ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাঁচার জন্য সাঁতার!

প্রকাশিত: ০৬:৩৫, ২ আগস্ট ২০১৬

বাঁচার জন্য সাঁতার!

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ঝড়ে উত্তাল উত্তর এজিয়ান সাগর। মোচার খোলার মতো ডিঙ্গিটা দুলছে। কনকনে ঠা-ায় হাত পা নীল হয়ে যাচ্ছে। জবুথবু অবস্থায় বাবা আর তিন ভাইবোন একে অপরকে আঁকড়ে ধরে রয়েছে। হঠাৎ ঢেউয়ের ধাক্কায় উল্টে গেল ডিঙ্গি। ঠা-া স্রোতে অসাড় হয়ে যাচ্ছিল মারদিনির শরীর। তীরের কাছে পৌঁছানোর জন্য এবার শুরু জীবন মরণ সাঁতার। দক্ষ সাঁতারু বাবার সন্তান মারদিনি ও তিন ভাই বোন মিলে সেই হাড়হিম সাগরের জলে সাঁতরে পার হয়েছে ডিঙ্গিটা কোন রকমে টেনে তীরে নিয়ে এসেছিলেন। অবশেষে গ্রীসের মাটিতে পৌঁছলেন তারা। গৃহযুদ্ধে রক্তাক্ত সিরিয়া থেকে বাস্তুহারা হয়ে গ্রীস ও পরে জার্মানিতে পৌঁছে যাওয়া সেই মারদিনি এবার সাঁতার কাটবেন অলিম্পিকে। যেন এক অনবদ্য জীবন উপন্যাস তৈরি করেছেন এই উদ্বাস্তু সিরীয়ান সাঁতারু। আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি ঘোষণা করেছে, বিভিন্ন দেশের প্রতিযোগীদের সঙ্গে এবারের অলিম্পিকে থাকবে শরণার্থীদের জন্য বিশেষ দল। এরা কেউ কোন দেশের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে না। সেই নিয়মের বলেই সিরিয়া থেকে উদ্বাস্তু হওয়া ইয়ুসরা মারদিনি চূড়ান্ত যোগ্যতা অর্জন করে স্থান পেয়েছেন অলিম্পিকে। মারদিনি জানিয়েছেন, সিরিয়া থেকে জীবন হাতে করে এজিয়ান সাগর সাঁতরে পার হয়ে গ্রীসে পৌঁছে আরও সমস্যায় পড়েছিলাম। গ্রীস থেকে হেঁটে, বাসে বা ট্রেনে চেপে প্রথমে সার্বিয়া তারপর হাঙ্গেরি ও অস্ট্রিয়া হয়ে শেষপর্যন্ত জার্মানিতে পৌঁছাই। বার্লিনের উদ্বাস্তু শিবিরে ঠাঁই হয় মারদিনি পরিবারের। সাঁতারু পরিবার একটা সুইমিং পুল পেলেই খুশি। তাই বাবাকে সঙ্গে নিয়ে বার্লিনের সুইমিং ক্লাবে ভর্তি হন ইয়ুসরা ও তার বোন। দুই বোনের সাঁতার কাটার স্টাইল দেখে চমকে যান ক্লাবের কোচ। তিনিই ঠিক করেন ২০২০ সালের টোকিও অলিম্পিকে অংশ নেবে মারদিনি। শেষপর্যন্ত অলিম্পিক কমিটির সিদ্ধান্তে ২০১৬ রিও অলিম্পিকেই অংশ নিতে যাচ্ছেন শরণার্থী ইয়ুসরা মারদিনি। আগামী ৮ অগস্ট মেয়েদের ২০০ মিটার ফ্রি স্টাইলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন তিনি। বিশ্বের ক্রীড়ামোদীরাই তাকিয়ে থাকবে তার ইভেন্টের দিকে। গৃহযুদ্ধের শিকার সিরীয় শরণার্থী মারদিনি অলিম্পিকের অন্যতম মুখ হিসেবে উঠে এসেছেন। তবে জীবনের দুর্বিসহ এই স্মৃতিকে ইতিবাচক দৃষ্টিতেই দেখছেন মারদিনি। এ প্রসঙ্গে ১৮ বছর বয়সী এই সাঁতারু বলেন, ‘আমি খুব সুস্পষ্টভাবেই মনে করতে পারি যে, সাঁতার ছাড়া কখনই বাঁচতে পারতাম না আমি। আর এটা আমার জীবনের ইতিবাচক স্মৃতি। এই অলিম্পিক গেমসে আমার বার্তা হলো, কখনই হাল ছেড়ে দিও না।’
×