ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মাওয়ায় সমিতির নামে টোল আদায়

লঞ্চ মালিকদের ক্ষোভ ॥ ধর্মঘটের হুমকি

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ৩ আগস্ট ২০১৬

লঞ্চ মালিকদের ক্ষোভ ॥ ধর্মঘটের হুমকি

স্টাফ রিপোর্টার, মুন্সীগঞ্জ ॥ শিমুলিয়া-কাওড়াকান্দি নৌরুটে লঞ্চযাত্রীদের কাছ থেকে আবার টোল আদায় শুরু হয়েছে। কোন প্রকার ওপেন টেন্ডার ছাড়াই লঞ্চ মালিক সমিতির কয়েক কর্মকর্তার ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের জন্য এক বছরের জন্য লঞ্চ ঘাট ইজারা দেয়া হয়েছে বলে সাধারণ লঞ্চ মালিকরা অভিযোগ করেছেন। গত ৩১ জুলাই বাংলাদেশ লঞ্চ মালিক সমিতি (মাওয়া জোন) ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) সঙ্গে এক সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরের পর সোমবার থেকে এ টোল আদায় শুরু করেছে লঞ্চ মালিক সমিতি। শিমুলিয়া বন্দর কর্মকর্তা মহিউদ্দিন এ সংক্রান্ত একটি ওয়ার্ক অর্ডার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে পেয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন। তবে সমিতিকে পাশ কাটিয়ে কয়েকজন কর্মকর্তার ব্যক্তিস্বার্থে সমিতির নাম ব্যবহার করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার চেষ্টা করায় কর্মকর্তা ও সাধারণ লঞ্চ মালিকদের সঙ্গে দেখা দিয়েছে চরম দ্বন্দ্ব ও উত্তেজেনা। যাত্রীর কাছ থেকে নয়, প্রতি ট্রিপে ২শ’ টাকা হারে এ টোল আদায় করা হচ্ছে প্রতিটি লঞ্চ থেকে। এতে ক্ষুব্ধ লঞ্চ মালিকরা লঞ্চ ধর্মঘটসহ ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক আবরোধের হুমকি দিয়েছে। তাছাড়া স্থানীয় সরকার দলীয় লোকজনের মধ্যেও এ নিয়ে ক্ষোভ বিরাজ করছে। হানজালা লঞ্চের মালিক মোশারফ হোসেন নসু জানান, লঞ্চ মালিক সমিতির নামে টোল আদায়ের অনুমতি পেলেও এটি সাধারণ সদস্য বা লঞ্চ মালিকরা কেউ জানেন না। মাত্র কয়েক কর্মকর্তা সমিতির নাম ভাঙিয়ে আর্থিকভাবে লাভবান হতেই তারা এ সমঝোতা স্বাক্ষর করেছে। সমিতির সাধারণ সদস্যরা এ আয়-ব্যয়ের ভাগিদার হতে চাইলেও তাদের কোন ভাগ দেয়া হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে ওই কর্মকর্তারা। বরং প্রতিটি ট্রিপে লঞ্চ মালিকদের কাছ থেকে দুইশ’ টাকা করে নেয়া হচ্ছে। এ অন্যায় বন্ধ করা না হলে লঞ্চ ধর্মঘটসহ ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক অবরোধ করা হবে। এদিকে ঘাটের এই ইজারাকে কেন্দ্র করে স্থানীয়দের মাঝেও চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। তারা বলছে, ঘাট যদি ইজারাই দিতে হয়, তবে ওপেন টেন্ডারের মাধ্যমে নয় কেন? ওপের টেন্ডার দিলে সরকার অধিক টাকা রাজস্ব পেত। কার স্বার্থে এ রকম সমঝোতার মাধ্যমে ঘাট ইজারা দেয়া হচ্ছে। লৌহজং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল রশিদ সিকদার বলেন, কিসের সমঝোতা চুক্তি। যদি টোল আদায় করতে হয়, তবে ওপেন টেন্ডারে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে করতে হবে। স্থানীয় সাংসদ অধ্যাপিকা সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি বলেন, দক্ষিণবঙ্গের মানুষের হয়রানি বন্ধ করতে এ ঘাট হতে টোল প্রথা বিলুপ্ত করা হয়েছে। সমঝোতার নামে আমরা এখানে কোন যাত্রী হয়রানি মেনে নেব না। আর যদি সমঝোতা করতে হয়, তবে এ ঘাটের জন্য যারা জমি ছেড়ে দিয়ে সহযোগিতা করেছে তাদের সঙ্গে সমঝোতা করতে হবে। কতিপয় ব্যক্তির স্বার্থ মেনে নেয়া হবে না। উল্লেখ্য, বছর দুই পূর্বে মাওয়া ও কাওড়াকান্দি ঘাট হতে টোল আদায় বা ইজারা প্রথা বন্ধ করে দেয় বিআইডব্লিউটিএ। এ ব্যাপরে টোল আদায়কারী ভাস্কর চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ইজারা নয়, বিআইডব্লিউটির রাজস্ব শাখা হতে টোল আদায়ের দায়িত্ব পেয়েছি। দায়িত্ব কি সমিতি পেয়েছে না কি আপনি ব্যক্তিগতভাবে পেয়েছেন- এ রকম প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমি অসুস্থ। এ ব্যাপারে কিছু বলতে চাচ্ছি না। এ ব্যাপারে বিআইডব্লিউটির পরিচালক (বন্দর) শফিকুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বাংলাদেশ লঞ্চ মালিক সমিতির (মাওয়া জোন) সঙ্গে এক বছরের জন্য চুক্তির মাধ্যমে টোল আদায়ের সমঝোতা হয়েছে।
×