ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অধরা পদকের সন্ধানে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৬:০১, ৩ আগস্ট ২০১৬

অধরা পদকের সন্ধানে বাংলাদেশ

লিটন আব্বাস ॥ বিশ্বের বৃহত্তম ক্রীড়া আসর অলিম্পিক গেমস। শুক্রবার ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোতে আনুষ্ঠানিকভাবে পর্দা উঠছে এবারের ৩১তম আসরের। এই ক্রীড়াযজ্ঞে শামিল হচ্ছে বাংলাদেশও। গত আসরগুলোতে ‘পদক নয়, অংশগ্রহণই আসল লক্ষ্য’ থাকলেও এবারের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। এবার প্রথমবারের মতো পদক জয়ের স্বপ্ন নিয়ে রিও চ্যালেঞ্জে গেছেন লাল-সবুজের দেশের এ্যাথলেটরা। ‘গ্রেটেস্ট শো অন দ্য আর্থ’ উদ্বোধনের পর ওইদিনই মাঠে গড়াবে বিভিন্ন ইভেন্টের খেলা। শুরুর দিনে ময়দানী লড়াইয়ে নামবে বাংলাদেশও। উদ্বোধনের দিন রিও ডি জেনিরোর স্থানীয় সময় দুপুর ১টায় আরচারি গ্রাউন্ডে নামবেন বাংলাদেশের তীরন্দাজ শ্যামলী রায়। রিও ডি জেনিরোর স্থানীয় সময়ের সঙ্গে নয় ঘণ্টা এগিয়ে বাংলাদেশ। ফলে বাংলাদেশ সময় প্রতিযোগিতা শুরু হবে রাত ১০টায়। রিওতে অংশ নিতে ইতোমধ্যে দেশ ছেড়েছেন শ্যামলী। তার সঙ্গে কোচ হিসেবে আছেন নিশীথ দাস। বরাবরের মতো এবারও অলিম্পিকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে লাল-সবুজের এই দেশ। যেখানে অংশ নিচ্ছেন সাতজন প্রতিযোগী। এর মধ্যে সরাসরি অংশ নিতে যাচ্ছেন গলফ ইভেন্টে সিদ্দিকুর রহমান। বাকি ছয় সদস্য ওয়াইল্ড কার্ডের বিনিময়ে অংশ নেবেন। সাঁতার, শূটিং, এ্যাথলেটিকস, গলফ, আরচারিÑ এই পাঁচ ইভেন্টে লড়বে বাংলাদেশের প্রতিযোগীরা। আরচারি দিয়ে রিও মিশন শুরু করবে লাল সবুজের বাংলাদেশ। আরচারির পর শূটিং ইভেন্ট। যেখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বাংলাদেশের আশা-ভরসার প্রতীক আবদুল্লাহ হেল বাকী। তিনি লড়বেন ১০ মিটার এয়ার রাইফেলে। স্থানীয় সময়ে এই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে ৮ আগস্ট সকাল ৯টায় ও বাংলাদেশ সময় রাত ১১টায়। গত রবিবার রাতে সবার আগে ব্রাজিলের উদ্দেশে রওনা দেন তিনি। তার সঙ্গে আছেন ডেনমার্কের কোচ কাওস। এরপর গলফ ইভেন্ট। যে ইভেন্ট দেখতে মুখিয়ে আছে গোটা বাংলাদেশ। কেমন করবেন বাংলাদেশের সিদ্দিকুর রহমান। ১১ আগস্ট কোর্সে নামবেন তিনি। স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৭টায় অর্থাৎ বাংলাদেশ সময় রাত ১০টায় শুরু হবে সিদ্দিকুরের মিশন। ব্রাজিলের উদ্দেশে সিদ্দিকুর ঢাকা ছেড়েছেন মঙ্গলবার। সাঁতার ইভেন্টে বাংলাদেশের দুইজন অংশ নিচ্ছেন। প্রথমে পুলে নামবেন মাহফিজুর সাগর। স্থানীয় সময়ে ১১ আগস্ট দুপুর ১টায় অর্থাৎ বাংলাদেশ সময় ভোর ৪টায় শুরু হবে সাগরের ইভেন্ট। পরের দিন একই সময়ে পুলে নামবেন অন্য সাঁতারু সোনিয়া আক্তার। দু’জনই ৫০ মিটার ফ্রি স্টাইলে লড়বেন। তাদের সঙ্গে পাঠানো হচ্ছে না কোন কোচ। সবার শেষে ট্র্যাক এ্যান্ড ফিল্ডের লড়াই। ১২ ও ১৩ আগস্ট যথাক্রমে ট্র্যাকে নামবেন শিরিন আক্তার ও মেজবাহ আহমেদ। ১০০ মিটার স্প্রিন্টের হিটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন তারা। ১২ আগস্ট স্থানীয় সময় বেলা ১১টা ৫৫ মিনিটে ট্র্যাক এ্যান্ড ফিল্ডের লড়াইয়ে নামবেন দেশের দ্রুততম মানবী শিরিন। পরের দিনই স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৯টায় অর্থাৎ বাংলাদেশ সময়ে রাত সাড়ে ১১টায় নামবেন দেশের দ্রুততম মানব মেজবাহ। রিও অলিম্পিকে বাংলাদেশের বহর ২১ জনের। এর মধ্যে পাঁচজন আমন্ত্রিত অতিথি। বাকি ১৬ জনের মধ্যে সাতজন প্রতিযোগী, তিনজন কোচ, পাঁচজন কর্মকর্তা। সেফ দ্য মিশন হিসেবে অলিম্পিকে যাচ্ছেন ফেন্সিং ফেডারেশনের সভাপতি আবু তায়েব মুহাম্মদ জহিরুল আলম। অন্য কর্মকর্তাদের মধ্যে বিওএর মহাপরিচালক ফখরুদ্দিন হায়দার যাচ্ছেন অলিম্পিক এ্যাটাশে হিসেবে। এ্যাথলেটিকস ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম চেঙ্গিস ব্রাজিলে যাচ্ছেন ন্যাশনাল অলিম্পিক কাউন্সিলের অতিথি হিসেবে। গলফ ফেডারেশনের সহ-সভাপতি এ কে এম আব্দুল্লাহিল বাকী যাচ্ছেন দলের টিম লিডার হিসেবে। অলিম্পিকের ইতিহাসে এটি ৩১তম আসর হলেও বাংলাদেশের জন্য নবম। ১৯৮৪ সালে লস এ্যাঞ্জেলস অলিম্পিক দিয়ে স্বপ্নের ক্রীড়াযজ্ঞে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ শুরু হয়। আগের আসরগুলোতে পদক দূরে থাক, পদক জয়ের সম্ভাবনাও সৃষ্টি করতে পারেনি বাংলাদেশের কোন এ্যাথলেট। তবে এবার সেই বন্ধ্যাত্ব ঘোচানোর স্বপ্ন বুনছেন কয়েকজন। বিশেষ করে গলফার সিদ্দিকুরকে নিয়ে আশাবাদী গোটা দেশ। অনেকেই স্বপ্ন বুনছেন, সিদ্দিকের হাত ধরে অলিম্পিকে পদকখরা ঘোচাবে লাল-সবুজের দেশ। বাংলাদেশ বিশ্বের জনবহুল দেশগুলোর একটি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন পদক জিততে পারেনি। এর প্রধান কারণ হিসেবে বলা হয়, বাংলাদেশের দুর্বল অর্থনীতি আর দুর্নীতিকে! তবে এবারের পরিস্থিতি বেশ ভিন্ন। এবার স্বর্ণপদক জিতলেই কোটিপতি। বাংলাদেশের ক্রীড়া ইতিহাসে এবারই প্রথম এত মোটা অঙ্কের অর্থ পুরস্কারের ঘোষণা। অলিম্পিক সামনে রেখে অংশগ্রহণকারী বাংলাদেশের ক্রীড়াবিদদের উৎসাহিত করতেই এ উদ্যোগ। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ অলিম্পিক এ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ) মহাসচিব সৈয়দ শাহেদ রেজা বলেন, আমরা অলিম্পিকে বাংলাদেশের যে পতাকা নিয়ে যাচ্ছি অংশ নিতে, সেই পতাকার ইজ্জত রক্ষা করতে চাই। এ পর্যন্ত আমরা অলিম্পিকে কোন পদক জিততে পারিনি। তবে অতীতের দিকে চেয়ে না থেকে আমাদের আশাবাদী হওয়া উচিত। বাংলাদেশ যদি এবার কোন পদক পায় তাহলে সেটা সিদ্দিকুর ও বাকীর হাত ধরেই আসবে বলে প্রত্যাশা করছি। তিনি আরও জানান, বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনের সবচেয়ে মর্যাদার আসর অলিম্পিক। বড় আসরে আমাদের অতীত ইতিহাস যাই থাক। এবার ভাল কিছু করার অনুপ্রেরণা হিসেবে ক্রীড়াবিদদের মোটা অঙ্কের অর্থ পুরস্কারের ঘোষণা আমরা দিয়েছি। স্বর্ণপদক জিততে পারলে এক কোটি টাকা দেয়া হবে। আর রৌপ্য পদকের জন্য ৫০ লাখ ও ব্রোঞ্জপদক পেলে ২৫ লাখ। আমি মনে করি এটা আমাদের খেলোয়াড়দের মধ্যে বাড়তি একটা অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে।
×