ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শোকের মাস

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ২ আগস্ট ২০১৬

শোকের মাস

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ “হে মহান, মহাবীর/গর্ব তুমি বাঙালি জাতির/তুমিই তো জাতির পিতা/বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।/তুমি রবে ততদিন/বাঙালি জাতির হৃদয়ে/যতদিন তোমার অর্জিত বাংলার পতাকার/সেই লাল রক্তিম সূর্য উদ্দীপ্ত হবে/বাংলার পূর্ব আকাশে।” রক্তাক্ত-কলঙ্কিত আগস্টের মাসব্যাপী শোকের কর্মসূচীর সূচনা দিন সোমবার ঢাকাসহ পুরোদেশ ছিল শোকাচ্ছন্ন পরিবেশ। সর্বত্র শোকের কালো পতাকা। হাতে হাতে জাতির জনকের ছবি। বুকে কালোব্যাজ। স্বেচ্ছায় রক্তদান করে স্বাধীনতার স্থপতি ও সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা। আলোক শিখা প্রজ্বলন করে দৃপ্ত শপথে পলাতক খুনী, যুদ্ধাপরাধী ও রাজাকার-আলবদরদের বিরুদ্ধে তীব্র ঘৃণা-ধিক্কার, পলাতক খুনীদের ফিরিয়ে এনে ফাঁসি কার্যকর এবং জঙ্গী-সন্ত্রাসী ও তাদের মদদদাতাদের নির্মূলের সোচ্চার দাবি। আওয়ামী লীগসহ অগণিত সংগঠন নানা কর্মসূচীর মাধ্যমে পালন করেছে শোক কর্মসূচীর প্রথম দিন। ‘দ্রোহের আগুনে পুড়ে হোক ছারখার, যতসব বঙ্গবন্ধুর খুনী-যুদ্ধাপরাধী-রাজাকার’Ñ এই সেøাগানে আগস্টের প্রথম প্রহর ১২টা ১ মিনিটে ধানম-ির ঐতিহাসিক ৩২ নম্বর বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের সামনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন, হাজারো মোমবাতি প্রজ্বলন, আলোর মিছিলের মাধ্যমে শোকের মাসব্যাপী কর্মসূচীর সূচনা করে আওয়ামী লীগসহ তার সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনগুলো। বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদনের পর জঙ্গী-সাম্প্রদায়িকতামুক্ত বাংলাদেশ গঠনের দৃপ্ত শপথে হাজারো নেতাকর্মী প্রজ্বলিত আলোক শিখা নিয়ে মিছিলও করেছেন। অসংখ্য সংগঠন প্রথম প্রহরেই শ্রদ্ধা জানিয়েছেন জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও আগস্টের প্রথম দিন সোমবার বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত ধানম-ির ৩২ নম্বর বাসভবনের সামনে স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচী ও আলোচনা সভার আয়োজন করে কৃষক লীগ। আর এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বঙ্গবন্ধুর কন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শোককে শক্তিতে পরিণত করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে দেশবাসীর অব্যাহত সমর্থন ও সহযোগিতা কামনা করেন। আলোচনা সভার পর কৃষক লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা নিজের দেহ থেকে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক ব্যাগ করে রক্তদান করেন। বঙ্গবন্ধু গবেষণা পরিষদের মাসব্যাপী শোকের কর্মসূচীর উদ্বোধন করেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার। তিনি বলেন, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ দমনে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। ধর্মের নামে যারা সন্ত্রাসে লিপ্ত তারা ধর্ম ও মানবতার শত্রু। সংগঠনের আহ্বায়ক লায়ন গনি মিয়া বাবুলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন নুরজাহান বেগম মুক্তা এমপি, পুলিশের সাবেক ডিআইজি তোফাজ্জল হোসেন প্রমুখ। রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট আয়োজিত শোক দিবসের আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আজ যারা দেশে ধর্মের নামে মানুষ হত্যা করে তারা একাত্তর ও পঁচাত্তরের খুনীচক্রের চেতনাধারী। তখনও তারা ইসলামের নাম দিয়ে মানুষ হত্যা করা হয়েছে। এখনও ধর্মের নামেই গুপ্তহত্যা, জঙ্গী হামলার মাধ্যমে মানুষ হত্যা করছে। এবারও আগস্টে দেশে বিশৃঙ্খলা হতে পারে এমন আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি দেশবাসীকে সতর্ক ও ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান। আয়োজক সংগঠনের ঢাকা মহানগরের সভাপতি জামাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য সুজিত রায় নন্দী, সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি চিত্রনায়ক ফারুক, সাধারণ সম্পাদক ফাল্গুনী হামিদ প্রমুখ। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের নাজমুল করিম স্টাডি সেন্টারের উদ্যোগে আর সি মজুমদার আর্টস মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশের রাজনীতি : না জানা কিছু কথা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যাকারী চক্রান্ত উদঘাটনে এবং ষড়যন্ত্রকারীদের চিহ্নিত করতে কমিশন গঠন করার আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার ঘটনা কেবলমাত্র হত্যাকা- নয়। এটা জাতিগত অস্তিত্বের সঙ্গে জড়িত। অনেক তথ্য আজও অজানা, অনেক তথ্য আজও অনেকের স্মৃতিতে রয়েছে। সেই সব তথ্য উদঘাটন করে ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যারা জড়িত ছিল তাদের চিহ্নিত করে বিশ^াসঘাতকদের মুখোশ উন্মোচন করতে হবে। নাজমুল করিম স্মারক বক্তৃতা প্রদান করেন লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ। বিভিন্ন সাক্ষাতকার এবং স্মৃতিচারণ উদ্ধৃত করে ১৯৭৩ সালের পর থেকে ২০১৪ পর্যন্ত বাংলাদেশের রাজনীতির নানা ঘটনার নেপথ্যের অনেক অজানা তথ্য উপস্থাপন করেন তিনি। শোকের মাস উপলক্ষে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে আলোচনা সভার আয়োজন করে বঙ্গবন্ধু পরিষদ। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ও সভার সভাপতি ডাঃ এস এ মালেক। প্রধান আলোচক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে আজাদ চৌধুরী। আলোচনায় অংশ নেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুল খালেক, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি শফিকুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাদেকা হালিম, অধ্যাপক. ড. আনোয়ার হোসেন, অধ্যাপক আফম ফারুক, ড. মসিউর রহমান, মোঃ খালেদ ইব্রাহিম, সাংবাদিক নেতা কুদ্দুস আফ্রাদ প্রমুখ। কে আজাদ চৌধুরী বলেন, প্রতি বিপ্লবীরা পর্যায়ক্রমে সত্যকে আড়াল করে মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছে বলেই আজ জঙ্গীবাদের বিস্তার ঘটছে। তবে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের লড়াইয়ের কাছে সবকিছু তলিয়ে যাবে এবং বাঙালী জাতি মাথা উঁচু করে সাহসী জাতি হিসেবে বীরের মতোই ঘুরে দাঁড়াবে। আর এর মাধ্যমে দেশের অগ্রযাত্রা কেউ বাধাগ্রস্ত করতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি তা রুখে দেবে। মূল প্রবন্ধে ডাঃ এস এ মালেক বলেন, একাত্তরের সাম্রাজ্যবাদী চক্রান্ত বাংলাদেশকে পিছনে টেনে ধরতে এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক দ্রুত উন্নয়নের ধারা অবরুদ্ধ করতে জঙ্গীবাদের তৎপরতা চালাচ্ছে। আজ সময় এসেছে নতুন করে একাত্তরের চেতনায় ঐক্যবদ্ধ হওয়ার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করতে সকলের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
×