ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ইন্টারনেট সাময়িক বন্ধের মহড়া

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ২ আগস্ট ২০১৬

ইন্টারনেট সাময়িক বন্ধের মহড়া

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিশেষ পরিস্থিতি মোকাবেলায় রাজধানীর যে কোন জায়গায় দু’একটি এলাকায় সোমবার ইন্টারনেট সাময়িক বন্ধের মহড়া দিয়েছে টেলিকম সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো। বিকেল সাড়ে পাঁচটা থেকে রাত দুটোর মধ্যে এই মহড়া চালানো হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের মহড়ার মতোই টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেট সেবা বন্ধে সাময়িক মহড়া বা ড্রিলের আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এ তথ্য জানায়। বিটিআরসি চেয়ারম্যান প্রকৌশলী ড. শাহজাহান মাহমুদ ইন্টারনেট বন্ধের মহড়া সম্পর্কে বলেন, অফিস ছুটির পর বিকেল থেকে মধ্যরাতের মধ্যে যে কোন এলাকায় ইন্টারনেট ১০ থেকে ১৫ মিনিটের জন্য বন্ধ রাখা হবে। যে কোন এলাকায় ৩০ মিনিটেরও বেশি সময় ইন্টারনেট বন্ধ থাকবে। গুলশান হলি আর্টিজানে হামলার সময় ইন্টারনেট দ্রুত বন্ধ করা যায়নি। কারণ কোন প্রতিষ্ঠান কাকে সেবা দিচ্ছে এটা তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়নি। এ ধরনের বিপর্যয় এড়াতে যাতে তাৎক্ষণিক একযোগে ইন্টারনেট বন্ধ করা যায়, সেজন্যই এমন একটি মহড়ার আয়োজন করা হয়েছে। বিটিআরসির পক্ষ থেকে এই মহড়াকে কারিগরি সহযোগিতা দেয়া হবে। মূল কাজ করবে মোবাইল অপারেটর ও ইন্টারনেট সেবা দাতা প্রতিষ্ঠানগুলো। মোবাইল ইন্টারনেট থেকে শুরু করে তারযুক্ত ইন্টারনেটসহ (ফিক্সড ব্রডব্র্যান্ড) সব ধরনের ইন্টারনেট সেবা এই মহড়ার অন্তর্ভুক্ত হবে। বিটিআরসি সূত্রমতে, বর্তমানে দেশে ২৭ ইন্টারনেট গেটওয়ে প্রতিষ্ঠান ও ৪৯০ ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোপাইডর (আইএসপি) ইন্টারনেট সেবা দিচ্ছে। এর বাইরে নেশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন) প্রতিষ্ঠানগুলোও ইন্টারনেট সেবা দিয়ে আসছে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানই এই মহড়ায় অংশ নিচ্ছে। ইন্টারনেট গেটওয়েসহ (আইআইজি) অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আইআইজি, আইএসপি, নেশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন) প্রতিষ্ঠানগুলো বিটিআরসির নির্দেশ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এলাকায় ইন্টারনেট বন্ধ করে দেবে। বিকেল সাড়ে পাঁচটা থেকে রাত দুটোর মধ্যে এই কাজটি করা হবে। আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি। বিটিআরসির সঙ্গে সমন্বয়ের ভিত্তিতে কাজটি করতে বিটিআরসির কারিগরি সহযোগিতার প্রয়োজন হবে। রবিবার বিটিআরসির কার্যালয়ে মহড়ার বিষয়ে একটি বৈঠক হয়। বৈঠকে মহড়ার দেয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়। বৈঠকে বিটিআরসিসহ মোবাইল অপারেটর, ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান (আইএসপি), আন্তর্জাতিক গেটওয়ে (আইজিডব্লিউ) অপারেটরসহ সংশ্লিষ্ট টেলিযোগাযোগ সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিরা অংশ নিয়েছিল। এই মহড়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও অংশ নিচ্ছে। বৈঠকে আলোচনা হয় বিশেষ পরিস্থিতিতে জঙ্গী ও সন্ত্রাসীদের যোগাযোগের পথ বন্ধে ইন্টারনেট সেবা তাৎক্ষণিক বন্ধ করে দেয়া হবে। যাতে কোন জঙ্গীগোষ্ঠী বা সন্ত্রাসীরা ইন্টারনেট ব্যবহার করতে না পারে। তারা ইন্টারনেট ব্যবহার করে অপরাধের ভয়াবহ চিত্র যাতে বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়াতে না পারে সেটিই নিশ্চিত করা হবে। বিটিআরসির সচিব সারোয়ার আলম বলেন, মহড়াটি অনেক বড় এলাকা নিয়ে করা হবে না। খুবই অল্প এলাকায় তাৎক্ষণিক ইন্টারনেট কিছু সময়ের জন্য বন্ধ করা হবে। তবে ঠিক কোন কোন এলাকায় এই মহড়া চলবে তা কাউকে জানানো হচ্ছে না। কারণ ওই এলাকার গ্রাহকরা কিছু সময়ের জন্য হলেও বঞ্চিত হবে। যাতে তারা এই মহড়াকে স্বাভাবিকভাবে নিতে পারে। যদি এলাকা ঘোষণা করা হতো, তাহলে নানা কথা উঠত। তাছাড়া মহড়াটি গভীর রাতে করা হবে। যদিও আমরা বলেছি বিকেল সাড়ে পাঁচটা থেকে রাত দুইটার কথা। গ্রাহকরা জানবেনই না কখন এই মহড়াটি চলেছে। উল্লেখ্য, গত ১ জুলাই রাতে জঙ্গী হামলায় দেশী-বিদেশী ২২ জনকে হত্যা করা হয়। বীভৎস সেই হত্যাকা-ের ছবি জঙ্গীরা বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। তারা তাৎক্ষণিকভাবে থ্রিমা ও উইকার নামে দুটি এ্যাপস ডাউনলোড করে একের পর এক ছবি পাঠাতে থাকে। আর ওই ছবি রাতেই আইএস নিয়ন্ত্রিত সাইটে ইন্টেলিজেন্সে প্রকাশ করা হয়। পরে সেনা অভিযানে ৬ জঙ্গী নিহত হয়। এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলা করতেই ইন্টারনেট বন্ধের এই মহড়া চালানো হয়েছে।
×