ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আসামি ১৫০ জন, ছয়জন গেস্খফতার

কুমিল্লা ভার্সিটিতে ছাত্রলীগ নেতা হত্যা মামলা ডিবিতে হস্তান্তর

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ৩ আগস্ট ২০১৬

কুমিল্লা ভার্সিটিতে ছাত্রলীগ নেতা হত্যা মামলা ডিবিতে হস্তান্তর

নিজস্ব সংবাদদাতা, কুমিল্লা, ২ আগস্ট ॥ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে মার্কেটিং বিভাগের সপ্তম ব্যাচের শিক্ষার্থী খালিদ সাইফুল্লাহ নিহতের ঘটনায় সদর দক্ষিণ থানায় সোমবার রাতে দায়েরকৃত মামলাটি মঙ্গলবার সকালে জেলা গোয়েন্দা শাখায় (ডিবি) হস্তান্তর করা হয়েছে। এ মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬ ছাত্রকে আটক করা হয়। সোমবার রাতে জেলার সদর দক্ষিণ থানায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তা সাদেক হোসেন মজুমদার বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ১৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেন। মামলাটি তদন্ত করছেন ডিবি’র এসআই শাহ কামাল আকন্দ পিপিএম। এদিকে মেধাবী সন্তানকে হারিয়ে নির্বাক তার পরিবারের সদস্যরা। তারা হত্যাকা-ে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। এ ঘটনার পর সোমবার পুলিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩টি হলে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র-শস্ত্র উদ্ধার করে এবং জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ ছাত্রসহ ১২জনকে জেলা গোয়েন্দা শাখায় (ডিবি) নিয়ে আসে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে মঙ্গলবার সকালে ৬জনকে গ্রেফতার দেখিয়ে বাকি ৬জনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. কাজী কামাল উদ্দিন ও প্রক্টর আইনুল হকের উপস্থিতিতে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়। আটককৃতরা হচ্ছে- সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার সাজেদ বাগিরঘাট গ্রামের আবদুল বাতেনের পুত্র গণিত বিভাগের ৪র্থ বর্ষের ছাত্র মোঃ রেজাউল ইসলাম (২৩), কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার বিষ্ণপুর নোয়াপাড়া গ্রামের জহিরুল আলমের পুত্র ইংরেজী বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র জাহিদুল আলম (২৭), কক্সবাজার জেলার কুতুবদিয়ার লেশখালী গ্রামে আবদুস সাত্তারের পুত্র লোকপ্রশাসন বিভাগ মাস্টার্স শেষ বর্ষের ছাত্র আবুবকর ছিদ্দিক (২৬), চট্টগ্রামের মীরশ্বরাই উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের মৃত বিমল নাথের পুত্র বিবিএ শেষ বর্ষের ছাত্র সুদীপ্ত নাথ (২৪), কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার চান্দিশকরা (মধ্যপাড়া) গ্রামের পরশ চন্দ্র দেবনাথের পুত্র বিবিএ ৩য় বর্ষের ছাত্র রুপম চন্দ্র দেবনাথ (২৩), মাগুরা সদর উপজেলার সাতদোহাপাড়া গ্রামের কার্তিক চন্দ্র বিশ্বাসের পুত্র নৃ-বিজ্ঞান ৩য় বর্ষের ছাত্র সজন বরণ বিশ্বাস (২১)। তাদের মধ্যে সজন চন্দ্র বিশ্বাস ও রুপম চন্দ্র দেবনাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি কাজী নজরুল ইসলাম হলের আবাসিক ছাত্র এবং অন্যরা ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের আবাসিক ছাত্র। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি’র এসআই শাহ কামাল আকন্দ বলেন, উক্ত ৬জনকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। ওই ছাত্র হত্যায় কারও জড়িত থাকার প্রমাণ পেলে তাদের গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হবে। তিনি আরও বলেন, ঘটনার সঙ্গে যারাই জড়িত রয়েছে তাদের সবাই গ্রেফতার হবে, কাউকে হয়রানিমূলকভাবে গ্রেফতার করা হবে না। খালিদকে হারিয়ে নির্বাক পরিবার : খালিদকে হারিয়ে তার বাবা-মা, ভাই-বোন ও আত্মীয়স্বজনসহ সহপাঠীরা শোকে নির্বাক হয়ে পড়েছেন। তার অনাকাক্সিক্ষত ও অকাল এ মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। ৫ বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে খালিদ ছিল তৃতীয়। ২০০৯ সালে দাউদকান্দি আদর্শ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি এবং ২০১১ সালে ঢাকা কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এইচএসসি পাস করে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিল খালিদ। তার অপর ভাই এবং দুই বোন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত। তার বাবা দাউদকান্দি আদর্শ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ও মডেল থানা জামে মসজিদের ঈমাম। তিনি ছেলে হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও বিচার দাবি করে বলেন, আমার খালিদকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল, অনেক কষ্ট করে তার বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচ চালাতে হতো, বিনিময়ে আজ তার লাশ পেলাম। ঘাতকের বুলেট আমার সব স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার করে দিয়েছে। উল্লেখ্য, শোকাবহ আগস্টের প্রথম প্রহরে রবিবার দিবাগত রাতে কুবি’র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আবাসিক হলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে মোমবাতি প্রজ্বলনের সময় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে কুবির শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত নেতা ইলিয়াস হোসেন সবুজ গ্রুপের সাথে কুবি ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল হাসান আলিফ গ্রুপের কর্মীদের সংঘর্ষের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে সবুজ গ্রুপের ছাত্রলীগ নেতা খালিদ সাইফুল্লাহ নিহত হন।
×