ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

‘হ্যালো সিটি’ এ্যাপসে ব্যাপক সাড়া

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ২ আগস্ট ২০১৬

‘হ্যালো সিটি’ এ্যাপসে ব্যাপক সাড়া

আজাদ সুলায়মান ॥ ব্যাপক সাড়া মিলছে পুলিশের ‘হ্যালো সিটি’ এ্যাপসে। উদ্বোধনের প্রথমদিনেই দুই শতাধিক গোপন অভিযোগ পড়েছে। ঘরে বসে নিজের পরিচয় গোপন রেখে এই এ্যাপসে জঙ্গীবাদ, সাইবার ক্রাইমসহ পাঁচ ধরনের তথ্য দিতে পারছেন যে কেউ। প্রথম দিন প্রাপ্ত অভিযোগগুলোর মধ্যে তিনটি বাড়িতে ভাড়াটেদের সন্দেহভাজন চলাফেরার তথ্য রয়েছেন। এছাড়া কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে অভিযোগ পড়েছে। এসব অভিযোগ তদন্তে নেমেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক ইউনিট। জানা যায়, পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের ‘হ্যালো সিটি’ এ্যাপস চালু হওয়ার দ্বিতীয় দিন সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত যেসব অভিযোগ পড়েছে- তার মধ্যে ভাড়াটিয়া ও বাড়িওয়ালা সংক্রান্ত তথ্যাবলী আলাদা করা হচ্ছে। এ্যাপস সূত্রে জানা যায়, এটি চালু হওয়ার পর সর্বপ্রথম তথ্য প্রদানকারী একটি বাড়ির সন্দেহভাজন ভাড়াটিয়াদের বিষয়ে তথ্য দিয়েছেন। ওই অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে পুলিশ ইতোমধ্যে কাজও শুরু করেছে। এ বিষয়ে একজন পুলিশ কর্মকর্তা জানান, এ্যাপসটি ওপেন হওয়ার পর গত ৩০ ঘণ্টায় তারা দুই শতাধিক তথ্য পেয়েছেন। প্রথম তথ্যপ্রদানকারী একটি বাড়িতে থাকা ভাড়াটিয়াদের বিষয়ে তথ্য দিয়েছেন। ওই বাড়িটি পুরান ঢাকার দীননাথ সেন রোডে। বছর খানেক ধরে ওই বাড়িতে পাঞ্জাবি পাজামা পরিহিত ও দাড়িওয়ালা লোকজনের রহস্যজনক আনাগোনা মহল্লাবাসীর চোখে পড়ে। প্রতিবেশীরা এ নিয়ে প্রায়ই নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতেন। ওই বাড়িটির ঠিকানাও দিয়েছেন তথ্যপ্রদানকারী। পুলিশ গতকালই ওই মহল্লায় গিয়ে নজরদারি শুরু করেছে বলে জানা যায়। এছাড়াও ঢাকার চারটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সহায়তা কোমলমনা শিক্ষার্থীদের উগ্রপন্থী সম্পর্কে হাতে-কলমে শিক্ষা দেয়ার মতোও তথ্য জমা পড়েছে। পুলিশ হ্যালো সিটি-তে প্রাপ্ত এ ধরনের অভিযোগগুলো সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইউজিসিতে পাঠিয়ে খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছে। উল্লেখ্য, রাজধানীতে এর আগে গত মাসে এ ধরনের একটি এ্যাপস চালু করে র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। রিপোর্ট টু র‌্যাব- নামের এই এ্যাপসে অপরাধ সংক্রান্ত যে কোন তথ্য ছবিসহ র‌্যাবকে জানানো যায়। র‌্যাব ইতোমধ্যে চার হাজারেরও বেশি অভিযোগ গ্রহণ করেছে। এসব অভিযোগ সম্পর্কে পরিচালক (গণমাধ্যম) কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান জনকণ্ঠকে বলেন, অভিযোগ সব ধরনেরই মিলছে। মানুষের সাড়াটাও বেশ আশাব্যঞ্জক বলে মনে হচ্ছে। সব অভিযোগই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কারণ অনেকে আবার মিথ্যা অভিযোগও করছে। সেজন্যই অভিযোগগুলো এলাকাভেদে সংশ্লিষ্ট ব্যাটালিয়নে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। উল্লেখ্য, র‌্যাবের অনুকরণেই এবার মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ‘হ্যালো সিটি’ এ্যাপসটির উদ্বোধন করেন। রবিবার দুপুরেই এটি রাজধানীবাসীর জন্য উন্মুক্ত করা হয়। যে কোন স্থানে বসেই গুগল প্লে স্টোর থেকে এ্যাপসটি সহজেই ডাউনলোড করে নিতে পারবে যে কেউ। চারটি বিভাগে বিভক্ত এ্যাপসটিতে পাঁচটি বিষয়ে তথ্য দেয়া যাবে। এগুলো হলোÑ জঙ্গীবাদ বা উগ্রবাদ, সাইবার ক্রাইম, বোমা-বিস্ফোরক-অস্ত্র-মাদক এবং আন্তঃদেশীয় অপরাধ বা জালিয়াতি। তথ্য প্রদানকারী ব্যক্তি ইচ্ছা করলে তার পরিচয় গোপন করে এখানে তথ্য দিতে পারবেন। এছাড়াও পুলিশের তথ্য ও মোস্ট ওয়ান্টেড ব্যক্তির বিষয়েও তথ্য জানা যাবে এই এ্যাপসটিতে। এমনকি কোন নাগরিক তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সংক্রান্ত হুমকির মধ্যে থাকলেও ব্যক্ত করতে পারবেন এটিতে। এ সম্পর্কে এ্যাপসটির প্রধান ও ডিএমপির অতিরিক্ত উপকমিশনার মোঃ ছানোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, অনেক গবেষণা করে এই এ্যাপসটি প্রস্তুত করা হয়েছে। তথ্যপ্রদানকারী সহজেই এখানে তথ্য দিতে পারবেন। যে কোন পরিস্থিতিতে যে কেউ তথ্য দিতে পারবেন। প্রাথমিকভাবে এ্যাপসটির শুধু এ্যান্ড্রয়েড ভার্র্সন প্রকাশ করা হচ্ছে। এক সপ্তাহ পর উইন্ডোজ ভার্সন আসবে। এই এ্যাপসটির মাধ্যমে যে কেউই দেশ বা বিদেশ থেকে অপরাধের তথ্য জানাতে পারবেন। সেক্ষেত্রে তার পরিচয় বা মোবাইল নম্বর দেয়া বাধ্যতামূলক নয়। এদিকে এ ধরনের এ্যাপসে প্রতিপক্ষকে হয়রানি করারও যথেষ্ট সুযোগ থাকায় তা অপব্যবারের আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছেন কেউ কেউ। বর্তমানে দেশজুড়ে জঙ্গীবাদের অপবাদ দিয়ে সহজেই প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার সুযোগ রয়েছে। এ বিষয়টি বিবেচনায় রেখে পুলিশকে সতর্ক ও পেশাদার হবার অনুরোধ জানিয়েছেন সাবেক পুলিশ প্রধান।
×