ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

১৮ স্থানে নদীর পানি এখনও বিপদসীমার ওপর দিয়ে বইছে

উত্তরাঞ্চলে বন্যার পানি কমলেও মধ্যাঞ্চল নতুন করে প্লাবিত

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ৩ আগস্ট ২০১৬

উত্তরাঞ্চলে বন্যার পানি কমলেও মধ্যাঞ্চল নতুন করে প্লাবিত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ উত্তরাঞ্চলের নদ-নদী থেকে বন্যার পানি নামতে শুরু করলেও এখনও অনেক স্থানে বিপদসীমার ওপর দিয়েই প্রবাহিত হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে মঙ্গলবারও যমুনা ব্রহ্মপুত্র, আত্রাই, পদ্মা ও তিতাস নদীর পানি বিভিন্ন স্থানে কমলেও এখনও ১৮টি স্থানে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে বানভাসি মানুষ এখনও চরম দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছে। পাশাপাশি গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে মধ্যাঞ্চলে বিশেষ করে মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, মাদারীপুরের নিম্নাঞ্চল নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। বন্যার কারণে ইতোমধ্যে দেশে বিভিন্ন জেলায় কয়েকশ’ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ অবকাঠামোর যেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এসব এলাকায় ক্লাস ও পরীক্ষায় স্থগিত রয়েছে। ক্ষতি হয়েছে আমন ও সবজির। পানিবন্দী অনেকেই ত্রাণ না পাওয়ার অভিযোগ করেছে। যদিও ত্রাণ বিতরণকালে মঙ্গলবার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জেল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, বন্যাদুর্গত এলাকায় একজন মানুষও না খেয়ে মারা যাবে না। যাদের বাড়িঘর বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে তাদের পর্যবেক্ষণাধীন পানি সমতল স্টেশনের ৯০টির মধ্যে ৫৪ স্থানে পানি কমেছে। বেড়েছে ২৮ স্থানে। অপরিবর্তিত রয়েছে ৩ স্থানের পানি। যদি এর মধ্যে এখনও ১৮টি স্থানের পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তাদের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে ব্রহ্মপুত্র যমুনা এবং সুরমা কুশিয়ারা পানি সমতলে কমেছে। আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে এসব নদীর পানি কমতে থাকবে। নদী তীরবর্তী গাইবান্ধা, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ ও বগুড়া এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতির কথা বলা হয়েছে। অপরদিকে গঙ্গা পদ্মার পানি এখনও স্থিতিশীল রয়েছে। এ কারণে পদ্মা নদী তীরবর্তী এলাকায় রাজবাড়ী, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ শরীয়তপুর জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকতে পারে। তবে ঢাকা আশপাশে বুড়িগঙ্গা তুরাগ, বালু, শীতলক্ষ্যা নদীসমূহের পানি সমতলে এখনও বাড়ছে। মঙ্গলবার বালু নদীর পানি ডেমরায় বিপদসীমার ২৩ সেন্টিমিটার এবং তুরাগ নদী মিরপুরে বিপদসীমার ২১ ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ কারণে ঢাকার পূর্বদিকের নিম্নাঞ্চলের পানি আরও বাড়তে পারে বলে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্ককীকরণ কেন্দ্র থেকে জানানো হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি গাইবান্ধা ॥ জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। ফুলছড়ি উপজেলা পরিষদ চত্বর এবং কাতলামারির ফুলছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র পানিতে নিমজ্জিত। তিন সপ্তাহের দীর্ঘায়িত বন্যায় ৪ উপজেলার ৩৩ ইউনিয়নের বন্যাকবলিত মানুষ শুকনো খাবার, জ্বালানি, বিশুদ্ধ পানি, চিকিৎসা, গবাদি পশু সংরক্ষণ, গবাদি পশুর খাদ্যসহ নানা সমস্যায় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। কুড়িগ্রাম ॥ বন্যার পানি কমে গেলেও বানভাসি মানুষের দুর্ভোগ কমেনি। ১৬ দিনের বন্যায় মানুষের জীবনযাত্রা অচল হয়ে পড়েছে। বন্যায় পানিতে ডুবে মারা গেছে ১৩ জন। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ১ লাখ ৫০ হাজার ৫৮৬ পরিবারের প্রায় সাড়ে ৬ লাখ মানুষ। এর মধ্যে নদী ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্ত ২২ হাজার ৬৭৫ জন। ৭ হাজার ১২ হে. জমির ফসল নষ্ট হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা ১ লাখ ৫৯ হাজার ৯৬৩ জন। বন্যায় ৫৪ কিমির বাঁধ ও ৩৯টি ব্রিজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। টাঙ্গাইল ॥ বাসাইল উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন এবং কালিহাতী উপজেলার চারটি ইউনিয়ন বন্যা কবলিত হয়ে আছে। বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে মানুষগুলো চরম কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। সরকারী-বেসরকারী পর্যায়ে তারা কোন ত্রাণ সামগ্রী পাচ্ছে না। এছাড়া কোন মেডিক্যাল টিমও সেখানে যায়নি চিকিৎসা সেবা দিতে। সিরাজগঞ্জ ॥ বন্যায় সিরাজগঞ্জে মৎস্য সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জেলায় এবারের বন্যায় তিন হাজার ৪৩৮ একর পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। ক্ষতির পরিমাণ ২১ কোটি ৯ লাখ ৭০ হাজার টাকা বলে জানা গেছে। বন্যায় পুকুর ভেসে যাওয়ায় অনেক মাছ চাষীর পথে বসার উপক্রম হয়েছে। মাদারীপুর ॥ জেলায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে ঘটেছে। সব ক’টি নদ-নদীর পানি বাড়ছে। পদ্মা, আড়িয়ালখাঁ, ময়নাকাটা, কুমার ও পালরদী নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। দেখা দিয়েছে বেড়িবাঁধ ও নদী ভাঙ্গন। পদ্মা নদীর পানি শিবচর পয়েন্টে এখনও বিপদসীমার ৫৬ সেমি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সদর উপজেলার নতুন নতুন এলাকা বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। মানিকগঞ্জ ॥ জেলার অভ্যন্তরীণ নদী ও খালের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে , বন্যাকবলিত ৬টি উপজেলায় ২৮ হাজার ৮শ’ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৪১ ইউনিয়ন বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। বন্ধ হয়ে গেছে প্রায় ৪শ’ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। দৌলতপুর, শিবালয়, হরিরামপুর, ঘিওর ও সাটুরিয়া উপজেলায় ৫৯ আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এই আশ্রয় কেন্দ্রে ৩ হাজার ২৫২ পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। মুন্সীগঞ্জ ॥ জেরায় বন্যায় মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। নি¤œাঞ্চলের পানিবন্দী পরিবারগুলোর কষ্টের মধ্যে দিনাতিপাত করছে। লৌহজং উপজেলার কলমা, ডহরী, শামুরবাড়ি, কনকশার, যসলদিয়া, কান্দিপাড়া, টঙ্গীবাড়ি উপজেলার হাসাইল, বানারী, পাঁচনখোলা, নগরযোয়ার, পাঁচগাঁও, কামারখাড়া ও শ্রীনগর উপজেলার কবুতরখোলাসহ পদ্মা তীরের গ্রামগুলো কয়েক হাজার পরিবার এখন বন্যাকবিলিত। বন্যায় তলিয়ে গেছে নদী তীরবর্তী জমির ফসল। তীব্র স্রোতের কারণে কয়েকটা পয়েন্টে নদী ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। এদিকে জেলার মেঘনা, ধলেশ্বরী ও ইছামতি নদীর পানিও বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। বেড়া, পাবনা ॥ উপজেলার ৪০টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন গত প্রায় পনেরো দিন ধরে বন্যার পানিতে তলিয়ে রয়েছে। ফলে ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর পাঠদানসহ সকল কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ৩৮টি বিদ্যালয়ের পাঠদান পুরোপুরিই বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে প্রায় ১৫ হাজার ছাত্রছাত্রী বিদ্যালয়ে যেতে পারছে না। মির্জাপুর ॥ বন্যার পানি ক্যাম্পাসে ভেতরে প্রবেশ করায় ১৬৮ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। এছাড়া বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে ১টি কলেজ ও ২ মাধ্যমিক বিদ্যালয়। স্থানীয় শিক্ষা অফিস সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। অপরদিকে বন্যার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় উপজেলায় প্রায় ১ হাজার হেক্টর আমন ১০ হেক্টর বীজতলা ৬ হেক্টর আউশ এবং ৭০ হেক্টর সবজি বাগান পানিতে তলিয়ে গেছে বলে কৃষি অফিস জানিয়েছে।
×