ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্বজুড়ে বড় ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকিতে এ্যানড্রয়েড স্মার্টফোন

প্রকাশিত: ০৬:০২, ২ আগস্ট ২০১৬

বিশ্বজুড়ে বড় ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকিতে এ্যানড্রয়েড স্মার্টফোন

ফিরোজ মান্না ॥ বিশ্বজুড়ে বড় ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়েছে এ্যানড্রয়েড চালিত স্মার্টফোন। রাশিয়ার ‘নিউ সিকিউর’ নামের একটি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান স্মার্টফোন নিয়ে এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। তাদের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, গুগল প্লে স্টোরে এক শ’র বেশি এ্যাপ্লিকেশনে মারাত্মক ধরনের ট্রোজেন ভাইরাস আক্রান্ত হতে পারে। গবেষণাটি প্রকাশ হওয়ার পর বিশ^জুড়ে এ্যানড্রয়েড ফোনের নিরাপত্তা নিয়ে দুশ্চিন্তা শুরু হয়েছে। দুশ্চিন্তার বড় কারণ হচ্ছে গ্রাহকের তথ্য চুরি হয়ে যাওয়া। ব্যক্তিগত তথ্য চুরির ভয়টি গবেষণায় জোর দিয়ে বলা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির গবেষণায় বলা হয়েছে, শুধু নিরাপত্তাজনিত কারণেই বর্তমানে বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় এ্যানড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম দ্রুত অজনপ্রিয় হয়ে পড়তে পারে। কোরিয়ান কোম্পানি স্যামসাং বিপদ বুঝতে পেরে তাদের তৈরি স্মার্টফোনে ‘নক্স’ নামের একটি সিকিউরিটি সফটওয়্যার নতুন ডিভাইসগুলোতে সংযোজন শুরু করেছে। গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিবেদনে নক্সকে নির্ভরযোগ্য বলা হয়েছে। এর বাইরে বাজারে পাওয়া অন্য কোন এ্যানড্রয়েড স্মার্টফোনে ডিভাইস নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কোন ধরনের সিকিউরিটি সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয়নি। এ ছাড়া ‘এ্যানড্রয়েড সার্ভিস’ নামে এ্যানড্রয়েড কিটক্যাট সংস্করণে শূল অপারেটিং সিস্টেমেই একটি এ্যাপ্লিকেশন পাওয়া গেছে যা গ্রাহকের এসএমএস, ব্যক্তিগত এ্যাকাউন্টের তথ্য, সংরক্ষিত ফোন নম্বর, ছবি, ভিডিওসহ সব ধরনের তথ্য চুরির একটি ভদ্রবেশী ম্যালওয়ার হিসেবেই চিহ্নিত হয়েছে। যদিও গুগলের ২০১৫ সালের নিজস্ব রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, এ্যানড্রয়েডের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও বেশি দৃঢ় হয়েছে। একই সঙ্গে সংরক্ষণ ব্যবস্থায় সুরক্ষাও নিশ্চিত করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান নিউ সিকিউরের ২০১৬ সালের প্রতিবেদনে বলা হয়, এখন পর্যন্ত সবচেয়ে নিরাপদ অপারেটিং সিস্টেম আইফোনে ব্যবহƒত আইওএস। নিরাপত্তার বিষয়ে সচেতন না হলে এ্যানড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহারকারীর জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বলেও উল্লেখ করা হয়। রাশিয়ার প্রযুক্তি নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান নিউ সিকিউরের গবেষক ড. ওয়েবের প্রকাশিত এক গবেষণায় জানানো হয়েছে, গুগল প্লে স্টোরে পাওয়া যাচ্ছে এমন এক শ’র বেশি এ্যাপ্লিকেশন যা বিপজ্জনক। ‘এ্যানড্রয়েড স্পাই ২২২’ নামের একটি মারাত্মক ধরনের ট্রোজেন ভাইরাস পাওয়া গেছে যা বিপজ্জনক ম্যালওয়ার হিসেবে ঢুকে পড়ছে এ্যানড্রয়েড ফোনে। চলতি বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত এ ধরনের ম্যালওয়ার যুক্ত এ্যাপ গুগল প্লে স্টোর থেকে প্রায় তিন শ’ কোটি বার ডাউনলোড হয়েছে বলে বলা হয়। ব্যাটারি ঠা-া করার এ্যাপ্লিকেশন, সুন্দর ওয়াল পেপার সেটিংসের এ্যাপ্লিকেশন, ভিডিও প্লেয়ার, মিউজিক প্লেয়ার, ইউএসবি পোর্টকে আরও সক্ষম করে তোলার এ্যাপ্লিকেশনসহ নানান এ্যাপেই যুক্ত করা হয়েছে এই ট্রোজেন ভাইরাস। একটি এ্যানড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমের অরিজিন বা মূল পরিচালনা অংশে যুক্ত হয়ে যায়। ফলে এসব এ্যাপ ইনস্টল করার পর খুব দ্রুত অনলাইনে তা ছড়িয়ে পড়ে। এই ট্রোজেন ভাইরাস সঙ্গোপনে অপারেটিং সিস্টেমকে রুট করে ফেলে(অপারেটিং সিস্টেমের নিজস্ব সংরক্ষণ ব্যবস্থা ভেঙ্গে দেয়) এবং কনট্যাক্ট, এসএমএস, ব্রাউজার, ইউএসটি টুলস প্রভৃতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে গ্রাহকের তথ্য চুরি শুরু করে। এটা ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক ঝুঁকির কারণ। গবেষণায় বলা হয়, স্মার্টফোন ব্যবহারকারীরা এই ট্রোজেন প্রবেশের কিছু লক্ষণও কোন কোন সময় টের পান। ইন্টারনেটে সংযুক্ত হলে ফোনটি হ্যাং বা আটকে যেতে শুরু করে। বিভিন্ন এ্যাপ্লিকেশনে ক্লিক করলে তা খোলার গতি কমে যায়। কখনও কখনও র‌্যামের অতিরিক্ত ব্যবহারে অপারেটিং সিস্টেম স্বয়ংক্রিয়ভাবে রিস্টার্ট নেয়। সাধারণভাবে ব্যবহারকারীরা একে অপারেটিং সিস্টেমের ত্রুটি হিসেবে দেখে থাকেন। অনেকে ফ্যাক্টরি সেটিংস অপশন ব্যবহার করে ফোনটিকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেন। কিন্ত এই ট্রোজেন ফ্যাক্টরি সেটিংসের পরও অপারেটিং সিস্টেমে থেকে যায়। এ ক্ষেত্রে ফ্লাশটুলের মাধ্যমে অপারেটিং সিস্টেম নতুন করে ইনস্টল করা হলে ওই ট্রোজেন দূর হয়। বিষয়গুলোর প্রতি গ্রাহকরা সচেতন না থাকায় ব্যবহারকারী নতুন করে ট্রোজেন যুক্ত এ্যাপ্লিকেশন আবারও গুগল প্লে স্টোর থেকে ইনস্টল করে ফেলেন। আবার তারা ওই ট্রোজেন অপারেটিং সিস্টেমে যুক্ত হয়ে যায়। গুগল স্টোরে এ ধরনের ম্যালওয়ার যুক্ত এ্যাপের উপস্থিতিতে এ্যানড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমকে বড় ধরনের বিপর্যয়ে ফেলতে পারে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এ্যানড্রয়েড স্টোরে অধিক পরিমাণে উš§ুক্ত এ্যাপ্লিকেশন সংযোজনই এ ধরনের বিপদ তৈরি করছে। এ্যানড্রয়েড সার্ভিসে ম্যালওয়ার প্রতিরোধে সক্ষম এ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার জরুরী বলে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এ্যানড্রয়েড ফোরামেই এ্যানড্রয়েডের কিটক্যাট ভার্সনের কিছু কিছু মডিফায়েড সংস্করণে যুক্ত এ্যানড্রয়েড সার্ভিস নামের একটি এ্যাপ্লিকেশনের উপস্থিতি পাওয়ার বিষয়টি বেশ আলোচিত হচ্ছে কিছুদিন ধরেই। ‘মাইক’ নামে একজন ব্যবহারকারী এ্যানড্রয়েড ফোরামে প্রথম এ্যানড্রয়েড সার্ভিসের বিপজ্জনক আচরণ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। দেশের বাজারে ওয়ালটন প্রিমো আরএম নামে একটি হ্যান্ডসেটে এই এ্যানড্রয়েড সার্ভিসের ত্রুটি পাওয়া গেছে। পরে এটি মূল অপারেটিং সিস্টেমের সঙ্গে সংযুক্ত একটি এ্যাপ। সাধারণভাবে এটি কোন অবস্থাতেই আন ইনস্টল করা যায় না। তবে ডিজঅ্যাবল বা অকার্যকর করা যায়। এ্যানড্রয়েড ফোরামের আলোচনার সূত্র ধরে একাধিক এ্যান্টি ভাইরাস ও এ্যান্টি ম্যালওয়ার সফটওয়ার দিয়ে স্ক্যান করলে এই এ্যানড্রয়েড সার্ভিসকে ম্যালওয়ার এবং ‘সাসপিসাস’ উল্লেখ করা হয়। এ বিষয়ে মোবাইল ফোন বাজারজাতকারীরা বলেন, চীনে এ্যানড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমের অসংখ্য মডিফায়েড সংস্করণ তৈরি করা হয়েছে। এগুলো খ্যাত কিংবা অখ্যাত বিভিন্ন ব্রান্ডের স্মার্টফোনে ব্যবহার করা হয়। এখান থেকেই এই এ্যানড্রয়েড সার্ভিসের মতো কিছু বিপজ্জনক এ্যাপ যুক্ত করা হয় অপারেটিং সিস্টেমে। গ্রাহক ইন্টারনেটে যুক্ত হলে এসব এ্যাপ নানা বিজ্ঞাপন এনে হাজির করে। আমদানিকারক সচেতন না হলে এসব বিপজ্জনক এ্যাপ ছড়িয়ে পড়তে পারে।
×