ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিশ্বের বৃহত্তম গেমস আয়োজনে প্রস্তুত ব্রাজিল?

প্রকাশিত: ০৬:৩৪, ২ আগস্ট ২০১৬

বিশ্বের বৃহত্তম গেমস আয়োজনে প্রস্তুত ব্রাজিল?

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ সময় এবং স্রোত কারও জন্য অপেক্ষা করে না। চিরন্তন সত্য এটি। তেমনি রূঢ় সত্য ঘড়ির কাঁটাও টিকটিক করে বয়ে চলে, থেমে থাকে না। চিরকালীন এই বাস্তবিক দৃষ্টান্ত তুলে ধরার একটিই কারণ, অলিম্পিক গেমস। বিশ্ব এখন সর্ববৃহৎ এই ক্রীড়া আসরের ডামাডোলে শামিল হওয়ার অপেক্ষায়। কেননা বিশ্বের বৃহত্তম ক্রীড়া উৎসব ‘গ্রেটেস্ট শো অন দ্য আর্থ’ এখন ‘ওয়ান ওয়ার্ল্ড-ওয়ান ড্রিম’ সেøাগানকে সামনে রেখে ক্রীড়াপ্রেমীদের দ্বোরগোড়ায়। বিশ্ববাসীর জন্য সবচেয়ে মর্যাদাকর ও আকাক্সিক্ষত এই ক্রীড়ামেলার এবারের আয়োজক ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরো। শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে কাক্সিক্ষত এ ক্রীড়াযজ্ঞের পর্দা উঠবে। সফল গেমস আয়োজনে আয়োজকরা শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত। তবে গেমস শুরু হতে আর মাত্র দুইদিন বাকি থাকলেও ব্রাজিল নাকি এখনও পুরোপুরি প্রস্তুত না। গেমস দ্বোরগোড়ায়, অথচ এমন খবরে সয়লাব আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম। খোদ ব্রাজিলেই অলিম্পিক বিরোধী প্রচার চলছে! নিরাপত্তা সমস্যা, জিকা ভাইরাস আতঙ্ক, আবাসন সমস্যাসহ অনেক উটকো ঝামেলায় জারবার আয়োজকরা। সবচেয়ে বড় সমস্যা নিশ্চিতকরেই, নিরাপত্তার বিষয়টি। সম্প্রতি গোটা বিশ্বই সন্ত্রাসী হামলা নিয়ে আতঙ্কে আছে। কিছুদিন আগে ফ্রান্সে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে কয়েক দফায়। জঙ্গীগোষ্ঠী ব্রাজিলেও অলিম্পিকের সময় হামলার হুমকি দিয়ে রেখেছে। সবমিলিয়ে বেশ চাপেই আছে আয়োজকরা। তবে উটকো অনেক ঝামেলা সত্ত্বেও ব্রাজিল সফল আয়োজনে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট ডিলমা রৌসেফ জানিয়েছেন, যে কোন মূল্যে আমরা বিশ্বকে সেরা ও সফল একটি গেমস উপহার দেব। আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির (আইওসি) সভাপতি টমাস বাখ জানিয়েছেন, যে কোন বড় আয়োজনই চ্যালেঞ্জের। অলিম্পিক বিশ্বের সবচেয়ে বড় আসর। এর সফল আয়োজন সব সময় চ্যালেঞ্জের। ব্রাজিল সেই চ্যালেঞ্জ টপকে সেরা আয়োজন করতে পারবে বলে আমাদের বিশ্বাস। অনেক এ্যাথলেট রিও অলিম্পিক থেকে নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছে। তাই বলে, গেমসের উন্মাদনার কমতি হয়েছে এমন ভাবার কারণ নেই! ইতোমধ্যে গেমস ভিলেজে আসতে শুরু করেছে বিশ্বের খ্যাতিমান ও অখ্যাত তারকারা। তাদের প্রচার মুখর হতে শুরু করেছে রিও। নিরাপত্তা সমস্যাটাই এবারের অলিম্পিকের প্রধান চ্যালেঞ্জ। সন্ত্রাসীদের হুমকির পাশাপাশি ব্রাজিলে চোরের উৎপাতের কথা সবারই জানা। সে নমুনা ইতোমধ্যে মিলেছে। অস্ট্রেলিয়ান দলের প্রধান কিটি চিলার যেমন জানিয়েছেন, তাদের ল্যাপটপ ও জার্সি খোয়া গিয়েছে। তারা আবাসন নিয়েও অসন্তোষ জানিয়েছে। তাদের মতে, গেমস ভিলেজে বসবাসের অযোগ্য। চুরির সময় অস্ট্রেলিয়া দলের এক সদস্য সেটা দেখেছিলেন ঠিকই, তবে তিনি চোরকে ভেবেছিলেন অগ্নি নির্বাপক বাহিনীর সদস্য। তিনি জানান, আমি দেখলাম তিন-চার জন আমাদের দলের বিশেষ শার্টগুলো নিয়ে যাচ্ছে। তাদের স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য ভেবে আমি বাধা দেইনি। পরে জানতে পারি তারাই আমাদের জিনিসপত্র চুরি করেছে। কিটি চিলার বলেন, আমরা ভাবতেও পারিনি এমন কিছু হবে। আগুন লেগে যাওয়ায় আমরা ভীত ছিলাম। আর এতটাই শঙ্কিত ছিলাম যে দ্রুত সবাইকে নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে আসি। আমাদের সাইক্লিং অফিসিয়ালের ল্যাপটপ চুরি গেছে। পঞ্চম তলার একটি রুমে তিনি থাকতেন। আমাদের প্রযুক্তিগত ব্যবহার্য জিনিস এখানে সেখানে পড়ে ছিল। তবে সেগুলো কিছুই খোয়া যায়নি। তবে যত সমস্যাই থাকুক না কেন, সফল আয়োজনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে আয়োজকরা। কিছুদিন আগে নাশকতা চালানোর আশঙ্কায় ১০ জনকে আটক করেছে ব্রাজিলের পুলিশ। ব্রাজিলের বিচারমন্ত্রী আলেক্সান্ডার মোরায়েস এক বিবৃতিতে জানান, ওই ১০ ব্যক্তি অলিম্পিক গেমস চলাকালে হামলার পরিকল্পনা নিয়েছিল। কিন্তু পুলিশ আগেই টের পেয়ে যাওয়ায় তাদের সে পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে। আটক ১০ জনই ব্রাজিলের নাগরিক। তবে তাদের ভিন্ন ভিন্ন রাজ্য থেকে আটক করা হয়েছে। তারা হোয়াটস এ্যাপের মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রাখত। আটক দলটির কাছ থেকে একে রাইফেলসহ বেশ কিছু অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বিশ্বের সর্ববৃহৎ আসর সফল ও নিরাপদে সম্পন্ন করার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে ব্রাজিল সরকার। তারা ইতোমধ্যে ৮০ হাজারের বেশি পুলিশ ও সেনা নিয়োগ করেছে। তারা রিও ডি জেনেরো শহরের রাস্তাগুলোতে টহল দিচ্ছে।
×