ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য আমদানি বেড়েছে ২৫ শতাংশ

প্রকাশিত: ০৬:২৫, ২ আগস্ট ২০১৬

চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য আমদানি বেড়েছে ২৫ শতাংশ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে সদ্য সমাপ্ত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে মোট ৫ কোটি ৩৬ লাখ ৮৮ হাজার টন পণ্য আমদানি হয়েছে। এর আগের ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ওই বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানির তুলনায় যা প্রায় ২৫ শতাংশ বেশি। চট্টগ্রাম কাস্টমসের ২০১৫-১৬ অর্থবছরের রাজস্ব আদায়-সংক্রান্ত পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ওই বন্দর দিয়ে ৪ কোটি ২৮ লাখ ৫ হাজার টন পণ্য আমদানি হয়েছিল। এর বিপরীতে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৫ কোটি ৩৬ লাখ ৮৮ হাজার টন পণ্য আমদানি হয়েছে। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে এই বন্দর দিয়ে প্রায় ১ কোটি ৮ লাখ ৮২ হাজার টন বেশি পণ্য আমদানি হয়েছে। আরও জানা গেছে, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি পণ্যের শুল্কায়ন হয়েছিল ১ লাখ ৮৩ হাজার ৮৪১ কোটি টাকা। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে আমদানি পণ্যের শুল্কায়ন বেড়ে ১ লাখ ৯৫ হাজার ৭৬৭ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ ২০১৪-১৫ অর্থবছরের তুলনায় ২০১৫-১৬ অর্থবছরে শুল্কায়ন মূল্য ১১ হাজার ৯১৬ কোটি টাকা বা ৬ শতাংশ বেড়েছে। সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি করা পণ্যের তালিকায় শীর্ষে আছে সিমেন্ট ক্লিংকার ও সিমেন্ট তৈরির আরেক কাঁচামাল গ্র্যানিউলেটেড সø্যাগ। এছাড়া আমদানি করা শীর্ষ ১০ পণ্যের তালিকায় রয়েছে, গম, হাইস্কিড ডিজেল, স্ক্র্যাপ ভেসেল, কয়েল, লাইমস্টোন ফ্লাক্স, ফার্নেস অয়েল, পরিশোধিত পাম অয়েল ও জ্বালানি তেল। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এই ১০ পণ্য আমদানির পরিমাণ ৩ কোটি ৯ লাখ ২৬ হাজার টন। যা মোট আমদানি পণ্যের প্রায় ৬০ শতাংশ। চট্টগ্রাম কাস্টমসের পরিসংখ্যানের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে আমদানি করা পণ্যের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে সিমেন্ট ক্লিংকার। সিমেন্টের এই কাঁচামালের আমদানি হয়েছে ১ কোটি ১১ লাখ ৩৮ হাজার টন। একই সঙ্গে সিমেন্ট তৈরির আরেক কাঁচামাল গ্র্যানিউলেটেড সø্যাগ আমদানি হয়েছে ২০ লাখ ৭৮ হাজার টন। অর্থাৎ সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে মোট আমদানি করার পণ্যের ২৫ শতাংশই ছিল সিমেন্টের কাঁচামাল। এছাড়া এই সময়ে ৩৭ লাখ ৩৫ হাজার টন গম, ৩০ লাখ ২৫ হাজার টন হাইস্কিড ডিজেল, ৩০ লাখ ২২ হাজার টন স্ক্র্যাপ ভেসেল, ২০ লাখ ৯২ হাজার টন কয়েল, ১৫ লাখ ৭৮ হাজার টন লাইমস্টোন ফ্লাক্স, ১৫ লাখ ১৫ হাজার টন ফার্নেস অয়েল, ১৪ লাখ ৯৩ হাজার টন পরিশোধিত পাম অয়েল এবং ১২ লাখ ৫০ হাজার টন পেট্রোলিয়াম অয়েল আমদানি হয়েছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরের চেয়ে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এসব পণ্যের আমদানি ৫৮ লাখ টন বা ২৩ শতাংশ বেড়েছে; যার শুল্কায়ন মূল্য ১ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা। আমদানিকৃত বিভিন্ন পণ্যের মধ্যে হাইস্কিড ডিজেল থেকে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে প্রায় ৩০ লাখ ২৫ হাজার টন হাইস্কিড ডিজেল আমদানি হয়েছে; এর শুল্কায়ন মূল্য ১১ হাজার ৬৫১ কোটি টাকা, যা থেকে রাজস্ব এসেছে ৩ হাজার ৮৮ কোটি টাকা। রাজস্ব আদায়ের দিক দিয়ে হাইস্কিড ডিজেলের পরই রয়েছে সিমেন্টের ক্লিংকার, পরিশোধিত পাম অয়েল, মোটরসাইকেল, গাড়ি, অর্ধসমাপ্ত ইস্পাতপণ্য, আপেল, কেইন সুগার, পেট্রোলিয়াম অয়েল ও টেলিকম উপকরণ। এই তালিকার প্রথম ১০টি পণ্য আমদানির পরিমাণ মোট ১ কোটি ৮৮ লাখ ৮৯ হাজার ৪০৪ টন; যার শুল্কায়ন মূল্য ৩৪ হাজার ৮২৮ কোটি টাকা। এসব পণ্য থেকে মোট রাজস্ব আদায় হয়েছে ১০ হাজার ৬১৮ কোটি টাকা, যা ২০১৪-১৫ অর্থবছর থেকে ২২ শতাংশ বেশি এবং ২০১৫-১৬ অর্থবছরের মোট আদায়কৃত রাজস্বের প্রায় ৩৪ শতাংশ। এদিকে সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে আমদানি পণ্যগুলোর মধ্যে শুল্কায়ন মূল্যের ভিত্তিতে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে পোশাক শিল্পের অন্যতম কাঁচামাল তুলা। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে মোট ১১ লাখ ২২ হাজার টন তুলা আমদানি হয়েছে, যার শুল্কায়ন মূল্য ১৬ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা। এরপরই রয়েছে হাইস্কিড ডিজেল, পরিশোধিত পাম অয়েল, স্ক্র্যাপ ভেসেল, গম, সিমেন্টের ক্লিংকার, ফার্নেস অয়েল, ক্রুড সয়াবিন অয়ল, সয়াবিন সিড ও পেট্রোলিয়াম অয়েল। শীর্ষে থাকা ১০টি পণ্যের শুল্কায়ন মূল্য প্রায় ৬৬ হাজার কোটি টাকা, যা মোট আমদানি মূল্যের ৩৪ শতাংশ। এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহাবুবুল আলম বলেন, বর্তমানে দেশের মানুষের চাহিদা ও আয় বাড়ায় পণ্যের আমদানি বাড়ছে। তৈরি পোশাক শিল্প ও জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ বাড়ায় সংশ্লিষ্ট পণ্যগুলোর আমদানিও বেড়েছে। আর আমদানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজস্ব আদায়ও বেড়েছে। এটা অর্থনীতির জন্য ভাল লক্ষণ হলেও আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে পণ্য রফতানি বাড়াতে হবে। তবেই আমাদের অর্থনীতি শক্তিশালী হবে।
×