ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মেনে নেননি ধর্মীয় রক্ষণশীলরা

পুরুষশাসিত আফগানিস্তানে একমাত্র নারী গবর্নর

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ৩ আগস্ট ২০১৬

পুরুষশাসিত আফগানিস্তানে একমাত্র নারী গবর্নর

পুরুষশাসিত আফগান সমাজে একমাত্র নারী প্রাদেশিক গবর্নর মাসুমা মুরাদি। আফগানিস্তানের প্রত্যন্ত দাইকুন্দি প্রদেশে তার শীর্ষপদে আরোহণ নারীর ক্ষমতায়নের পক্ষে এক অগ্রগতিই বটে। কারণ, দেশটিতে নারীর অবস্থান নিয়ে পুরুষতান্ত্রিক ধারার সঙ্গে প্রগতিশীল ভাবনার বিরোধ বিদ্যমান। মাত্র এক বছর আগে প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি মুরাদিকে গবর্নর পদে বিয়োগ দেন। কিন্তু ধর্মীয় রক্ষণশীল ও বিরোধীরা তার অপসারণ চেয়ে ক্রমশ আহ্বান জানাতে থাকায় তার দায়িত্ব পালন অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। মুরাদি (৩৭) তার অফিসে এএফপিকে বলেন, লোকজন নিজেদের সংস্কার মুক্ত দাবি করেন, কিন্তু তারা এ পদে কোন নারীকে সহ্য করতে পারেন না। প্রেসিডেন্ট গনি মধ্যআফগানিস্তানের দাইকুন্দি প্রদেশের গবর্নর পদের জন্য দুসন্তানের মা মুরাদিকে বেছে নেন। কিন্তু তিনি দ্ইাকুন্দি পৌঁছার আগেই বিক্ষোভ দেখা দেয়। তার বিরোধীরা তার শাসন করার অভিজ্ঞতার অভাব থাকার সমালোচনা করেন। তাদের প্রায় সবাই পুরুষ। মুরাদি তখন থেকে তার পদে বহাল রয়েছেন। কিন্তু তিনি যখন এএফপির প্রতিনিধিকে নিয়ে রাজধানী নিলিতে বের হন তখন ক্ষোভ অনুভব করা যায়। তার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় একজন ‘অকর্মন্য’ বলে চিৎকার করে ওঠেন। হয়ত তিনি কেবল নারীদেরই গবর্নর হবেন বলে আরেকজন মন্তব্য করেন। ব্যবসা প্রশাসনে ডিগ্রী থাকলেও মুরাদির কিন্তু রাজনৈতিক প্রভাব নেই। অথচ অন্যান্য প্রদেশের গবর্নররা যুদ্ধবাজ ও শক্তিশালী ব্যক্তি। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, তার প্রতি বিদেশের জন্য কেবল লিঙ্গবৈষম্যই নয়, রাজনৈতিক স্বার্থগত বিরোধও দায়ী। আফগানিস্তানের ৩৪টি প্রদেশের মধ্যে দাইকুন্দি শাসন করা অন্যতম কঠিন কাজ। প্রদেশটি ভারি তুষারপাতের ফলে বছরের কয়েক মাসই বহির্বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন থাকে। স্থানীয় অর্থনীতির প্রধান ভিত্তি বাদাম চাষ ও আবহাওয়ার খামখেয়ালের ওপর নির্ভর করে। আন্তর্জাতিক দাতাদের অর্থ সহায়তা হ্রাস পাওয়ায় মুরাদির সমস্যা আরও বেড়ে গেছে। প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর চার নারীকে মন্ত্রী নিয়োগ করেন। এটি তার জন্য রাজনৈতিক ঝুঁকিই বটে। গত বছর তিনি আফগানিস্তানের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একজন নারীকে সুপ্রীমকোর্টের বিচারক নিয়োগ করেন, কিন্তু পার্লামেন্ট তা প্রত্যাখ্যান করলে তিনি ঐ নারীর বদলে এক পুরুষকে নিয়োগ দেন। তিনি ধর্মীয় রক্ষণশীলদের প্রতিবাদ-বিক্ষোভের পর মধ্যাঞ্চলীয় গোর প্রদেশের গবর্নরকে অপসারণ করেন। তিনি ছিলেন আরেক নারী গবর্নর। মুরাদিকেও একই ভাগ্য বরণ করতে হতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। কিন্তু তিনি অন্তত এক ব্যক্তি তার স্বামীর অকুণ্ঠ সমর্থনের ওপর নির্ভর করতে পারেন। একদিন সন্ধ্যার শেষদিকে মুরাদি বাড়ি ফিরলে স্বামী খলিল হাশেম তার কক্ষে প্রবেশ করেন। এর পর তিনি এমন কথা বলেন যা কোন আফগান স্বামী কদাচিৎই তার স্ত্রীকে বলবেন: খাবার দেয়া হয়েছে। কিন্তু তিনি আবার বক্রোক্তিরও পাত্রে পরিণত হয়েছেন। তিনি বলেন, লোকজন আমাকে তার সেক্রেটারি তার ছেলে ধরনি বলে। কিন্তু আমি তাকে নিয়ে খুবই গর্বিত। -এএফপি
×