ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আমনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে গংশয়

বন্যায় ৬১ হাজার হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত

প্রকাশিত: ০৬:০১, ২ আগস্ট ২০১৬

বন্যায় ৬১ হাজার হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত

কাওসার রহমান ॥ বন্যায় দেশের ১৮ জেলার ৬ লাখ ৪৩ হাজার হেক্টর ফসলী জমি তলিয়ে গেছে। এরমধ্যে প্রায় ৬১ হাজার হেক্টর জমির ফসল মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আরও নতুন নতুন এলাকায় বন্যার পানি ছড়িয়ে পড়ায় ফসলের ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে। বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আমন ফসলের। ফলে আমন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। এছাড়াও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পাট, আউশ, আমনের বীজতলা, শাকসবজি, আখ, মরিচ কলা প্রভৃতি ফসল। আবহাওয়া অধিদফতর (বিএমডি), পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বুয়েটের বন্যা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীন, ভারত ও নেপাল থেকে আসা পাহাড়ী ঢলে দেশের উত্তর ও উত্তর-মধ্যাঞ্চলের ১৮টি জেলায় ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। এতে দেশের প্রায় ৩০ শতাংশ ডুবে গেছে। তারা বলছেন, চলতি বছর স্বাভাবিকের চেয়ে ৫ থেকে ৯ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হতে পারে। আর এটি হলে আগস্টে দেশে বড় ধরনের বন্যা হতে পারে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলছেন, গত দুই সপ্তাহের বন্যায় ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ১৮ জেলার ৬০ হাজার ৯৯৬ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে ফসলের ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ কত তা এখনও নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি। বন্যার পানি নেমে গেলে ফসলের ক্ষতি নিরূপণ করা হবে। এখন শুধু বন্যায় আক্রান্ত ফসলের জমির পরিমাণ নিরূপণ করা হচ্ছে। ডিএই কর্মকর্তারা আরও জানান, বন্যায় সারাদেশে চলমান আমন আবাদ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শুধু রোপণ বা আবাদকৃত জমিতেই নয়, আবাদের অপেক্ষায় থাকা জমিতে পানি বেড়ে যাওয়ায় কৃষক আমনের চারা রোপণ করতে পারছে না। ১৫ আগস্ট হচ্ছে আমন আবাদের শেষ সময়। এরপর আমনের চারা রোপণ করলে উৎপাদন কমে যাবে। তবে বন্যার পানি নেমে গেলে আগস্ট মাস পর্যন্ত কৃষক আমন আবাদের সুযোগ পাবে। এবারের বন্যায় দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ফসল আমন নিয়েই কৃষি কর্মকর্তারা শঙ্কায় আছেন বলে তারা জানান। সেক্ষেত্রে এবছর আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হতে নাও পারে। এ বছর আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫২ লাখ হেক্টর। গত ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ১২ লাখ ৪৮ হাজার হেক্টর জমিতে আগাম আবাদ হয়েছে। যে জেলাগুলো বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেগুলো হলো- কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, বগুড়া, সুনামগঞ্জ, সিলেট, সিরাজগঞ্জ, জামালপুর, নওগাঁ, টাঙ্গাইল, পঞ্চগড়, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, নাটোর, মাদারীপুর ও পাবনা। এসব জেলার ৯ হাজার ১৩৭ হেক্টর জমির আউশ, ১২ হাজার ৪৪২ হেক্টর জমির পাট, ৬ হাজার ৩৭৭ হেক্টর জমির আমন বীজতলা, ১৪ হাজার ৫১২ হেক্টর জমির বোনা আমন, ১৫ হাজার ১৬৪ হেক্টর জমির রোপা আমন, ৩ হাজার ১১০ হেক্টর জমির শাকসবজি, ১৩৫ হেক্টর জমির আখ, ১২ হেক্টর জমির মরিচ এবং ১০৭ হেক্টর জমির কলা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে আছে। এতে করে চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে কৃষকের ক্ষেত। বৃষ্টি আর উজানের ঢলে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা ও দুধকুমারসহ ১৬ নদ-নদীতে অস্বাভাবিক হারে পানি বাড়ায় ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে কুড়িগ্রামসহ উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে। গত দু’সপ্তাহ ধরে ব্রহ্মপুত্র এবং ধরলা নদীর পানি প্রবাহ বিপদ সীমার অনেক ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে জেলার ৯ উপজেলার ৫৭টি ইউনিয়নের দ্বীপচর, নদ-নদী তীরবর্তী চরসহ নিম্নাঞ্চলের প্রায় ১ হাজার ১৪৫ বর্গকিলোমিটার এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার পাট, রোপা আমন, বীজতলা, আউশ এবং পটোল, ঝিঙ্গা, ঢেঁড়স ও করলাসহ শাকসবজির ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষেতগুলো পানিতে তলিয়ে থাকায় চরম দুশ্চিন্তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে কৃষকেরা। কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ দফতরের উপ-পরিচালক মকবুল হোসেন বলছেন, এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আসন্ন রবি মৌসুমে আগাম গম, ভুট্টা, চিনাবাদাম, আলু ও সরিষা আবাদের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। জেলা কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, ৩ হাজার ৩২০ হেক্টর আমন বীজতলা, ৩ হাজার ৬৭২ হেক্টর আমন ক্ষেত, ৯৬৩ হেক্টর আউশ ক্ষেত, ১ হাজার ৩৬৬ হেক্টর শাকসবজি ক্ষেত এবং ১ হাজার ১৬০ হেক্টর পাটক্ষেত পানিতে তলিয়ে আছে। এতে ক্ষতির মুখে পড়েছেন প্রায় ২ লাখ ১৮ হাজার কৃষক। সুনামগঞ্জে পাহাড়ী ঢল আর বন্যায় মাছ, রোপা আমন ধান, বীজতলা ও সবজি ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গিয়ে প্রায় ১১ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। জেলা মৎস্য অফিসার সুলতান আহমদ জানান, জেলার উপজেলাগুলো থেকে এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী পাহাড়ী ঢল ও বন্যার পানিতে জেলার ১১টি উপজেলার ৯৭৩টি পুকুরের ৫১৬ মে. টন মাছ ভেসে গেছে। যার মূল্য ৭ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। পানি কমলে এর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ পুরোপুরি নিরূপণ করা যাবে। সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর উপ-পরিচালক জাহিদুল হক জানান, এ পর্যন্ত তথ্যানুযায়ী ১৮৭৩ হেক্টর জমির আউশ ধান, রোপা আমন ধান, বীজতলা ও সবজি ক্ষেতের ক্ষতি হয়েছে। সবজি ক্ষেত সম্পূর্ণ নষ্ট এবং বীজতলা, রোপা আমন ও আউশ ধান আংশিক নষ্ট হয়েছে। জেলার মৎস্য চাষী ও কৃষকরা তাদের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে বিনামূল্যে মাছের পোনা, ধানের বীজ ও সার প্রদানের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে।
×