ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শিল্প পুলিশ বিশেষ নজর রাখছে

শিল্পাঞ্চলের ৪ হাজার বিদেশীর নিরাপত্তা দেয়ার কাজ শুরু

প্রকাশিত: ০৩:৪৯, ৩ আগস্ট ২০১৬

শিল্পাঞ্চলের ৪ হাজার বিদেশীর নিরাপত্তা দেয়ার কাজ শুরু

মশিউর রহমান খান ॥ দেশের শিল্প-কারখানা অধ্যুষিত অঞ্চলগুলোয় কর্মরত ও বসবাসরত প্রায় ৪ হাজার বিদেশীর নিñিদ্র নিরাপত্তা প্রদানে গুরুত্বের সঙ্গে কাজ শুরু করেছে শিল্প পুলিশ। বিদেশীদের বেশির ভাগই বাংলাদেশের বিভিন্ন শিল্প-কারখানায় কারিগরি বিশেষজ্ঞ হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। কর্মরত সকল বিদেশীকে বিশেষ নিরাপত্তা নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে। হালনাগাদ করা হয়েছে বিদেশীদের তালিকা। শিল্প পুলিশ এদের সবার কর্মস্থল, আবাসস্থলসহ সার্বিকভাবে তাদের গতিবিধির ওপর বিশেষ নজর রাখছে। কারখানায় প্রবেশ ও বহির্গমন পথে সিসিটিভির মাধ্যমে কঠোর নজরদারিও রাখা হচ্ছে। সকল বিদেশীকে বিমানবন্দর থেকে শুরু করে দেশের যে কোন স্থানে যেতে চাইলে সর্বক্ষণিক থাকছে পুলিশ। মোটকথা, প্রয়োজনে দেশত্যাগের আগে বিমানবন্দর পর্যন্ত প্রতিটি বিদেশীকে দেয়া হচ্ছে পরিপূর্ণ নিরাপত্তা। সম্প্রতি রাজধানীর গুলশানে ভয়াবহ জঙ্গী হামলার পরিপ্রেক্ষিতে বিদেশী নাগরিকগণ নিরাপত্তা নিয়ে এক ধরনের উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন। এমতাবস্থায়, বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের বিভিন্ন শিল্প-কারখানায় কর্মরত বিদেশীদের নিরাপত্তার বিষয়ে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে এ উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। সূত্র জানায়, দেশের শিল্প অধ্যুষিত এলাকা হিসেবে সাভারের আশুলিয়া, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামে ছয় হাজারের কিছু বেশি শিল্প-কারখানা আছে। এর মধ্যে ৩ হাজার ২১০টি পোশাক কারখানা রয়েছে। এসব কারখানায় প্রায় চার হাজার বিদেশী নাগরিক কর্মরত রয়েছে। সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলার পরিপ্রেক্ষিতে এসব বিদেশীকে শিল্প পুলিশের নিরাপত্তা নজরদারিতে রাখা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শিল্প পুলিশের আওতাধীন এলাকার কারখানাগুলোতে ২ হাজার ১৪৬ জন বিদেশী নাগরিক কর্মরত আছেন। এরা সবাই রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (ইপিজেডের) বাইরে স্থাপিত কারখানায় কাজ করেন। তবে শিল্প পুলিশের আওতাভুক্ত এলাকায় মোট তিনটি ইপিজেড রয়েছে। এ ইপিজেডগুলোয় মোট ১ হাজার ৭২১ জন বিদেশী নাগরিক কাজ করেন। এ হিসাবে মোট ৩ হাজার ৮শ’ ৬৭ জন বিদেশী নাগরিক শিল্প পুলিশের বিশেষ নিরাপত্তা নজরদারির মধ্যে রয়েছেন। ইপিজেডের বাইরের শিল্প কারখানাগুলোয় কর্মরত বিদেশীদের ৮০ শতাংশের বেশি চীন, ভারত, কোরিয়া, শ্রীলংকা ও পাকিস্তানের। এর বাইরে চীন, হংকং, চেক প্রজাতন্ত্র, ভুটান, স্পেন, মোজাম্বিক, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, ইতালি, ফিলিপিন্স, পর্তুগাল, জাপান, শ্রীলংকা, ফ্রান্স, মালয়েশিয়া, ইরান, যুক্তরাষ্ট্র, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, তাইওয়ান, হন্ডুরাস, কলম্বো, ইন্দোনেশিয়া, বসনিয়া, তুরস্ক, যুক্তরাজ্য, কানাডা, রোমানিয়া নেপাল, আর্জেন্টিনা, মরিশাস, নেদারল্যান্ডস ও ভিয়েতনামের নাগরিক। অপরদিকে ইপিজেডের ভেতরের শিল্প-কারখানাগুলোয় কর্মরত বিদেশীরা চীন, যুক্তরাজ্য, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ইতালি, ফিলিপিন্স, কোরিয়া, মিসর, জাপান, শ্রীলংকা, ফ্রান্স, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান, উজবেকিস্তান, মরক্কো, যুক্তরাষ্ট্র, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, তাইওয়ান, ইউক্রেন, ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক, মরিশাস, রোমানিয়া, নেদারল্যান্ডস ও ভিয়েতনামের নাগরিক। ইপিজেডে কর্মরত বিদেশীদের ৮০ শতাংশ চীন, ভারত, কোরিয়া ও শ্রীলংকার নাগরিক। জানা গেছে, শিল্প-কারখানাগুলোয় কর্মরত বিদেশীদের মধ্যে কেউ কেউ থাকেন শিল্প এলাকার ভেতরে। আবার অনেকে শিল্প এলাকার বাইরে বসবাস করেন। এদের বেশির ভাগই কারিগরি বিশেষজ্ঞ হিসেবে কর্মরত। সাম্প্রতিক হামলার পরিপ্রেক্ষিতে শিল্প পুলিশ এদের সবার কর্মস্থল, আবাসস্থলসহ সার্বিকভাবে তাদের গতিবিধির ওপর বিশেষ নজর রাখছে। বিদেশীরা কর্মস্থলে যাওয়া-আসার ক্ষেত্রে প্রয়োজন মনে করলে তারা শিল্প পুলিশের নিরাপত্তা সহযোগিতা চাইতে পারবেন। এমনিতেই শিল্প পুলিশের পক্ষ থেকে বিদেশীদের জন্য কোনপ্রকার নিরাপত্তা সমস্যা হচ্ছে কিনা, তা জানতে চাওয়া হচ্ছে। এর বাইরে যে সকল শিল্প-কারখানায় বিদেশী কর্মরত রয়েছেন, সেসব প্রতিষ্ঠানের মালিকদের কাছে শিল্প পুলিশ চিঠি দিয়েছে। চিঠিতে বিদেশীদের এদেশে স্বাভাবিক চলাচল নিশ্চিত করতে যে কোন প্রকার সাহায্য প্রয়োজন হলে শিল্প পুলিশকে জানাতে বলা হয়েছে। শিল্পাঞ্চলের বাইরে মেট্রোপলিটন শহরে যাওয়া-আসার ক্ষেত্রেও এ বিষয়ে বিশেষ সহযোগিতা সমন্বয় করবে শিল্প পুলিশ। শিল্প পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, দেশের শিল্পাঞ্চলের মধ্যে আছে আশুলিয়া, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামের শিল্পাঞ্চল। বস্ত্র, পোশাকসহ এ অঞ্চলগুলোয় আছে পাদুকা, পাট, সিরামিক, ওষুধ শিল্পের ছয় হাজারের বেশি কারখানা। এ কারখানাগুলোয় কর্মরত বিদেশীদের নিরাপত্তা জোরদারেই হালনাগাদ তালিকা করেছে শিল্প পুলিশ। শিল্প পুলিশের বিশেষ নিরাপত্তা প্রদান প্রসঙ্গে জানা গেছে, শিল্প পুলিশের পক্ষ থেকে তাদের কারখানায় বিদেশী কর্মরতদের নিরাপত্তা জোরদারে বিশেষ তদারকিতে সহযোগিতার জন্য কারখানা মালিকদের চিঠি দেয়া হয়েছে। কর্মস্থল থেকে শিল্পাঞ্চলের বাইরে যাতায়াতে বিদেশীদের বিশেষ নিরাপত্তা দেয়া হচ্ছে। প্রয়োজনে বাইরে যেতে চাইলে সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে। এছাড়া মেট্রোপলিটন শহরে যাতায়াতের ক্ষেত্রেও মেট্রোপলিটন পুলিশের মাধ্যমে সেবা প্রদান করতে সমন্বয় করছে শিল্প পুলিশ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিল্প পুলিশের মহাপরিচালক আব্দুস সালাম জনকণ্ঠকে বলেন, দেশের ভেতরে বিভিন্ন জেলায় গড়ে ওঠা কয়েক হাজার শিল্প-কারখানায় কর্মরত বিদেশী নাগরিকদের স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে আমরা পরিপূর্ণ নিরাপত্তা প্রদান করছি। দেশে প্রায় ৪ হাজার বিদেশী শিল্প-কারখানায় কর্মরত রয়েছেন। এদের অধিকাংশই ঢাকা-গাজীপুরসহ চট্টগ্রামের বিভিন্ন কারখানায় বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করছেন। বিদেশীদের এদেশে নির্বিঘেœ ও ভীতির মধ্যে থেকে যাতে কাজ না করতে হয়, সেজন্য আমরা তাদের বিশেষ নিরাপত্তা প্রদান করছি। বিশেষ নিরাপত্তার অংশ হিসেবে কোন ক্রেতা বাংলাদেশে এলে বিমানবন্দর থেকে তিনি যেসব স্থানে যাচ্ছেন এবং বিমানবন্দর থেকে বাংলাদেশ ত্যাগ করা পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রে নিরাপত্তা প্রদান করছি। যে কোন প্রকার দুর্ঘটনা এড়াতে বিদেশীদের কর্মস্থল ও আবাস্থলও আমরা নজরদারিতে রাখছি। বিশ্বের কাছে বিদেশীদের নিরাপত্তা প্রশ্নে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে আমরা কাজ করছি। বিদেশীদের নিয়ে করা তালিকাটি হালনাগাদ করা হয়েছে। সম্প্রতি গুলশানে জঙ্গী হামলায় নিহত ৯ ইতালি নাগরিকের মধ্যে ছয়জনই পোশাক শিল্পের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। শিল্পাঞ্চলগুলোয় বিশেষত পোশাক শিল্পে কর্মরত বিদেশীদের আধিক্য বেশি। স্বাভাবিকভাবেই নিরাপত্তার প্রয়োজনীয়তা তাদেরই বেশি। এরই মধ্যে অনেক বিদেশী কর্মী নিরাপত্তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। তাই আমরা বিদেশী কর্মরতদের নিরাপত্তা প্রদানে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। এছাড়া কারখানায় প্রবেশ ও বহির্গমন পথে সিসিটিভির মাধ্যমে কঠোর নজরদারিও রাখা হচ্ছে। উল্লেখ্য, গত ১ জুলাই রাজধানীর গুলশানের কূটনীতিক পাড়ায় ভয়াবহ জঙ্গী হামলায় ২০ জন জিম্মিকে হত্যা করা হয়। এর মধ্যে বিদেশী নাগরিক ছিলেন ১৭ জন। এ পরিপ্রেক্ষিতে শিল্পাঞ্চলে কর্মরত বিদেশীদের নিরাপত্তা জোরদারের উদ্যোগ নিয়েছে শিল্প পুলিশ। উদ্যোগের অংশ হিসেবে বিশেষ তদারকির কার্যক্রমও হাতে নেয়া হয়।
×