ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সুখী দেশ-

প্রকাশিত: ০৪:০০, ৩ আগস্ট ২০১৬

সুখী দেশ-

সুখের প্রকৃত সংজ্ঞা কী তা জিজ্ঞেস করলে নানামুখী উত্তর মিলবে। কবির ভাষায়Ñ নদীর এপার কহে ছাড়িয়া নিঃশ্বাস/ওপারেতে সর্বসুখ আমার বিশ্বাস...। নিজের ভাল থাকাকে গুরুত্ব না দিয়ে অন্যের সুখযাপনকে বড় করে দেখার মধ্যে আর যাই মিলুক, সুখ মেলে না। পরশ্রীকাতরতা বলে একটা শব্দ আছে বাংলা অভিধানে। সম্ভবত বাঙালীর এই বৈশিষ্ট্যটি অপর কোন জাতির ভেতর খুঁজে পাওয়া ভার। আপনাকে নিয়ে সুখী হওয়া খুব কি কঠিন? মানুষ সর্ববিচারে পরিপূর্ণ নয়। তার রয়েছে অপূর্ণতা বা অভাব। অভাব থাকবে, কিন্তু অভাববোধ থাকাটা সুখ হ্রাসের লক্ষণ। বাংলাদেশের মানুষের মোটা দাগে কিছু অভাব তো রয়েছেই। নুন আনতে পান্তা ফুরনো মানুষের সংখ্যা নিহায়ত কম নয়। তবু এসব মানুষ গভীর অর্থে অসুখী নন। সম্প্রতি সুখ সংক্রান্ত যে তথ্য মিলেছে তাতে দেশের মানুষ আত্মশ্লাঘা অনুভব করতেই পারেন। সুখী দেশের তালিকায় বিশ্বের ১৪০টি দেশের মধ্যে অষ্টম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশই সুখী দেশ হিসেবে শীর্ষস্থানে রয়েছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংগঠন নিউ ইকোনমিকস ফাউন্ডেশনের এক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। একটি দেশের নাগরিকদের সন্তুষ্টি, গড় আয়ু, পরিবেশের ওপর প্রভাব ও বৈষম্যÑ এই চারটি মানদ- বিবেচনায় নিয়ে সুখী দেশের তালিকা তৈরি করেছে সংগঠনটি। ইউরোপীয় স্টাডি অবশ্য বছরপাঁচেক আগেই বলেছে, বিশ্বে বাংলাদেশের মানুষই সবচেয়ে বেশি সুখী। এর বিশ্লেষণ করতে গিয়ে জানিয়েছিল, বাংলাদেশের জনসাধারণের প্রত্যাশা বা চাহিদার মাত্রাটা যেহেতু খুব উঁচু নয়, তাই তারা তুলনামূলকভাবে বেশি সুখী। এটা অবশ্য দেশের গ্রামীণ সমাজের হিসাব, যে, সমাজে মোট জনসংখ্যার বৃহত্তর অংশ রয়েছে। গ্রামের মানুষের চাওয়া তার সামর্থ্যরে সঙ্গে সম্পর্কিত। দুবেলা আহারের ব্যবস্থা করতে পারলে মানুষ নিশ্চিন্ত মনে রাতের শয্যা গ্রহণ করে এবং সুখনিদ্রা যায়। এই বৃহত্তর সংখ্যক মানুষের মানসিক জীবন ভারসাম্যপূর্ণ। তাদের দাম্পত্য জীবনও দীর্ঘস্থায়ী। বেশিরভাগ স্বামী-স্ত্রীই দাম্পত্যজীবন পরিবর্তন করছে না। তার মানে হলো, তালাক বা পুনর্বিবাহের হার আশঙ্কাজনক নয়। একজন পুরুষ বা নারী একবারই বিয়ে করছেন এবং আমৃত্যু ওই দাম্পত্যজীবন বহাল রাখছেন। উন্নত বিশ্বের দাম্পত্য জীবনের স্থায়িত্বের তুলনায় যা অনেক অনেক বেশি স্থায়ী। দাম্পত্য সম্পর্ক টিকে থাকা, পারিবারিক বন্ধন মজবুত থাকা; এসবই সুখের একেকটি অনুষঙ্গ হিসেবে ধরা হয়। এসব বিবেচনায় বাংলাদেশের মানুষ যথেষ্ট হারে সুখী। বলা যায়, পৃথিবীর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সুখী ব্যক্তির বাস এই বাংলাদেশে। তাহলে বলতেই পারি আমরা মানসিক স্বাস্থ্যসমৃদ্ধ জাতি। কিন্তু শহরাঞ্চলের বা শিক্ষিত শ্রেণীর মানুষের ভেতর ব্যাপকভাবে নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটেছে। তাদের সংস্কৃতির ভেতর অপসংস্কৃতি অনুপ্রবেশ করেছে। সবচেয়ে বড় কথা প্রবীণ এবং নবীন- দুটি প্রজন্মের ভেতর সংঘাত সৃষ্টি হয়েছে। যার ফলে এক ধরনের অশান্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। এখানেই রয়েছে মানসিক স্বাস্থ্যের অসুস্থতার দিক। সামাজিক বাস্তবতার বিবেচনায় নানা সমস্যা থাকলেও বহির্বিশ্বে বাংলাদেশ যে সুখী দেশের ভাবমূর্তি বজায় রেখে চলেছে সেটাকে ছোট করে দেখার অবকাশ নেই। অল্পে সুখী হওয়ার মতো মানুষের সংখ্যা আগামীতে বাড়বে বলে আশা করা যায়।
×