অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দেশের পুঁজিবাজারের মন্দাবস্থা কাটছে না। এর মধ্যে ভাল মৌল ভিত্তির কোম্পানিতেও আস্থা রাখতে পারছেন না সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। শুধু তাই নয়, বাজারে এ মন্দাবস্থার সুযোগ কাজে লাগায় এক শ্রেণীর চতুর বিনিয়োগকারী। স্বল্প মূলধনী কোম্পানিগুলোকে ঘিরেই তখন বাজারে লেনদেন চলতে থাকে। কোন মূল্যসংবেদনশীল তথ্য ছাড়াই হঠাৎ এসব শেয়ারের দর বাড়ার পেছনে কোন কারসাজি চক্রের হাত রয়েছে কি-না তা নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মাঝে বিভ্রান্তি রয়েছে।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্যানুয়ায়ী প্রায় এক মাসজুড়ে কিছু দুর্বল কোম্পানির শেয়ারের দর বাড়ছে। গত সপ্তাহে এর আধিপত্য আরও বেশি পরিলক্ষিত হয়েছে। সপ্তাহ শেষে দরবৃদ্ধির তালিকায় (বি, এন এবং জেড ক্যাটাগরির) উঠে এসেছে ‘জেড’ ক্যাটাগরির আট প্রতিষ্ঠানের নাম। এ কোম্পানিগুলো হলোÑ শ্যামপুর সুগার মিল, জুট স্পিনার্স, ঝিল বাংলা সুগার, দুলামিয়া কটন, মাইডাস ফাইন্যান্স, ফাইন ফুড, মেট্রো স্পিনিং এবং রহিমা ফুড। এছাড়া মুন্নু স্টাফলারস, রেনউইক যজ্ঞেশ্বর, জেমিনি সী ফুড, ইস্টার্ন কেবলসের শেয়ারদরও বেড়েছে কয়েকগুণ।
অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ, সেই সঙ্গে দীর্ঘদিন শেয়ারহোল্ডারদের কোন ধরনের লভ্যাংশ না দেয়ার কারণে লভ্যাংশ না দেয়ার কারণে প্রতিষ্ঠানগুলো এখন জেড ক্যাটাগরিতে অবস্থান করছে। এসব কোম্পানির মধ্যে এক সপ্তাহের ব্যবধানে সর্বোচ্চ ২১.৪৩ শতাংশ বা ২ টাকা দর বেড়েছে শ্যামপুর সুগারের। ৬ টাকা ৫০ পয়সার শেয়ার সপ্তাহ শেষে বিক্রি হয়েছে ৮ টাকা ৪০ পয়সায়। পরের অবস্থানে থাকা জুট স্পিনার্সের প্রতিটি শেয়ারের দর বেড়েছে ১০.৭৪ শতাংশ বা ৫ টাকা। সপ্তাহের শুরুতে এ শেয়ার ৫৫ টাকায় লেনদেন হলেও সপ্তাহ শেষে লেনদেন হয় ৫৯ টাকা ৮০ পয়সায়। একই ভাবে ঝিল বাংলা সুগারের ৯.৪৩ শতাংশ এবং দুলামিয়া কটেনের দর বেড়েছে ৭.৬৯ শতাংশ। তালিকায় থাকা অন্য কোম্পানির মধ্যে মাইডাস ফাইন্যান্সের শেয়ারের দর ৬.৫৯ এবং ফাইন ফুডের শেয়ারের দর বেড়েছে ৪.৬৫ শতাংশ। এছাড়া মেট্রো স্পিনার্সের শেয়ারের দর ৩.৯০ ও রহিমা ফুড়ের শেয়ারের দর বেড়েছে ২.৩৮ শতাংশ।
প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, পুঁজিবাজারে বেশ কিছুদিন থেকে অপেক্ষাকৃত দুর্বল কোম্পানির শেয়ারের দর বাড়ছে। অথচ এসব শেয়ারের দর বাড়ার কোন সংবেদনশীল তথ্য দিতে পারছে না প্রতিষ্ঠানগুলো। নিয়মানুযায়ী পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোন কোম্পানির শেয়ারের দর বাড়তে হলে ওই কোম্পানির কোন সংবেদশীল তথ্য থাকার কথা। কিন্তু বেশিরভাগ কোম্পানির ক্ষেত্রে তা দেখা যাচ্ছে না। একটি পর্যায়ে ওই কোম্পানির সংবেদনশীল তথ্য জানতে নোটিস পাঠায় ডিএসই ও সিএসই কর্তৃপক্ষ। এর জবাব দিতে বাধ্য হয়ে থাকে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ।
বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলে হাসান মাহমুদ নামে এক বিনিয়োগকারী বলেন, বিশেষ কোন কারণ ছাড়া দুর্বল কোম্পানির শেয়ারের দর বৃদ্ধি কখনই বাজারের জন্য ভাল খরব হতে পারে না। বরং এটা আমাদের জন্য বিপদ ডেকে আনে। এর আগেও বহুবার আমরা এ পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছি। সেজন্য এখন কোন দুর্বল কোম্পানির শেয়ারের দর বাড়লে কারসাজির আশঙ্কা থাকে। মনে হয় শেয়ার নিয়ে কোন চক্র কারসাজির ঘটনা ঘটাচ্ছে।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে জানতে ডিএসইর সাবেক প্রেসিডেন্ট শাকিল রিজভীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বর্তমানে অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারের দর ক্রয়সীমার মধ্যে রয়েছে। এর মধ্য থেকে বিনিয়োগকারীদের দেখেশুনে ভালমানের কোম্পানিতে বিনিয়োগ করা উচিত। এর পাশাপাশি কোন কোম্পানির গতিবিধি সন্দেহজনক মনে হলে বিনিয়োগকারীদের উচিত হবে ওই কোম্পানিতে বিনিয়োগ না করা। কারণ পুঁজি তাদের সেজন্য সবার আগে পুঁজির নিরাপত্তা তাদেরই ভাবতে হবে।