ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বহিষ্কৃত ছাত্রলীগ নেতার নেতৃত্বে গুলি, নিহত ১

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ২ আগস্ট ২০১৬

বহিষ্কৃত ছাত্রলীগ নেতার নেতৃত্বে গুলি, নিহত ১

নিজস্ব সংবাদদাতা, কুমিল্লা, ১ আগস্ট ॥ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে শোকের মাস আগস্টের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে মোমবাতি প্রজ্বলনের পর ছাত্রলীগের বিবদমান দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ও গুলি বর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে খালিদ সাইফুল্লাহ নামে এক ছাত্রলীগ নেতা নিহত হয়েছেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের সপ্তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও কবি নজরুল হলের ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। গত রবিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় সোমবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সিন্ডিকেটের জরুরী সভা করে দুপুরের মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে এবং ঘটনার তদন্তে ৩ সদস্যের কমিটি গঠন করে। এদিকে সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩টি হলে পুলিশ ব্যাপক তল্লাশী চালিয়ে বিদেশী পিস্তলসহ বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করে। জানা যায়, শোকের মাস আগস্টের প্রথম প্রহরে রবিবার রাত ১২টা ১ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হলে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে মোমবাতি প্রজ্বলনে অংশগ্রহণ করে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের বিবদমান দুইটি পক্ষ। এতে কাজী নজরুল ইসলাম হলের প্রাধক্ষ্য মেহেদী হাসান ও আবাসিক শিক্ষক মোহাম্মদ নাসির হুসেইন, সহকারী প্রক্টর আজমাইন মোহতাসিম মীরসহ কয়েকজন শিক্ষকও অংশগ্রহণ করেন। মোমবাতি প্রজ্বলন শেষে শিক্ষকরা চলে গেলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি নাজমুল হাসান আলিফ ও সাধারণ সম্পাদক রেজা-ই-এলাহীর পক্ষ এবং শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত নেতা ইলিয়াস হোসেন সবুজ সমর্থিত সহ-সভাপতি রুপম দেবনাথ ও যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম মাজেদের পক্ষের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ বাধে। শিক্ষার্থীরা জানায়, রাত সাড়ে ১২টার দিকে ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত নেতা ইলিয়াস হোসেনের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের ৫০-৬০ কর্মী বঙ্গবন্ধু হলে যায় এবং হলের ভেতরে নাজমুল হাসান আলিফ ও সাধারণ সম্পাদক রেজা-ই-এলাহীর পক্ষের ছাত্রদের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এ সময় এলোপাতাড়ি গুলিবিনিময়ের ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে কবি নজরুল হলের ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের সপ্তম ব্যাচের শিক্ষার্থী খালিদ সাইফুল্লাহর মাথায় গুলি লাগে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে প্রথমে কুমিল্লার একটি হাসপাতালে এবং পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে সোমবার ভোরে সে মারা যায়। নিহত খালিদ জেলার দাউদকান্দি উপজেলার তুজারভাঙ্গা গ্রামের জয়নাল আবেদীনের ছেলে এবং সে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের ইলিয়াছ হোসেন সবুজ গ্রুপ সমর্থিত। এ ঘটনায় আরও কমপক্ষে ১৫ জন আহত হয়েছে। এদের মধ্যে গুরুতর আহত আসাদুল ইসলাম রনি, রিয়াজ উদ্দিন, নওশাদকে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অপর আহতদের স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষ ও গুলির ঘটনায় ছাত্রলীগের উভয়গ্রুপ পরস্পরকে দায়ী করে। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল হাসান বলেন, শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত নেতা ইলিয়াস হোসেন সবুজের নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধু হলে ঢুকে হামলা চালানো হয়েছে। আমরা ছিলাম নিরস্ত্র। এ অভিযোগ অস্বীকার করে ইলিয়াস হোসেন সবুজ বলেন, বিপ্লব নামের বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের এক শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগকর্মী বহিরাগত যুবকদের নিয়ে তাদের ওপর হামলা চালায়। সংঘর্ষের একপর্যায়ে প্রক্টরিয়াল বডির সদস্য ও পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনার পর সোমবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি সিন্ডিকেটের জরুরী সভা করেন। ওই সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এছাড়া আবাসিক হলের ছাত্রদের বেলা ১১টার মধ্যে এবং ছাত্রীদের বেলা ২টার মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ দিলে শিক্ষার্থীরা হল ছেড়ে চলে যায়। কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (দক্ষিণ) আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে কয়েক দিন ধরে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা চলছিল বলে জানতে পেরেছি। এ ঘটনায় একজন ছাত্র নিহত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের ৩টি হলে ব্যাপক তল্লাশি চালিয়ে ৭.৬ বোরের একটি বিদেশী পিস্তল, দুই রাউন্ড গুলি, একটি ম্যাগজিন, চাপাতি, কিরিচ, চায়নিজ কুড়ালসহ ১৩০টি বিভিন্ন ধরনের দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কয়েকজনকে আটক করা হয়। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. আলী আশরাফ জানান, ঘটনার তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর কু-ু গোপী দাসকে প্রধান করে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত রিপোর্ট পেশ করতে বলা হয়েছে। এদিকে সোমবার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করার পর নিহতের লাশ দাউদকান্দির পৌর এলাকার তুজারভাঙ্গা গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসা হলে সেখানে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতাড়না হয়। পরে বাদ আসর জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। বিকেলে কুমিল্লার পুলিশ সুপার মোঃ শাহ আবিদ হোসেন জানান, এ ঘটনার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১২ জনকে আনা হয়েছে। তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বিকেল ৬টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত থানায় মামলা হয়নি।
×