ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাড্ডায় কুড়িয়ে পাওয়া শিশুটির ঠাঁই হলো শিশুমণি নিবাসে

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ৩ আগস্ট ২০১৬

বাড্ডায় কুড়িয়ে পাওয়া শিশুটির ঠাঁই হলো শিশুমণি নিবাসে

নিয়াজ আহমেদ লাবু ॥ রাজধানীর বাড্ডায় ডাস্টবিনে কুড়িয়ে পাওয়া পলিথিনে মোড়ানো ফুটফুটে নবজাতক সেই শিশুটির নাম দেয়া হয়েছে আয়ান আফরাজ। নতুন ঠিকানাও পেয়েছে সে। অথচ বাবা-মা তাকে ডাস্টবিনে ফেলে দিয়েছিল। সেখান থেকে তার ঠাঁই হয়েছিল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নবজাতক ওয়ার্ডে। দীর্ঘ ২৩ দিন চিকিৎসকদের অক্লান্ত পরিশ্রমে অসুস্থ নবজাতক এখন সম্পূর্ণ সুস্থ। এতদিনে সে সবার মায়ার বন্ধনে জড়িয়ে পড়েছিল। আর মঙ্গলবার যখন তাকে নতুন ঠিকানা সমাজসেবা অধিদফতরের শিশুমনি নিবাস কেন্দ্রে হস্তান্তর করা হয় তখন চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীরা কান্না ধরে রাখতে পারেননি। মঙ্গলবার ঢাকা মেডিক্যালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মিজানুর রহমান হাসপাতাল থেকে শিশুটির ছাড়পত্রসহ তাকে আজিমপুর শিশুমনি নিবাস কেন্দ্রের কর্মকর্তাদের হাতে তুলে দেন। উল্লেখ্য, ১০ জুলাই বাড্ডার একটি ডাস্টবিন থেকে পলিথিনে মোড়ানো এ শিশুকে হাসপাতালে নিয়ে আসে বাড্ডা থানা পুলিশ। জ্বর এবং নানা জটিল ইনফেকশনে আক্রান্ত শিশুটি গুরুতর অসুস্থ থাকায় নবজাতক কেয়ার ইউনিটে রাখা হয়। এরপর শিশুটির চিকিৎসার জন্য নবজাতক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মনীষা ব্যানার্জী, শিশু বিভাগের ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় প্রধান সাঈদা আনোয়ার এবং নবজাতক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ তোফাজ্জল হোসেন খানকে নিয়ে একটি মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়। এরপর শিশুটিকে সুস্থ করার জন্য চলে আপ্রাণ চেষ্টা। পাশাপাশি সেখানে চিকিৎসকরা শিশুটির নামও রাখেন আয়ান আফরাজ। ঢামেক হাসপাতালের নবজাতক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মনীষা ব্যানার্জী জানান, গত কয়েকদিন ধরেই সে মুখে খাবার নিচ্ছিল। শিশুটি সুস্থ হয়ে উঠলে তাকে মঙ্গলবার শিশুনিবাস কেন্দ্রের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এর আগে এদিন সকালে আয়ানকে হস্তান্তর অনুষ্ঠানে অধ্যাপক মনীষা ব্যানার্জী বলেন, শিশুটি দীর্ঘ ২৩ দিন আমাদের কাছে ছিল। সে খুবই অসুস্থ ছিল। তাকে সুস্থ করে তুলতে আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করেছি। একটি টিম হিসেবে সবাই মিলে আমরা কাজ করেছি। তিনি বলেন, আমাদের খুব ভাল লাগছে যে, আজ একটি সুস্থ শিশু হিসেবে তাকে সমাজসেবা অধিদফতরের শিশুনিবাসে হস্তান্তর করতে পারছি। তিনি আরও বলেন, অনেকেই মন খারাপ করছেন। কিন্তু তাকে তো আমরা রেখে দিতে পারতাম না। বরং তাকে সুস্থ করতে পেরেছি। একটি নির্ভরযোগ্য স্থানে সে মাতৃস্নেহে বড় হবে। এটাই তো আমাদের চাওয়া ছিল। সেখান থেকে সে আরও নির্দিষ্ট একটি ঠিকানা পাবে। সেটাই এখন আমাদের কামনা। অনুষ্ঠানে ঢাকা মেডিক্যালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, এক সময় শিশুটির বেঁচে থাকার আশা আমরা ছেড়েই দিয়েছিলাম। শিশুটির জ্বর আর রক্তে ইনফেকশন ছিল। ইনফেকশনের মাত্রা এতটাই বেশি ছিল যে, তাকে দিনে তিনটি করেও এ্যান্টিবায়োটিক দিতে হয়েছে। সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় আর চিকিৎসকসহ সবার আন্তরিক প্রচেষ্টায় শিশুটি সুস্থ হয়ে উঠেছে। তিনি বলেন, একটি মানবপ্রাণ রক্ষা করা গেল। এখন শিশুটিকে শিশুমনি নিবাসে হস্তান্তর করা হচ্ছে। ব্রিগেডিয়ার মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, অনেক মানুষ শিশুটিকে দত্তক নেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, অধ্যাপক এমনকি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বও রয়েছেন এ তালিকায়। কিন্তু আমরা হাসপাতাল থেকে সরাসরি দত্তক দিতে পারি না। কেউ যদি দত্তক নিতে চান তাহলে তাকে উপযুক্ত আইনী প্রক্রিয়ায় মাধ্যমে গিয়ে দত্তক নিতে হবে। মিজানুর রহমান বলেন, শিশুটির নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয় জড়িত সে কোথায় দত্তক যাচ্ছে তার সঙ্গে। এসব কিছুর সঙ্গে আন্ডারটেকিং দিতে হয় আদালতের মাধ্যমে। বন্ড দিতে হয় দায়িত্ব পালন করার বিষয়ে। সমাজসেবা অধিদফতরের অধীনে থাকা শিশুমনি নিবাসের উপ-তত্ত্বাবধায়ক বিলকিস বেগম বলেন, আমরা আয়ানের মতো এমন অনেক শিশুকে শিশুমনি নিবাসে নিয়ে রেখেছি। তাদের মায়ের মতো আন্তরিকতা দিয়ে বড় করার চেষ্টা করি। আয়ানও তার ব্যতিক্রম হবে না। যারা এ শিশুটিকে দত্তক নিতে চান তাদের উদ্দেশে বিলকিস বেগম বলেন, দত্তক নেয়ার ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। কেউ ইচ্ছা করলেই শিশু দত্তক নিতে পারেন না। পারিবারিক আদালতে গার্ডিয়ানশিপ নিতে আগ্রহীকে মামলা করতে হবে। মামলার রায় হলে তিনি শিশুনিবাসে আসবেন কপি নিয়ে। আমরা তখন অধিদফতরের পরিচালকের কাছে আবেদন করলে তিনি বিষয়টির মীমাংসা করবেন। তিনি যদি অনুমোদন দেন তাহলে শিশুটিকে দত্তক নেয়া যাবে। আর এ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই অনেক পরিবার অনেক শিশুকে দত্তক নিয়ে থাকে। মামলায় শিশুকে বড় করার আর্থসামাজিক পরিবেশ, ক্ষমতা, পারিবারিক পরিবেশসহ অনেক কিছু দেখেই দত্তক নেয়ার অনুমতি দেয়া হয়। যারা দত্তক নিতে চান তারা এ প্রক্রিয়ায় মধ্য দিয়েই যান বলে জানান বিলকিস বেগম। আয়ানকে হস্তান্তর অনুষ্ঠানে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক অধ্যাপক খাজা আবদুর গফুর, নবজাতক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তোফাজ্জল হোসেন খান, ঢাকা মেডিক্যালের রোগী কল্যাণ বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
×