ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

যমুনায় বস্তাবন্দী লাশ

তৃতীয় বিয়ে করেও দ্বিতীয় স্বামীর সংসার করায় তিনজনকে হত্যা

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ৩ আগস্ট ২০১৬

তৃতীয় বিয়ে করেও দ্বিতীয় স্বামীর সংসার করায় তিনজনকে হত্যা

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর ॥ সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরে যমুনা নদী থেকে বস্তাবন্দী দুই নারী ও এক শিশুর মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনায় মঙ্গলবার তিনজনকে আটক করেছে গাজীপুরের শ্রীপুর মডেল থানা পুলিশ। এ সময় হত্যার ঘটনায় ব্যবহৃত একটি প্রাইভেটকার জব্দ করা হয়। পরকীয়ার জেরে গোপনে তৃতীয় বিয়ে করলেও দ্বিতীয় স্বামীর ঘর সংসার করায় এ খুনের ঘটনা ঘটে বলে গ্রেফতারকৃতরা পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে। গ্রেফতারকৃতরা হলো সিরাজগঞ্জের বেলকুচির চালা অফিসপাড়ার হাজী আব্দুল মান্নানের ছেলে এবং নিহত নাসরিনের তৃতীয় স্বামী আল আমীন (৩২), রায়গঞ্জের জাংগায়াদি গ্রামের মাহাবুবুল আলমের ছেলে নয়ন (২০) ও প্রাইভেটকার চালক জয়পুরহাটের পাঁচবিবির পবাহার লোহাপাড়া গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে রবিউল ইসলাম (২২)। গাজীপুরের পুলিশ সুপার হারুন-অর-রশিদ জানান, শ্রীপুরের টেংরা এলাকার করিম ম-লের মেয়ে নাসরিন আক্তারের সঙ্গে তার প্রথম স্বামীর ডিভোর্স হওয়ার পর নাসরিন একই এলাকার বাদল ম-লকে দ্বিতীয় বিয়ে করে। দ্বিতীয় বিয়ের পর নাসরিনের সঙ্গে স্থানীয় মাস্টারবাড়ি এলাকার রিজভী মিম মিশি বস্ত্রালয়ের ম্যানেজার আল আমিনের পরকীয়া শুরু হয়। দ্বিতীয় স্বামীকে ডিভোর্স না দিয়েই নাসরিন ভালবেসে ২০০৯ সালে গোপনে আল আমিনকে তৃতীয় বিয়ে করে। কিন্তু এ বিয়ের পরও নাসরিন দ্বিতীয় স্বামীর ঘর সংসার করতে থাকলে তার ওপর তৃতীয় স্বামী ক্ষুব্ধ হয়। শনিবার বেলা ১২টার দিকে ডাক্তার দেখানোর কথা বলে নাসরিন আক্তার (৪০) তার তৃতীয় স্বামী আল আমিনের সঙ্গে দেখা করতে বাড়ি থেকে বের হয়। নাসরিন তার ফুপু মেহেরুন নেছা (৫২) ও মামাত বোন শিশু জাইমাকে (৪) সঙ্গে নিয়ে গরগরিয়া মাস্টারবাড়ি এলাকায় আল আমিনের দোকানে যায়। সেখানে নাসরিনকে দ্বিতীয় স্বামীর সংসার ছেড়ে দিতে বলে আল আমিন। নাসরিন এতে রাজি না হলে দু’জনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে নাসরিনকে কৌশলে দোকানের পাশের একটি গোডাউনে ডেকে নিয়ে আলামিন দোকানের কর্মচারী নয়ন ও দোকান মালিকের গাড়িচালক রবিউল মিলে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরে ঘটনা ফাঁস হওয়ার আশঙ্কায় তারা নাসরিনের ফুপু মেহেরুন এবং মামাত বোন জাইমাকেও শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। হত্যার পর তিনজনের মৃতদেহ দুটি বস্তায় বন্দী করে ঘাতকরা। পরে আল আমিন সিরাজগঞ্জের বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি দেখার জন্য গ্রামের বাড়ি যাওয়ার কথা বলে দোকানের মালিকের কাছ থেকে প্রাইভেটকারটি চেয়ে নেয়। ওইদিন রাতেই বস্তাবন্দী লাশ তিনটি প্রাইভেটকারে উঠিয়ে তারা এনায়েতপুর থানার খাজা ইউনূস আলী মেডিক্যাল কলেজের পাশে যমুনা নদীতে ফেলে রেখে রাতেই গাজীপুরের শ্রীপুরে ফিরে আসে। এ ঘটনার পর সোমবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে এনায়েতপুরে যমুনা নদী থেকে বস্তাবন্দী ওই তিনজনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। লাশ উদ্ধারের খবর পেয়ে স্বজনরা সেখানে গিয়ে নিহতদের লাশ শনাক্ত করে। নিহতরা হলো শ্রীপুরের টেংরা গ্রামের ব্যবসায়ী বাদল ম-লের স্ত্রী নাসরিন আক্তার ম-ল (৪০), হাদিকুলের স্ত্রী মেহেরুন নেছা (৫২) ও নাসরিনের মামাত বোন ও উজিলাব গ্রামের জাহাঙ্গীরের মেয়ে জাইমা (৪)। এদিকে ট্রিপল মার্ডারের এ ঘটনায় জড়িত থাকায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শ্রীপুর মডেল থানা পুলিশ মঙ্গলবার অভিযান চালিয়ে শ্রীপুরের গরগরিয়া মাস্টারবাড়ি এলাকা থেকে মূল ঘাতক আলামিন, তার সহযোগী নয়ন ও গাড়িচালক রবিউলকে আটক করে এবং হত্যার ঘটনায় ব্যবহৃত গাড়িটি জব্দ করে। জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছে।
×