ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কিছু পেপার বুক প্রস্তুত

জঙ্গীদের ডেথ রেফারেন্স দ্রুত নিষ্পত্তির উদ্যোগ সুপ্রীমকোর্টের

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ২ আগস্ট ২০১৬

জঙ্গীদের ডেথ রেফারেন্স দ্রুত নিষ্পত্তির উদ্যোগ সুপ্রীমকোর্টের

আরাফাত মুন্না ॥ মৃত্যুদ-প্রাপ্ত জঙ্গীদের ডেথ রেফারেন্স ও আপীল দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য এসব মামলা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শুনানির উদ্যোগ নিয়েছে সুপ্রীমকোর্ট। এই উদ্যোগের ধারাবাহিকতায় চাঞ্চল্যকর এসব হত্যা মামলার পেপারবুক (মামলার রায়সহ সকল নথি সংবলিত বই) বিশেষ ব্যবস্থায় প্রস্তুত করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে বেশকিছু মামলার পেপারবুক সুপ্রীমকোর্টের নিজস্ব উদ্যোগে প্রস্তুতও করা হয়েছে। পেপারবুক প্রস্তুত হয়ে যাওয়ার পরই তা শুনানির জন্য হাইকোর্টের ডেথ রেফারেন্স বেঞ্চে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। এছাড়া এ ধরনের যেসব মামলার পেপারবুক প্রস্তুত হয়নি সেগুলোও প্রস্তুত করা হচ্ছে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে। ফলে বিচারপ্রার্থী জনগণকে সালের ক্রম অনুযায়ী জঙ্গীদের ডেথ রেফারেন্স ও আপীল মামলা নিষ্পত্তির জন্য আর অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে না। গতি আসছে কুখ্যাত জঙ্গীদের এসব মামলার শুনানিতে। সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে মন্দিরের পুরোহিত হত্যার ঘটনা বৃদ্ধি পায়। কুপিয়ে ও গুলি করে তাদের হত্যা করা হয়। এছড়া গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় ভয়াবহ জঙ্গী হামলার ঘটনা ঘটে। ওই দুটি ঘটনায় দেশী-বিদেশী নাগরিকসহ নিহত হয় ৩০ জনের মতো। এ ধরনের জঙ্গী হামলার ঘটনার প্রেক্ষিতে সরকারের পক্ষ থেকে জঙ্গী হামলা সংশ্লিষ্ট স্পর্শকাতর মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। সুপ্রীমকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানান, জঙ্গীদের ডেথ রেফারেন্স ও আপীল দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে পেপারবুক প্রস্তুতের জন্য কাজ করছে সুপ্রীমকোর্ট প্রশাসন। ইতোমধ্যে এ ধরনের বেশ কয়েকটি মামলার পেপারবুক প্রস্তুত করে তা নিষ্পত্তির জন্য হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চে পাঠানো হয়েছে। ২০০১ সালে বাংলা নববর্ষের প্রথম প্রহরে রমনা বটমূলে ভয়াবহ বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় করা হত্যা মামলায় দীর্ঘ ১৪ বছর পর ২০১৪ সালে ঢাকার একটি আদালত হরকাতুল জিহাদ (হুজি) নেতা মুফতি হান্নানসহ আটজনকে মৃত্যুদ- দেয়। যাবজ্জীবন কারাদ- দেয়া হয় আরও ৬ জনকে। মৃত্যুদ-ের এ রায় অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স আকারে তা হাইকোর্টে আসে। পাশাপাশি আসামিরা খালাস চেয়ে আপীল করেন। এরপরই সুপ্রীমকোর্টের উদ্যোগে বিশেষ ব্যবস্থায় এ মামলার পেপারবুক দ্রুত প্রস্তুত করা হয়। পেপারবুক প্রস্তুতের পরই তা বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠানো হয়। এ প্রসঙ্গে ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল শেখ একেএম মনিরুজ্জামান কবির বলেন, আগামী সপ্তাহে মামলাটির শুনানি শুরু হতে পারে। হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্সের শুনানি সালের ক্রম অনুসারে হয়ে থাকে। ৪/৫টি বেঞ্চে প্রতি বছরে ৭০ থেকে ৮০টি ডেথ রেফরেন্সের শুনানি হয়ে থাকে। বর্তমানে ২০১১ সালের ডেথ রেফারেন্স মামলার শুনানি চলছে। এ হিসেবে নিম্ন আদালতে রমনা বটমূলে বোমা হামলা মামলার রায় হয়েছে ২০১৪ সালে। ফলে স্বাভাবিক হিসেবে এ মামলার ডেথ রেফারেন্স নিষ্পত্তির জন্য ২০১৯ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতো। কিন্তু অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পেপারবুক প্রস্তুত করায় এটি চলতি বছরের আগস্ট মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি হবে। এদিকে গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী ও ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার শোভন হত্যার ঘটনায় করা মামলায় মূল পরিকল্পনাকারী রেদোয়ানুল আজাদ রানা ও ফয়সাল বিন নাইম ওরফে দ্বীপকে মৃত্যুদ- দেয়া হয়। এরা দু’জনই নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। এছাড়া মাকসুদুল হাসান অনিককে যাবজ্জীবন এবং নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান মুফতি মোঃ জসীমউদ্দিন রাহমানীসহ ৫ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদ- দেয় আদালত। গত ১১ ফেব্রুয়ারি মামলাটির ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে। এরপরই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিষ্পত্তির জন্য দ্রুত পেপারবুক প্রস্তুতের নির্দেশ দেয়া হয়। ওই নির্দেশের পরই বিজি প্রেসে মামলাটির পেপারবুক প্রস্তুত হচ্ছে। ব্লগার রাজীব হত্যা মামলার পেপারবুক প্রস্তুতের পরই বিশেষ উদ্যোগে আশুলিয়ায় ব্যাংক ডাকাতির মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপীলের পেপারবুক প্রস্তুত করা হবে বলে জানিয়েছে সুপ্রীমকোর্ট প্রশাসন সূত্র। এই ব্যাংক ডাকাতির মামলায় গত ৩১ মে ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালত নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের ৬ জনকে মৃত্যুদ- প্রদান করে। এছাড়া একজনকে যাবজ্জীবন ও দু’জনকে তিন বছর করে কারাদ-াদেশ দিয়েছে আদালত। ফৌজদারি কার্যবিধি (সিআরপিসি) অনুযায়ী বিচারিক আদালতের দেয়া ফাঁসির দ- কার্যকর করতে হলে হাইকোর্টের অনুমোদনের প্রয়োজন হয় যা ডেথ রেফারেন্স হিসেবে পরিচিত। পাশাপাশি মৃত্যুদ-প্রাপ্ত আসামিরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ফাঁসির রায়ের বিরুদ্ধে আপীল করে থাকেন। আসামিদের আপীল ও ডেথ রেফারেন্স একই সঙ্গে শুনানি হয়ে থাকে। এজন্য সংশ্লিষ্ট দায়রা জজ মৃত্যুদ- অনুমোদনের জন্য হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রার বরাবর চিঠি দিয়ে ডেথ রেফারেন্সের নথি প্রেরণ করে থাকেন।
×