ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ছবি উঠালেই চলে যাবে কর্তৃপক্ষের কাছে

হাতের মুঠোয় নগর এ্যাপ ॥ সাত সমস্যার সমাধান পাওয়া যাবে

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ৩ আগস্ট ২০১৬

হাতের মুঠোয় নগর এ্যাপ ॥ সাত সমস্যার সমাধান পাওয়া যাবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নগর এ্যাপ এখন হাতের মুঠোয়। এ্যাপটি যে কোন স্মার্টফোনের মাধ্যমে গুগল প্লে স্টোর থেকে ডাউনলোড করে নাগরিক সুবিধা পাওয়া যাবে। এ্যাপসটির মাধ্যমে এলাকার রাস্তা, সড়কবাতি, বর্জ্য, ড্রেনেজ, মশক, অবৈধ দখল, ঘুষ ও দুর্নীতিসহ সাতটি অভিযোগ করা ও সমাধান পাওয়া যাবে। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে এসব অভিযোগ সরাসরি চলে যাবে উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের কাছে। মেয়র সঙ্গে সঙ্গে তার ব্যবস্থা নেবেন। নাগরিক সেবার তথ্যভা-ার সমৃদ্ধ এ্যাপটি সেবার পাশাপাশি হবে নিরাপত্তার মোক্ষম হাতিয়ার। মঙ্গলবার ‘নগর’ নামে একটি ডিজিটাল এ্যাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ কথা বলা হয়। ডিএনসিসির বিশেষ উদ্যোগ ও বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির (বিইউ) আরবান ল্যাবের গবেষণা, দলগত প্রচেষ্টায় তৈরি করা হয়েছে অত্যাধুনিক ‘নগর’ এ্যাপ। মঙ্গলবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে এলজিআরডিমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এ্যাপের উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিএনসিসির মেয়র আনিসুল হক। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি মানুষের জীবনের চলার পথকে অনেক সহজ করেছে। একই সঙ্গে সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে। সময়োপযোগী বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণের মাধ্যমে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনকে সেবাধর্মী ও জনবান্ধব প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে আজকের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানান। এক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে। এ্যাপটি ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের অধিবাসীদের নাগরিক সার্বিক সেবা পেতে অনবদ্য ভূমিকা পালন করবে। এ ধরনের এ্যাপ পর্যায়ক্রমে দেশের প্রতিটি পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদে চালু করা হলে নাগরিক সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব। তথ্যপ্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে দেশকে উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথে এগিয়ে নিতে প্রধানমন্ত্রী ‘ভিশন ২০২১’ ঘোষণা করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই প্রতিটি ইউনিয়নে তথ্য সেবা পেতে ডিজিটাল সেন্টার চালু করা হয়েছে। সাধারণ মানুষ সহজেই তথ্যপ্রযুক্তির সব সুবিধা পাচ্ছেন। মেয়র আনিসুল হক বলেন, এই এ্যাপের মাধ্যমে মোবাইলে ছবি উঠানোর পর তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছে যাবে। সিটি কর্পোরেশনের প্রধান কার্যালয়সহ বিভিন্ন জোনের কাছে রক্ষিত ড্যাশবোর্ডের প্রতিটি অভিযোগ ও মতামত প্রতিফলিত হবে। অভিযোগের প্রকার বিশ্লেষণ করে সে অনুযায়ী সিটি কর্পোরেশন যে সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ করবে সেটিও ড্যাশবোর্ডে দৃষ্টিগোচর হবে। পরে অভিযোগকারী স্বয়ংক্রিয়ভাবে সমাধানের বিষয়টি জেনে যাবেন। এটি এমন একটি এ্যাপ্লিকেশন যা অতি সহজে একটি মাত্র আঙুলের ছোঁয়ায় সরাসরি ও কার্যকরভাবে যোগাযোগ গড়ে তুলতে সক্ষম। প্রিয়জন কোন বিপদে পড়লে মাত্র ৩ সেকেন্ডে এ্যাপের ‘এসওএস’ আইকনে চেপে ধরলে পৃথিবীর যে কোন প্রান্ত থেকে স্যাটেলাইটের সহায়তায় বাবা, মা, আত্মীয় ও নিকটস্থ’ পুলিশের কাছে বিপদ সংকেত বেজে উঠবে। ভিকটিমের ছবি, অবস্থান ও কণ্ঠ স্বয়ংক্রিয়ভাবে পৌঁছে যাবে। এছাড়া ২ মিনিট পরপর বিপদ সংকেত বাজতে থাকবে। এ্যাপটির ট্র্যাকিং সুবিধা ব্যবহার করে প্রিয়জনের গতিবিধি ও অবস্থানও জানা যাবে। বর্তমান সময়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সন্ত্রাসী ও জঙ্গী হামলার কারণে ডিএনসিসির নগর এ্যাপের এ ফিচারটি অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক ও প্রয়োজনীয়। পাশাপাশি এতে নিকটস্থ হাসপাতাল, পুলিশ স্টেশন, বাসস্টপ, ফায়ার সার্ভিস, এটিএম বুথসহ জরুরী সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা থাকবে। এ এ্যাপটির যোগাযোগ নেটওয়ার্কের এক প্রান্তে রয়েছেন সেবাপ্রত্যাশী জনসাধারণ, অপর প্রান্তে ডিএনসিসি ও পুলিশ বাহিনী। গুগল প্লে-স্টোর থেকে এ্যাপটি ডাউনলোড ও ইন্সটল করে রেজিস্ট্রেশন করার মাধ্যমে যে কোন নাগরিক পৃথিবীর যে কোন স্থানে বসে এটি ব্যবহার করতে পারবেন। অবশ্য এজন্য এ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমের স্মার্টফোন ও ইন্টারনেট সংযোগ থাকতে হবে। মেয়র বলেন, আমরা অনেক উন্নয়ন কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। আগামী দুই বছরের মধ্যে ঢাকা শহরকে বদলে দেয়া হবে। কেউ আগের ঢাকা আর পরিবর্তনের ঢাকা চিনতেই পারবে না। এখনই তো উত্তরায় কেউ গেলে পরিবর্তন দেখতে পাবেন। সেখানে ৫ লাখ গাছ লাগানো হয়েছে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আধুনিকায়ন করা হয়েছে। রাস্তা ঘাট উন্নত মানের করা হয়েছে। তিন মাস আগের উত্তরা আর তিন মাস পরের উত্তরা চিনতে অনেকেরই অসুবিধা হবে। প্রধানমন্ত্রী উন্নয়ন কাজে আমাদের বিপুল পরিমাণ তহবিল দিচ্ছেন। আশা করি আগামী দুই বছরের মধ্যে উন্নত ঢাকা হিসেবে গড়ে তুলতে পারব। জলাবদ্ধতা থাকবে না। কোন ময়লা আবর্জনা যেখানে সেখানে পড়ে থাকবে না। আমি আপনাদের কথা দিচ্ছি মুখে যা বলি কাজে তা প্রমাণ করি। ঢাকা শহর হবে পৃথিবীর উন্নত শহরগুলোর মধ্যে একটি। তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন আর কোন স্বপ্ন নয় তা এই এ্যাপসটি থেকেই বোঝা যায়। গত ৭ বছরে তথ্যপ্রযুক্তিতে দেশ অনেক এগিয়ে গেছে। আমরা গ্রামের মানুষকে তথ্যপ্রযুক্তির সেবা দিতে সাড়ে ৪ হাজার সেন্টার তৈরি করেছি। সেখান থেকে মানুষ সরকারের ৪৪ রকমের সেবা পাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের ভিশন ২০২১ বাস্তবায়নে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
×