ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বৈদেশিক সহায়তা প্রতিশ্রুতি, অর্থ ছাড় দুটোই বেড়েছে

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ৩ আগস্ট ২০১৬

বৈদেশিক সহায়তা প্রতিশ্রুতি, অর্থ ছাড় দুটোই বেড়েছে

আনোয়ার রোজেন ॥ সদ্যসমাপ্ত অর্থবছরে (২০১৫-২০১৬) বৈদেশিক সহায়তা প্রতিশ্রুতি ও অর্থছাড় দুটোই বেড়েছে। এ সময়ে বৈদেশিক সহায়তা প্রতিশ্রুতি আগের অর্থবছরের (২০১৪-’১৫) তুলনায় বেড়েছে ১৭৪ কোটি মার্কিন ডলার। একই সময়ে অর্থছাড়ের পরিমাণ বেড়েছে ৪০ কোটি মার্কিন ডলার, যা সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ। সমাপ্ত অর্থবছরে মোট বৈদেশিক অর্থছাড়ের পরিমাণ ৩৪৪ কোটি মার্কিন ডলার, যা দেশের একক অর্থবছরের ইতিহাসেই সর্বোচ্চ। মঙ্গলবার অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সামগ্রিকভাবে এটি একটি ভাল লক্ষণ। এর মানে-বিদেশী যারা সহায়তাকারী আছেন, তারা বাংলাদেশের উন্নয়নে আরও বেশি করে অংশগ্রহণ করতে চান। তবে গুলশান ও শোলাকিয়ার ঘটনার পর বিদেশী সংস্থার নীতি নির্ধারকরা ধীরগতিতে চলছেন। নিরাপত্তার বিষয়ে বিদেশীদের হারিয়ে ফেলা আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে পারলে চলতি অর্থবছরেও রেকর্ড পরিমাণ বৈদেশিক অর্থছাড় করা সম্ভব হবে। জানা গেছে, গত অর্থবছরে মোট বৈদেশিক প্রতিশ্রুতি এসেছে ৬৯৯ কোটি ৭৯ লাখ মার্কিন ডলার। এর আগের অর্থবছর (২০১৪-’১৫) মোট প্রতিশ্রুতি এসেছিল ৫২৫ কোটি ৮৪ লাখ মার্কিন ডলার। অর্থাৎ সমাপ্ত অর্থবছরে বৈদেশিক প্রতিশ্রুতির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭৩ কোটি ৯৫ লাখ মার্কিন ডলার। গত অর্থবছের প্রতিশ্রুত অর্থের মধ্যে ঋণের পরিমাণ ছিল ৬৫০ কোটি ৩১ লাখ এবং অনুদান ৪৯ কোটি ৪৮ লাখ মার্কিন ডলার। ২০১৪-’১৫ অর্থবছরে প্রতিশ্রুত অর্থের মধ্যে ঋণ ছিল ৪৭৬ কোটি ৪৮ লাখ এবং অনুদান ৪৯ কোটি ৩৬ লাখ মার্কিন ডলার। অন্যদিকে গত অর্থবছরে মোট বৈদেশিক অর্থছাড় হয়েছে ৩৪৪ কোটি ৯৯ লাখ মার্কিন ডলার। এর আগের অর্থবছরে (২০১৪-’১৫) ছাড় হয়েছিল ৩০৪ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলার। অর্থাৎ একবছরে অর্থছাড়ের পরিমাণ বেড়েছে ৪০ কোটি ৬৯ লাখ মার্কিন ডলার। বৈদেশিক অর্থছাড়ের ক্ষেত্রে এটিকে সর্বোচ্চ উল্লেখ করে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) জ্যেষ্ঠ গবেষক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, প্রতিশ্রুতি ও এর বিপরীতে অর্থছাড়ের যে পরিমাণ দেখা যাচ্ছে, সেটা আশাব্যঞ্জক। আমাদের বাজেটের আকার উত্তরোত্তর বাড়ছে এবং অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সেটা পুরোটা মেটানো সম্ভব নয়। তাই বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বৈদেশিক সাহায্যের প্রতিশ্রুতি ও সে অনুযায়ী অর্থছাড়- দুটোই গুরুত্বপূর্ণ। এটা অবশ্যই ইতিবাচক ঘটনা। তিনি বলেন, গত অর্থবছরের শুরুতে বৈদেশিক সাহায্যের টার্গেট করা হয়েছিল ৪৯০ কোটি মার্কিন ডলার। এর বিপরীতে পাওয়া গেছে ৩৪৪ কোটি মার্কিন ডলার। সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে এটিই সর্বোচ্চ। কিন্তু সার্বিক লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় আমরা এখনও বেশ পিছিয়ে আছি। জানা গেছে, গত অর্থবছরে প্রতিশ্রুত সহায়তার মধ্যে ঋণ ছিল ২৯০ কোটি ৩৬ লাখ এবং অনুদান ৫ কোটি ৬২ লাখ মার্কিন ডলার। এর আগের বছরে ঋণ ছিল ২৪৭ কোটি ২২ লাখ এবং অনুদান ৫৭ কোটি ৮ লাখ মার্কিন ডলার। সরকার চলতি অর্থবছরে (২০১৬-২০১৭) বৈদেশিক সহায়তা আনার লক্ষ্যমাত্রা ৫৭০ কোটি মার্কিন ডলার আনার টার্গেট ঠিক করেছে। কিন্তু গুলশান ও শোলাকিয়ার ঘটনার পর জাপান সরকার ও দেশটির উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জাইকার বাংলাদেশে কার্যক্রম অনেকটা স্থবির হয়ে পড়েছে। এটিকে অবশ্য ‘সাময়িক অবস্থা’ বলে মনে করছেন খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম হোসেন। তিনি বলেন, মূলত জঙ্গী হামলার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত হচ্ছে ব্যক্তি নিরাপত্তার বিষয়টা। বিদেশীদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তার সংশ্লেষ আছে- এ ধরনের প্রকল্পগুলোতে কিছুটা টেনশন আছে। অন্য প্রকল্পের ক্ষেত্রে এটা না হওয়ারই কথা। বিদেশীরা যুক্ত আছেন এবং বিদেশী সহায়তাও আছে এমন ক্ষেত্রে অর্থছাড়ে কিছুটা দেরি হতে পারে। কিন্তু প্রকল্প স্থগিত হওয়া কিংবা অর্থছাড় বন্ধ করে দেয়ার কোন আশঙ্কা নেই। যদি বর্তমান পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি ঘটে, তাহলে সেই আশঙ্কাটও থাকবে না। সরকার বিদেশীদের নিরাপত্তায় যথাযথ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারলে চলতি অর্থবছরে রেকর্ড পরিমাণ বৈদেশিক অর্থছাড়ের আশা প্রকাশ করেন তিনি। বিদেশী প্রতিশ্রুতি ও অর্থছাড় প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক অর্থনীতিবিদ ড. মোস্তফা কে মুজেরি জনকণ্ঠকে বলেন, পাইপলাইনে প্রচুর বিদেশী অর্থ পড়ে আছে, যা ছাড় করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে এর মধ্যে রেকর্ড পরিমাণ অর্থছাড়ের ঘটনা নিঃসন্দেহে ভাল লক্ষণ। এর মানে-বিদেশী যারা সহয়াতাকারী, তারা বাংলাদেশের উন্নয়নে আরও বেশি অংশগ্রহণ করতে চান। গোলাম মোয়াজ্জেমের মতো তিনিও চলমান স্থবিরতাকে পরিস্থিতির ‘সাময়িক প্রভাব’ বলে মনে করেন। মোস্তফা কে মুজেরি বলেন, আমরা জাপান ও জাইকার কাছ থেকে প্রচুর সহায়তা পাই, বিশেষ করে অবকাঠামো খাতে। কিন্তু যেটা দেখা যাচ্ছে, জাইকা এখন একটু ধীরগতিতে চলছে। সহায়তার ব্যাপারে তারা এখন সিদ্ধান্ত নিতে সময় নিচ্ছে। এটা স্বল্পকালীন হতে পারে। বড় ধরনের দুটি জঙ্গী হামলার পর স্বাভাবিকভাবে তারা গোটা পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে দেখবেন। এই অর্থনীতিবিদ মনে করেন, নিরাপত্তার বিষয়ে দ্রুততার সঙ্গে বিদেশীদের কনফিডেন্স ফিরিয়ে আনা উচিত। আর বিদেশী সাহায্যের ক্ষেত্রে এখন যে ঘাটতি চলছে, সেটা পূরণ অসম্ভব কিছু নয়। এজন্য বাড়তি প্রচেষ্টা চালাতে হবে। তিনি বলেন, আমরা একটু পিছিয়ে গেছি। পরিস্থিতির উন্নতি হলে বছর শেষে দেখা যাবে যে, টার্গেট অনেকটাই অর্জন করা গেছে।
×