ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

শোকের মাস

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ৩ আগস্ট ২০১৬

শোকের মাস

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ ‘নরহত্যা মহাপাপ, তার চেয়ে পাপ আরও বড়ো/ করে যদি যারা তাঁর পুত্রসম বিশ্বাসভাজন/ জাতির জনক যিনি অতর্কিতে তাঁরেই নিধন/ নিধন সবংশে হলে সেই পাপ আরও গুরুতর/...বাংলাদেশ! বাংলাদেশ! থেকো নাকো নীরব দর্শক/ ধিক্কারে মুখর হও/ হাত ধুয়ে এড়াও নরক।’ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর ট্র্যাজিক মৃত্যুর অব্যবহিত পরে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মরণে’ শিরোনামে এই কবিতাটি লিখেছিলেন অবিভক্ত বাংলার স্বনামধন্য কবি ও লেখক প্রয়াত অন্নদা শঙ্কর রায়। বাঙালী জাতির বেদনাবিধূর শোকের মাস আগস্টের আজ তৃতীয় দিন। সর্বত্রই শোকের আবহ। রাজধানীসহ সারাদেশেই বিশাল বিশাল কালো পতাকা, ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টার টানানো হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা জানিয়ে তাতে নানা সেøাগান-কবিতা শোভা পাচ্ছে। শোকের মাসে বাঙালী জাতি এবার পলাতক খুনীদের ফিরিয়ে এনে ফাঁসি, খুনীদের দোসর-মদদদাতাদের বিচার আর জঙ্গী-সন্ত্রাসীদের নেপথ্যের গডফাদারদের বিচারের দাবিতে সোচ্চার। আগস্ট বাঙালীর জীবনে শুধু শোকের নয়, একটি অভিশপ্ত মাসও বটে। এ মাসেই ঘটেছিল ইতিহাসে সবচেয়ে বড় কলঙ্কজনক ঘটনা। ঘাতকদের হাতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হন। বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। দেশে থাকলে তাদেরও জীবন দিতে হতো নরহন্তারক কাপুরুষদের হাতে। সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর আজও হত্যাকারী ও তাদের দোসরদের ষড়যন্ত্র থেমে নেই। ১৯৮১ সালের মে মাসে দেশে ফিরে শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া দল আওয়ামী লীগের হাল ধরেন। কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীরা তাঁর পিছু ছাড়ে না। বারবার তাঁকে হত্যার চেষ্টা চলতে থাকে। চলে একের পর এক নগ্ন হামলা। সর্বশেষ ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউয়ে শেখ হাসিনার এক সমাবেশে চলে আরেকটি নৃশংস হত্যাযজ্ঞ। মূলত শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যেই ঘাতকরা ওই সমাবেশে যুদ্ধে ব্যবহার্য মারণাস্ত্র গ্রেনেড হামলা চালায়। কিন্তু গ্রেনেড লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ায় তিনি আবারও মৃত্যুজাল ছিন্ন করে প্রাণে রক্ষা পান। প্রাণে বেঁচে যান আওয়ামী লীগ অধিকাংশ শীর্ষ জাতীয় নেতারাও। তবে নিক্ষিপ্ত গ্রেনেড প্রাণসংহার করে আওয়ামী লীগ নেত্রী বেগম আইভি রহমানসহ ২৪ নেতাকর্মীর। তাই বর্ষ পরিক্রমায় আগস্ট এলেই সেই রক্তাক্ত স্মৃতিগুলো দেশবাসীর মানসপটে ভেসে ওঠে। নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শোকাতুর মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বলীয়ান বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন শোকের নানা কর্মসূচীর মাধ্যমে স্মরণ করছেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। ’৭৫-এ ইতিহাসের নিষ্ঠুর ও জঘন্যতম এই হত্যাযজ্ঞের পর থেকে বাঙালী ১৫ আগস্টকে জাতীয় শোক দিবস এবং পুরো মাসকে শোকের মাস হিসেবে পালন করে আসছে।
×