ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

দরকার গণসচেতনতা

প্রকাশিত: ০৩:৫৯, ৩ আগস্ট ২০১৬

দরকার গণসচেতনতা

জঙ্গী হামলা ও হুমকির কারণে সারাদেশে এক ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে। সম্প্রতি গুলশান, শোলাকিয়া ও কল্যাণপুরের ঘটনার পর জনমনে ভীতির মাত্রা এতটাই সঞ্চার হয়েছে যে, সাধারণ মানুষ রীতিমতো উৎকণ্ঠায়। পত্রিকান্তরে জানা গেছে, সুইসাইড স্কোয়াডসহ জঙ্গীদের নানা নামের টিম দেশে অপতৎপরতায় লিপ্ত। এদের সঙ্গে দেড় সহস্রাধিক সশস্ত্র নারী জঙ্গীর কথাও শোনা যাচ্ছে। সংবাদগুলো শঙ্কিত হওয়ার মতোই। জঙ্গীবাদ দমনে সরকারসহ বিভিন্ন মহল থেকে ঐক্যের কথা বলা হচ্ছে। বলা হচ্ছে গণসচেতনতা এবং জনপ্রতিরোধের কথা। আমরাও মনে করি জঙ্গীবাদ-সন্ত্রাসবাদ দমনে জনগণের সম্মিলিত প্রতিরোধের বিকল্প নেই। জনতার প্রতিরোধ শক্তিই সবচেয়ে বড় শক্তি। তার কাছে যে কোন ধরনের অপশক্তি পরাভূত হবেই। সেটা জঙ্গীবাদ বা সন্ত্রাসবাদ যাই হোক। জনতার শক্তিবলেই ১৯৭১ সালে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ও তাদের এদেশীয় সহযোগী রাজাকার-আলবদরদের পরাজিত করা গেছে। এবারও জনগণের সাহায্য নিয়ে জঙ্গীদের পরাজিত করা অসম্ভব নয়। জনগণ চাইলে জঙ্গী দমন এবং তাদের ধরা সম্ভব তার প্রমাণ হচ্ছে মাদারীপুর এবং এর আগে ঢাকার তেজগাঁওয়ের ঘটনা। দুটো ঘটনায়ই জঙ্গীরা ধরা পড়ে স্থানীয় জনগণের চেষ্টায়। জঙ্গীদের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ যে কতটা সচেতন ও ক্ষুব্ধ তার আরও প্রমাণ মিলল শনিবার বগুড়ায়। জেলার পীরগাছায় এক মন্দিরের পুরোহিত ও তার ছেলেকে ক’দিন যাবত চিঠি দিয়ে হত্যার হুমকি দেয়া হচ্ছিল। শনিবার সকালেও তিনি চিঠি পান। ওই সময় মন্দিরের সামনে সন্দেহজনক এক ব্যক্তিকে এলাকার লোকজন ধাওয়া করে ধরে ফেলে। পরে পুলিশ তাকে আটক করে। গুলশান ও শোলাকিয়ায় জঙ্গী-সন্ত্রাসী হামলাসহ দেশব্যাপী গুপ্তহত্যা ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার কথা বেশ কয়েকদিন যাবত জোরেশোরেই আলোচিত হয়ে আসছে। কিছুদিন আগে ১৪ দলের এক সমাবেশ থেকে জঙ্গী-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে গণসচেতনতা গড়ে তুলতে নানা কর্মসূচী দেয়া হয়। এতে নারীদের সমাবেশও ছিল। দেশের বিভিন্ন স্থানে সমাবেশ ও প্রচার কর্মসূচী চালানো হয়। এসব সমাবেশে সন্তানের প্রতি খেয়াল রাখাসহ জনসচেতনতার কথা বলা হয়। তবে জঙ্গী তৎপরতা প্রতিহত করতে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার পাশাপাশি রাজনৈতিক অঙ্গীকার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দেশের রাজনৈতিক সংগঠনগুলো তাদের তৃণমূলের সাংগঠনিক শক্তিকে জঙ্গী তৎপরতা প্রতিরোধে কাজে লাগাতে পারলে এবং সকল সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনকে সম্পৃক্ত করে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়তে পারলে যে কোন অশুভ শক্তি নিশ্চিহ্ন হবেই। তাই, গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলার কোন বিকল্প নেই। তবে একথা মনে রাখতে হবে জঙ্গী তৎপরতা বিস্তারে বড় ভূমিকা রাখছে অর্থ। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটের পর্যালোচনামূলক এক প্রতিবেদনে জঙ্গী অর্থায়নের ভয়াবহ চিত্র ফুটে উঠেছে। সম্প্রতি দেশে জঙ্গী কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে অর্থ সংগ্রহে জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সিঙ্গাপুরে চার বাংলাদেশী দণ্ডিত হয়েছেন। সর্বশেষ রাজধানীর কল্যাণপুর, গুলশান ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ার ঘটনার পর আবারও সামনে এসেছে ‘জঙ্গী অর্থায়নে’র বিষয়টি। জঙ্গী অর্থায়ন প্রসঙ্গে প্রতিবারই ঘুরেফিরে আলোচনায় এসেছে জামায়াত নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠানের নাম। তবে জঙ্গী-সন্ত্রাসবাদে অর্থায়নের সন্দেহে চিহ্নিত প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর নজরদারি শুরু করেছে সরকার। এটা খুবই সময়োপযোগী সন্দেহ নেই। আরেকটা বিষয় এখানে উল্লেখ জরুরী। যেহেতু জঙ্গীদের একটা বড় অংশ বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ পড়ুয়া তাই শিক্ষক ও অভিভাবকদের এই ক্ষেত্রে দায়িত্ব অনেক বেশি। সোমবার কুমিল্লায় শোকের মাস উদযাপনের এক অনুষ্ঠানে সরকারদলীয় ছাত্র সংগঠনের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে এক ছাত্র নিহত হয়। এই ধরনের সংঘাতের সুযোগ নিতে পারে জঙ্গীরা। এই ব্যাপারে সরকারের পাশাপাশি ছাত্রসংগঠনগুলোকে সতর্ক থাকতে হবে। আমরা মনে করি, সরকারের সন্ত্রাস ও জঙ্গীবিরোধী চলমান কার্যক্রম বেগবান করার পাশাপাশি জনগণের সম্মিলিত প্রতিরোধই পারে জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসবাদ সমূলে বিনাশ করতে। মাদারীপুর, রাজধানীর তেজগাঁ এবং সর্বশেষ বগুড়ার পীরগাছার মতো গণপ্রতিরোধই এখন জরুরী।
×