ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

বঙ্গবন্ধু সম্পর্কিত বাংলা ও ইংরেজী বইয়ের প্রদর্শনী

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ২ আগস্ট ২০১৬

বঙ্গবন্ধু সম্পর্কিত বাংলা ও ইংরেজী বইয়ের প্রদর্শনী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শোকের মাস আগস্টে শুরু হলো ব্যতিক্রমী এক আয়োজন। বই পাঠের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে জানার এ প্রয়াসটি নিয়েছে শাহবাগের পাঠক সমাবেশ কেন্দ্র। এক ছাদের নিচে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কিত বাংলা ও ইংরেজী বইয়ের প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে। ‘জাতির জনককে জানুন’ শীর্ষক মাসব্যাপী এ গ্রন্থমেলার সূচনা হয় সোমবার। বইমেলার এ আয়োজনে প্রতিদিন বিকেলে থাকবে বঙ্গবন্ধুর জীবনী আলোচনা ও কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠ। বিকেলে শাহবাগের বই বিতানটিতে কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠ ও আলোচনায় সাজানো হয় উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। আলোচনায় বক্তারা বলেন, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ হচ্ছে একই সত্তার দুই রূপ। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে মূলত বাংলাদেশকেই হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে চাইলেও ব্যর্থ হয়েছে ষড়যন্ত্রকারীদের সেই ঘৃণ্য প্রচেষ্টা। বাঙালী জাতিসত্তার আত্মপরিচয়ের ঠিকানা গড়ে দেয়া সেই মহামানব স্বমহিমায় অবিনস্বর হয়ে আছেন। কারণ, তিনি ধারণ করেছিলেন স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখা একটি জাতির আবেগকে। আলোচনায় অংশ নেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কবি ও গবেষক নূহ-উল-আলম লেনিন, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, সাংবাদিক ও বঙ্গবন্ধুর জীবনীকার সৈয়দ বদরুল আহসান, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিল এবং এ্যাডর্ন পাবলিকেশন্সের প্রকাশক সৈয়দ জাকির হোসাইন। শুরুতেই ছিল কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠ। বঙ্গবন্ধুর জন্ম, উত্থান, মৃত্যু ও পুনরায় জেগে ওঠার বিষয়কে উপজীব্য করে কবি মুহাম্মদ সামাদ পাঠ করেন ‘এই বাংলা মুজিবময়’ শীর্ষক কবিতা। কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা পঠিত কবিতার শিরোনাম ছিল ‘জাতির পিতা’। অনন্তকালের সেই রাজপুত্তুর শিরোনামের কবিতা পড়েন কবি আসলাম সানী। বই প্রদর্শনীর উদ্বোধনী বক্তব্যে শামসুজ্জামান খান বলেন, এটি একটি চমৎকার উদ্যোগ। অন্য প্রকাশকরাও এভাবে বড় পরিসরে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে রচিত বইয়ের প্রদর্শনীর আয়োজন করলে তা আরও ব্যাপ্তি লাভ করবে। এ ধরনের গ্রন্থমেলার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর মতো মহান নেতা সম্পর্কে জানতে পারবে নতুন প্রজন্ম। নূহ-উল-আলম লেনিন বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিষয়ে বঙ্গবন্ধু কবে থেকে চিন্তা করেনÑএ নিয়ে নানা তথ্য রয়েছে। তবে ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড ফ্রস্টকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে বঙ্গবন্ধু নিজেই বলেছেন, যেদিন থেকে পাকিস্তানের জন্ম হয় সেদিন থেকেই তাঁর স্বাধীনতার ভাবনাও বিকশিত হয়। আর এ কথার যথার্থতা মেলে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনের প্রতি আলোকপাত করলে। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে যুক্তফ্রন্টের নির্বাচন, ছয় দফা আন্দোলনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক আন্দোলন-সংগ্রামেই বঙ্গবন্ধুর ওই ভাবনার প্রকাশ ঘটে। ভাষা আন্দোলনের সময় জেলখানায় থেকেও তিনি ১৪৪ ধারা ভাঙ্গার নির্দেশ দিয়ে চিরকুট পাঠিয়েছিলেন। এসব ঘটনাই বলে দেয় পাকিস্তানের জন্মলগ্ন থেকেই বঙ্গবন্ধুর মনে রোপিত ছিল বাঙালী জাতির জন্য একটি স্বাধীন রাষ্ট্র বিনির্মাণের আকাক্সক্ষা। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে নিজের স্মৃতিচারণ করে সৈয়দ বদরুল আহসান, স্কুলে পড়ার সময়ই বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আমার সাক্ষাত হয়। তাঁর সঙ্গে করমর্দনের জন্য হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি হাত না মিলিয়ে আদর করে আমার দুই গাল মুচড়ে দেন। এরপর থেকে আমি জেনে এসেছি আমার এই গাল দুটি খুবই দামী। কারণ, এখানে স্পর্শ করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। বদরুল আহসান আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু ছিলেন প্রবল আত্মবিশ্বাসী এক মানুষ। ওই আত্মবিশ্বাসের কারণেই তিনি জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ দিয়েছিলেন। গোলাম কুদ্দুছ বলেন, বাঙালীর রাজনৈতিক জীবনের এমন কোন স্থান নেই যেখানে বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতি ছিল না। তাঁকে হত্যার মাধ্যমে বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে হত্যার চেষ্টা করা হলেও শেষ পর্যন্ত সেটা সফল হয়নি। মাহবুবুল হক শাকিল বলেন, আগস্ট মাস এলেই শহরের পাড়া-মহল্লায় তোরণের পর তোরণ দেখা যায়। সেখানে খুব ছোট করে যেন উঁকি দেয় বঙ্গবন্ধুর ছবিটি। অথচ বড় করে দৃশ্যমান হয় পাড়া-মহল্লার স্থানীয় নেতার ছবিটি। মূলত বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ নয় ব্যক্তিস্বার্থ থেকেই এ ধরনের তোরণ বা গেট করা হয়। সেই বিবেচনায় বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে এই বইয়ের প্রদর্শনীটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। পাঠক সমাবেশ কেন্দ্রের এই বই প্রদর্শনীতে ঠাঁই পেয়েছে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কিত ৩ শতাধিক বাংলা ও ইংরেজী গ্রন্থ। প্রবন্ধ, জীবনী, কবিতা, তৎকালীন রাজনৈতিক অবস্থা, বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সম্পৃক্ত বাংলাদেশের জন্মের ইতিহাসহ জাতির জনককে নিয়ে রচিত বই নিয়ে সাজানো হয়েছে একটি পৃথক কর্নার। ৩১ আগস্ট পর্যন্ত চলবে প্রদর্শনী। আয়োজনের অংশ হিসেবে প্রতিদিন বিকেল সাড়ে ৪টায় অনুষ্ঠিত হবে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আলোচনা ও কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠ। স্মরণে রণজিৎ কুমার বিশ^াস ॥ ড. রণজিৎ কুমার বিশ্বাস পেশায় আমলা হলেও মননে ছিলেন শিল্প-সংস্কৃতিমনা। সুবচনের সঙ্গে তার রচনাও সহজেই মুগ্ধ করেছে পাঠকদের। অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র সচিব বিসিএস ইনফর্মেশন এ্যাসোসিয়েশনের সদস্য এই সদ্যপ্রয়াত ব্যক্তিত্ব স্মরণে সোমবার অনুষ্ঠিত হলো আলোচনাসভা। বিকেলে বিসিএস ইনফর্মেশন এ্যাসোসিয়েশনের আয়োজনে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে এ স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়। ‘শিল্পের আলোয় বঙ্গবন্ধু’ ॥ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪১তম শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মাসব্যাপী শ্রদ্ধাঞ্জলি ‘শিল্পের আলোয় বঙ্গবন্ধু’ শীর্ষক অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে। অনুষ্ঠানমালায় রয়েছে ১-৩১ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর ওপর রচিত কবিতা ও গল্পের ওপর ভিত্তি করে একাডেমির জাতীয় চিত্রশালার ৩ নং গ্যালারিতে বরেণ্য শিল্পীদের চিত্রকর্ম প্রদর্শনী। সোমবার সকালে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন একাডেমির চারুকলা বিভাগের পরিচালক উৎপল কুমার দাস, প্রযোজনা বিভাগের পরিচালক ইকবাল হোসেন, প্রশিক্ষণ বিভাগের পরিচালক শাওকাত ফারুকসহ একাডেমির কর্মকর্তাবৃন্দ। প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে শিল্পী বীরেন সোম, আহমেদ সামসুদ্দোহা, শেখ আফজাল, শাহজাহান আহমেদ বিকাশ, মোঃ আলপ্তগীন, মোঃ কামাল উদ্দিন, ময়াজ উদ্দিন, আবুল কালাম আজাদ, মাকসুদুল আহসানসহ ১৪৮ শিল্পীর ১৫০টি চিত্রকর্ম। এর মধ্যে রয়েছে শিল্পী প্রদ্যুৎ কুমার দাসের ১টি ভাস্কর্য। শিশু একাডেমির জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচী ॥ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে ১৫ দিনব্যাপী জাতীয় শোক দিবস পালনের কর্মসূচী হিসেবে সোমবার বিকেলে বাংলাদেশ শিশু একাডেমির শেখ রাসেল মুক্তমঞ্চ ও একাডেমি মিলনায়তনের বারান্দায় বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক আলোকচিত্র ও পুস্তক প্রদর্শনীর উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধন করেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি। বিশেষ অতিথি ছিলেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসিমা বেগম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন শিশু একাডেমির পরিচালক মোশাররফ হোসেন। সভাপতিত্ব করেন শিশু একাডেমির চেয়ারম্যান কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। উদীচীর স্মরণে মোস্তফা ওয়াহিদ খান ॥ শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর প্রথম সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা ওয়াহিদ খানকে স্মরণ করল উদীচী। মোস্তফা ওয়াহিদ খানের ২৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সোমবার সন্ধ্যায় সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয় স্মরণসভা। এতে মোস্তফা ওয়াহিদ খানের জীবনের নানা সময়ের নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন উদীচীর নেতৃবৃন্দ। শুরুতেই মোস্তফা ওয়াহিদ খানের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে নীরবতা পালন করা হয়। এরপর ‘আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে’ এবং ‘ও আলোর পথযাত্রী’ গান দুটি পরিবেশন করে উদীচীর শিল্পীরা।
×