ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

এমাজউদ্দীন বললেন জোটে ‘ওইভাবে’ প্রয়োজন নেই জামায়াতের

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ৩ আগস্ট ২০১৬

এমাজউদ্দীন বললেন জোটে ‘ওইভাবে’ প্রয়োজন নেই জামায়াতের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ২০ দলীয় জোটে জামায়াতের ‘ওই ভাবে’ আর প্রয়োজন নেই বলে মন্তব্য করেছেন অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ। বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবী ও চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার অন্যতম পরামর্শক মঙ্গলবার এক আলোচনা সভায় বলেছেন, দেশের যে অবস্থা, তাতে জাতীয় ঐক্য করতে একটি রাজনৈতিক দলই বড় প্রতিবন্ধকতা বলে মনে হয়। এদিকে এ বক্তব্য দিয়ে জামায়াতের রোষানলে পড়েছেন এমাজউদ্দীন। অবিলম্বে বক্তব্য প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে জামায়াত নেতারা বলেছেন, ২০ দলীয় জোট এমাজউদ্দীন সাহেবকে জোটের কোন মুখপাত্র হিসেবে নিয়োগ দেয়নি। জোটের পক্ষ থেকে কোন কথা বলার অধিকার তার নেই। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় ২০ দলীয় জোটের জন্য জামায়াতকে একটি ‘দায়’ হিসেবে বর্ণনা করে এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনে এ বিষয়ে সরকার ও জামায়াতের বর্তমান নেতৃত্ব ‘চিন্তাভাবনা’ করতে পারে। দেশের যে অবস্থা তাতে জাতীয় ঐক্য করতে একটি রাজনৈতিক দলই বড় প্রতিবন্ধকতা বলে মনে হয়। জনগণের যে বিরোধী দল সে দলের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ২০ দলের মধ্যে এ দলটিকে আর ওই ভাবে রাখার কোন প্রয়োজন নেই। গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার পর জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানায় বিএনপি। এর উত্তরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়, জামায়াত-বিএনপির সঙ্গে ঐক্যের কোন প্রয়োজন নেই, জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য হয়েই আছে। এরপর বিএনপি নিজেরাই জঙ্গীবাদবিরোধী ঐক্য গড়ার ঘোষণা দিয়ে সরকারবিরোধী নতুন রাজনৈতিক জোট গড়ার প্রয়াস নেয়। তবে অন্য দলগুলোকে কাছে টানতে জামায়াতে ইসলামীসহ পুরনো জোট শরিক ইসলামী দলগুলোকে ওই উদ্যোগ থেকে দূরে রাখার ইঙ্গিত পাওয়া যায় নেতাদের কথায়। এরপর সম্প্রতি ব্যারিস্টার রফিক-উল হক ও জাফরুল্লাহ চৌধুরীও জামায়াতকে বাদ দিয়ে অন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে ‘জাতীয় ঐক্যে’ শরিক করার উদ্যোগ নিতে বিএনপিকে পরামর্শ দেন। এ অববস্থায় মঙ্গলবার অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, ইট হ্যাজ বিকাম এ লায়বিলিটি (দায়)। এটা বর্তমানে এ্যাসেট না। সুতরাং এদিক থেকে যদি আমরা দেখি, তাহলে প্রতিবন্ধকতা নেই। বর্তমানে জামায়াতের অধিকাংশ নেতার জন্ম একাত্তরের পর জানিয়ে তিনি বলেন, তাদেরও চিন্তাভাবনা করা উচিত, জাতীয় ঐক্য যদি তাদের কারণে ব্যার্থ হয়, সেটা তারাই বা চাইবেন কেন? এদিকে বক্তব্য দিয়ে জামায়াতের তোপের মুখে পড়েছেন এমাজউদ্দীন। বক্তব্যের পরপরই জামায়াতের পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ডাঃ সৈয়দ আবদুল্লাহ মোঃ তাহের। বক্তব্য প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে জামায়াত নেতা বলেছেন, অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ জামায়াতে ইসলামীকে উদ্দেশ্য করে যে বক্তব্য রেখেছেন তাতে গভীর বিস্ময়, ক্ষোভ ও নিন্দা প্রকাশ করে বক্তব্য প্রত্যাহার করার আহ্বান জানাচ্ছি। তিনি বলেন, জাতির এক ঐতিহাসিক প্রয়োজনে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, ধর্মীয় মূল্যবোধ, দেশের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষার অঙ্গীকার নিয়ে ২০০০ সালে চারদলীয় জোট গঠিত হয়েছিল। তারই ধারাবাহিকতায় বর্তমান স্বৈরশাসনের যুগে উক্ত জোট ২০ দলীয় জোটে রূপান্তরিত হয়। যখন ২০ দলের ঐক্যকে আরও সুদৃঢ় করা প্রয়োজন, যখন জাতির প্রতিটি বিবেকবান ও দেশপ্রেমিক নাগরিক হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করছেন- ঠিক এ সময়ে এমাজউদ্দীন সাহেবরা কোন্ উদ্দেশ্যে কার এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য এ ধরনের আপত্তিকর ও বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য দিয়ে চলেছেন তা এক বিরাট প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। আমরা স্পষ্টভাষায় বলতে চাই, ২০ দলীয় জোট এমাজউদ্দীন সাহেবকে জোটের কোন মুখপাত্র হিসেবে নিয়োগ দেয়নি। ২০ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে কোন কথা বলার অধিকার তার নেই। তিনি সম্পূর্ণ এখতিয়ারবহির্ভূত ও অযাচিত আচরণ করছেন। এর জন্য অবশ্যই তাকে তার বক্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে। অন্যথায় ধরে নিতে বাধ্য হব তিনি বিশেষ গোষ্ঠীর এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার জন্য আলো ও অন্ধকারের খেলায় লিপ্ত রয়েছেন। ভবিষ্যতে এ ধরনের অযাচিত, অন্যায্য ও এখতিয়ারবহির্ভূত বক্তব্য প্রদান করা থেকে বিরত থাকার জন্য আমরা অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি এবং এখতিয়ারবহির্ভূত যে বক্তব্য তিনি প্রদান করেছেন তা প্রত্যাহার করে নেয়ার জন্য আমরা আবারও তার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। এদিকে জামায়াতের আপত্তির পর বন্তব্যকে কিছু গণমাধ্যমে ‘বিকৃতভাবে’ পরিবেশন করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ। জামায়াতকে ‘বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন’- এমন কথা বলেননি বলে দাবি করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এ উপাচার্য। তিনি বলেন, আমি এ ধরনের কথা বলিনি। আমার বক্তব্যকে বিকৃত করে প্রচার করা হচ্ছে। এতে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে। আমি বলেছি, সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ দমনে দলমত নির্বিশেষে জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজন। এখানে জামায়াত কোন বিষয় নয়।
×