ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মৌর্যযুগেও সুন্দরবনে মানুষের বসবাস ছিল

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ২ আগস্ট ২০১৬

মৌর্যযুগেও সুন্দরবনে মানুষের বসবাস ছিল

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ সুন্দরবনে মিলল প্রাচীন সভ্যতার প্রমাণ। ম্যানগ্রোভ অরণ্যে ঘেরা এই জনবসতিতে এমন কিছু প্রতœতাত্ত্বিক নিদর্শন মিলেছে, যা থেকে মৌর্যযুগেও সুন্দরবনে মানুষের বসবাস ছিল বলে বোঝা যায়। অন্তত ৩২২-১৮৫ খ্রীস্টপূর্বাব্দের এই সভ্যতা অন্তত ৫০০-৬০০ বছর পর্যন্ত ছিল বলে মনে করা হচ্ছে। খবর এই সময়’র। এতদিন পর্যন্ত সুন্দরবনের গভীর অরণ্যকে মানুষের বাসযোগ্য করে তোলার কৃতিত্ব দেয়া হতো ব্রিটিশদেরই। ১৭৫৭ সালে মুঘল বাদশা দ্বিতীয় আলমগীরের কাছে থেকে সুন্দরবন হস্তান্তর করে নেয় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। এরপর ১৭৬৪ সালে প্রথম দেশের মানচিত্রে স্থান পায় সুন্দরবনের অবস্থান। কিন্তু বর্তমান আবিষ্কারে স্পষ্ট যে তার অনেক আগে থেকেই সুন্দরবনে মানুষের বসবাস ছিল। তবে কী করে এই সভ্যতা আধুনিক যুগের প্রারম্ভে এসে হারিয়ে গেল তা এখনও স্পষ্ট নয় পুরাতত্ত্ববিদদের কাছে। বিশেষজ্ঞ ফণীকান্ত মিশ্র জানিয়েছেন, এই মিসিং লিঙ্ককে খুঁজে বের করাই এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ। সুন্দরবনের ঐতিহাসিক গুরুত্ব আবিষ্কারের নেপথ্যে যে মানুষটির অবদান সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য তিনি কোন পুরাতত্ত্ববিদ বা ঐতিহাসিক নন। তিনি সামান্য একজন মৎস্যজীবী বিশ্বজিৎ সাহু। মাছ ধরার জন্য সুন্দরবনের বিভিন্ন দ্বীপে ঘুরে বেড়াতে হয় তাঁকে। নানা সময় খুঁজে পাওয়া টেরাকোটার খেলনা, প্রাচীন পুঁতির মালা, পেনড্যান্টের মতো বেশ কিছু জিনিস সংগ্রহ করেন তিনি। এ সবের সঠিক অর্থ বুঝতে না পারলেও, এগুলো নষ্ট করে না ফেলে নিজের সংগ্রহে রাখতেন বিশ্বজিৎ। এভাবে প্রায় ১৫ হাজার প্রাচীন নিদর্শন সংগ্রহ করেন তিনি। যার নেতৃত্বে পাথর প্রতিমায় পুরাতাত্ত্বিক খনন চলছে, সেই ফণীকান্ত মিশ্র বলেছেন, ‘সাহু না পুরাতত্ত্ব সম্পর্কে কিছু জানেন, না মৌর্যযুগ সম্পর্কে তাঁর কোন ধারণা আছে। তবু নিজের বুদ্ধিতেই এই সব তিনি নষ্ট না করে ফেলে যতেœ নিজের কাছে রেখে দিয়েছিলেন। তার জন্যই এই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উদ্ঘাটিত হল।’ প্রাচীন খেলনা ঘর-সংসারের সামগ্রী ছাড়াও বেশ কিছু মানুষের মাথার খুলি, হাড়ের টুকরো বিশ্বজিতৎ সংগ্রহ করে রাখেন। এ সব প্রাচীন সভ্যতার বাসিন্দাদের নিদর্শন বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। ফণীকান্ত মিশ্রর মতে, সুন্দরবনের এই সভ্যতা মৌর্য যুগে শুরু হয়ে সুঙ্গা যুগ পেরিয়ে গুপ্ত যুগের প্রথমদিকেও বজায় ছিল। গুপ্ত যুগের শেষের দিকে কোনভাবে এই সভ্যতা ধ্বংস হয়ে যায় বলে মনে করা হচ্ছে।
×