৃপ্ত করতে চান। তাই আবারও পুলে ফেরা তার। তিনি বলেন, ২০১২ সালে যখন গেলাম আমি আসলেই অমন পারফর্মেন্স চাইনি। আমার চেষ্টা পরিপূর্ণ হয়নি। আমি আরও দ্রুত গতিতে সাঁতার কাটতে চেয়েছি। সেই ব্যর্থতা আমাকে তাড়া করে ফেরে। আমি আবারও ফিরে এসেছি। কারণ আমি এবার যা পারিনি তা করে দেখাতে চাই। সময়ের বিচারে আমি সফলতা ও ব্যর্থতা দুটিই উপভোগ করি। এই খেলাটির প্রতি আমার ভালবাসা আছে। এ জন্যই আবারও খেলতে এসেছি। এ নিয়ে পঞ্চমবারের মতো অলিম্পিকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে যাচ্ছেন ফেলপস। তার আগে আর কোন আমেরিকান সাঁতারু পাঁচবার অলিম্পিকে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ পাননি। এবার সেই সুযোগ পেয়ে ফেলপস দারুণ রোমাঞ্চিত। সেইসঙ্গে ক্যারিয়ারের সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিংও মানছেন ফেলপস। রিও অলিম্পিকের টিকেট পেয়েই ৩১ বছর বয়সী এই সাঁতারু বলেন, ‘যা কিছু ঘটে গেছে, তার পরও আমি ফিরে এসেছি। আমি আমার জীবনে যত ইভেন্টে ও প্রতিযোগিতায় লড়েছি, এটা মনে হয় সবচেয়ে কঠিন ছিল। তবু দলের সঙ্গে অলিম্পিকে যাওয়াই সবচেয়ে বড় কথা।’ ক্যারিয়ারের উত্থান-পতন বিবেচনায় এ অর্জনকে অনেক বড় হিসেবে দেখছেন তিনি। ২০০০ সালে সিডনি অলিম্পিকে প্রথম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা ফেলপস শুধু নিজের জন্য নয়। যুক্তরাষ্ট্রের সাঁতারের যে দলটি যাচ্ছে তাদের সাহায্যও করবেন তিনি।
×