ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মারুফ রায়হান

ঢাকার দিনরাত

প্রকাশিত: ০৩:৪১, ২ আগস্ট ২০১৬

ঢাকার দিনরাত

রাজধানীর বিগত সাতদিন যথারীতি বৈচিত্র্যে ভরপুর। যদিও বিশেষভাবে উল্লেখ করার মতো কিছু উপাদানও রয়েছে। অভূতপূর্ব ঘটনাও ঘটেছে অন্তত একটিবার- সেকথাও হলপ করে বলা যাবে। জুলাইয়ের শেষ দিন এ লেখাটি তৈরির সময় পুরো জুলাইয়ের দিকেও ফিরে তাকাতে হচ্ছে। মাসপয়লা যে ঘটনা নৃশংসতার দাগ রেখে গেছে ঢাকার পাঁজরে সেই দাগ কিছুতেই মুছছে না। বরং সেই দাগ থেকে জন্ম নিচ্ছে এক অদৃশ্য অবয়ব- তার দাঁত ও নখর জনমনে শঙ্কা জাগিয়ে তুলছে। ফলে ঢাকার নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। ঢাকার বহু প্রতিষ্ঠান, দর্শনীয় স্পট ও বিনোদনকেন্দ্রে নিরাপত্তা তল্লাশি জোরদার করা হয়েছে। যা হোক লেখার শুরুতে চটজলদি দেখে নেয়া যাক কতিপয় পয়েন্ট। ক্স ঢাকার দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২০১৬-১৭ সালের জন্য ৩ হাজার ১৮৩ কোটি টাকার বাজেট ঘোষিত হয়েছে। যা গত অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় প্রায় তিন গুণ। ক্স ঠিকানা বদল হয়েছে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের। মহানগরীর কেন্দ্রস্থলের কাছাকাছি নাজিমুদ্দীন রোড থেকে কারাগার স্থানান্তরিত হয়ে চলে গেছে সর্বদক্ষিণ প্রান্তে- কেরানীগঞ্জের রাজেন্দ্রপুরে। প্রায় আড়াই শ’ বছর আগে কারাগারটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এই শূন্যস্থান অবশ্য পূরণ হয়ে যাবে জাদুঘর, পার্ক, খেলার মাঠ ও বিনোদন কেন্দ্রে দ্বারা। তবে কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে জাতীয় নানা আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী মহান নেতাদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানটিতে তাদের স্মৃতি ধরে রাখার জন্য উদ্যোগ নিতে হবে। ক্স মহানগরীর নয়নাভিরাম এলাকা হাতিরঝিলে এখন নিয়মিত টহল দিচ্ছেন ট্যুরিস্ট পুলিশ। ক্স ঢাকার ফার্মগেটের কাছে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে শুরু হয়েছে মাসব্যাপী বৃক্ষমেলা। প্রসঙ্গত বৃক্ষরোপণের সুবর্ণ সময় বর্ষাকাল। বষামৌসুম শেষ হতেও কিন্তু খুব বেশি বাকি নেই। ক্স নিরাপত্তার অজুহাত তুলে ব্রিটিশ কাউন্সিল সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কল্যাণপুরে অকল্যাণের অপচ্ছায়া ঢাকার কল্যাণপুর এলাকাটি উন্নয়নে কিছুটা পিছিয়ে থাকা ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চল। সেখানেই অকল্যাণের অপচ্ছায়া বিস্তৃত হচ্ছিল। মহানগরীর অভিজাত এলাকা গুলশানের পর জঙ্গীরা এবার টার্গেট করে কল্যাণপুরের একটি বিদ্যালয়কে। সে লক্ষ্যে তারা বিদ্যালয়টির কাছাকাছি আস্তানা গড়ে তোলে। তাদের কিলিং অপারেশন শুরুর আগেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের আস্তানায় অভিযান চালায়। ফলে ঢাকা আরেকটি বড় ধরনের নৃশংস ঘটনা থেকে বেঁচে যায়। পুলিশের অভিযানে নয়জন জঙ্গী নিহত হয়, উদ্ধার করা হয় আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র। জনকণ্ঠের প্রতিবেদনে উঠে আসে রোমহর্ষক তথ্য। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় : পাকিস্তানের আদলে একটি কেজি স্কুলের শিক্ষক শিক্ষার্থীসহ সবাইকে জিম্মির পর হত্যার পরিকল্পনা ছিল কল্যাণপুরের আস্তানায় হতাহত ও পালিয়ে যাওয়া জঙ্গীদের। পরিকল্পনা সফল হলে বাংলাদেশে এটিই হতো সবচেয়ে বড় জঙ্গী হামলার ঘটনা। গুলশানের চেয়েও বড় ঘটনা ঘটিয়ে সারা পৃথিবীতে হৈচৈ ফেলে দিতেই এমন পরিকল্পনা ছিল জঙ্গীদের। তারই অংশ হিসেবে টার্গেটকৃত ডিন কেজি ইন্টারন্যাশনাল নামের স্কুলটির পাশেই আস্তানা গেড়েছিল জঙ্গীরা। স্কুল থেকে আস্তানার দূরত্ব মাত্র এক থেকে দেড় শ’ গজ। সুরক্ষিত স্কুলটির সবাইকে জিম্মির পর হত্যা করে বাংলাদেশে আইএসের অস্তিত্ব রয়েছে বলে বিশ্বকে জানান দেয়াই ছিল জঙ্গী ও তাদের মদদদাতাদের মূল উদ্দেশ্য। পুলিশের এই সফল অভিযানে দেশের অধিকাংশ মানুষেরই স্বস্তিবোধ করার কথা। কিন্তু দুঃখজনক হলো এই অভিযানকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলার প্রয়াস চালায় একটি মহল। এমনকি ওই অভিযানে পুলিশের একজন সদস্যও কেন নিহত হলো নাÑ এমন বিস্ময় ও কৌতুকমিশ্রিত প্রশ্নও তোলা হয়। ঈদের পর খোলেনি স্কুল রোজার ঈদে স্কুলের ছুটি থাকে বছরের সবচেয়ে দীর্ঘ ছুটি। রমজান মাস পুরোটাই ছুটি দেয়া হয় বলে কোন কোন স্কুলে এই ছুটি দাঁড়ায় দেড় মাসে। রাজধানীর একটি ইংরেজী মাধ্যম স্কুল ঈদের পর খোলার কথা ছিল ঈদের দু’সপ্তাহের মধ্যে। অথচ নির্ধারিত দিনে স্কুল খোলার কয়েকদিন আগে এসএমএস-এর মাধ্যমে প্রায় আড়াই সপ্তাহ ছুটি বাড়ানোর কথা বলা হয়। শুধু ওই স্কুলটির ক্ষেত্রে নয়, রাজধানীর বহু স্কুলই খোলার দিন পিছিয়ে দিয়েছে। গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য ছিল বলেই বিভিন্ন স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের কার্যালয় থেকে নিরাপত্তাজনিত চিঠি ইস্যু করা হয়েছে। এরকম একটি চিঠির অংশবিশেষ এখানে উদ্ধৃত হলো নিরাপত্তার আবশ্যকতার বিষয়টি তুলে ধরার জন্য। “গত ১ জুলাই ২০১৬ খ্রি: গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে সংঘটিত মর্মান্তিক ঘটনার পর জননিরাপত্তা বিধানে পুলিশী ব্যবস্থা পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে। মহানগরীর প্রতিটি এলাকায় ফুট প্যাট্রোল, মোটর-বাইক প্যাট্রোল ও গাড়ি প্যাট্রোলের কার্যক্রম বৃদ্ধির মাধ্যমে দৃশ্যমান পুলিশী ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। বিদ্যমান নিরাপত্তা ব্যবস্থার পাশাপাশি স্থায়ী চেকপোস্ট স্থাপন করে সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের তল্লাশি করা হচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে সময় ও স্থান পরিবর্তন করে আকস্মিকভাবে চেক পোস্ট স্থাপন করা হচ্ছে। নিয়মিতভাবে বিভিন্ন স্থানে ব্লক রেইড করা হচ্ছে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সাধারণভাবে বিভাগ তথ্য সংগ্রহ করে জঙ্গীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিচ্ছে এবং জঙ্গী কার্যক্রমের পরিকল্পনাকারী আশ্রয়দাতাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। সাম্প্রতিক বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রমের প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন স্থাপনা/প্রতিষ্ঠানের মালিক তাদের প্রতিষ্ঠান/স্থাপনা নিরাপত্তার জন্য ক্রমাগতভাবে অধিকহারে স্থায়ী পুলিশ নিয়োগের জন্য চাহিদা দিচ্ছেন। কিন্তু ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় আইনশৃঙ্খলা ও জননিরাপত্তা রক্ষায় প্যাট্রোলিং, চেকপোস্ট, ব্লক রেইড, তল্লাশি অভিযান, দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান পুলিশী ব্যবস্থা গ্রহণ, বিভিন্ন দূতাবাস, ঢাকাস্থ আন্তর্জাতিক সংস্থার স্থানীয় কার্যালয় এবং ডিপ্লোম্যাটদের আবাসিক এলাকার পাশাপাশি ঢাকার বসবাসকারী বিভিন্ন দেশের কমিউনিটির বাড়তি নিরাপত্তা গ্রহণ, ভিভিআইপি, বিচারপতিদের হাউসগার্ড প্রদান ও ক্লোজ প্রটেকশন বৃদ্ধি এবং গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর বিভিন্ন স্থাপনায় নিরাপত্তা বিধান এবং ক্রমবর্ধমান নৈমিত্তিক চাহিদার প্রেক্ষিতে ফোর্সেস স্বল্পতার কারণে চাহিদা অনুযায়ী সর্বক্ষেত্রে স্থায়ীভাবে ফোর্স নিয়োজিত করা সম্ভব হচ্ছে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি প্রতিটি সংস্থা/প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে জননিরাপত্তা চিহ্নিতসহ জনগণের মাঝে নিরাপত্তাবোধ বৃদ্ধি করা সম্ভব বলে প্রতীয়মান হয়। এমতাবস্থায় আপনার প্রতিষ্ঠান/স্থাপনার নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে নিম্নবর্নিত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হলো: ১। প্রতিষ্ঠান/স্থাপনাসমূহের ভিতর, ভিতরের রাস্তা, বাইরের রাস্তা ও বিভিন্ন কৌশলগত এলাকাকে সন্নিবেশিত করে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ও উন্নতমানের সিসি ক্যামেরা (রাত্রিকালীন ছবি ধারণক্ষমতা সম্পন্ন) স্থাায়ীভাবে স্থাপন/সংযোজন করা। ২। প্রতিষ্ঠান/স্থাপনাসমূহের প্রবেশ পথে হ্যান্ড মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে দেহ তল্লাশির ব্যবস্থার পাশাপাশি স্থায়ীভাবে আর্চওয়ে গেট স্থাপনা করা। ৩। প্রতিষ্ঠান/স্থাপনাসমূহের চতুর্দিকের দেয়াল উঁচু করা এবং দেয়ালের ওপর সুরক্ষিত গ্রিল/কাঁটাতারের বেড়া দেয়া। ৪। প্রতিষ্ঠান/স্থাপনাসমূহের একটি রেজিস্ট্রার রাখার ব্যবস্থা করা এবং দর্শনার্থীর নাম, ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর রেজিস্টারে অন্তর্ভুক্ত করা। ৫। প্রতিষ্ঠান/স্থাপনাসমূহের চতুর্দিকে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করা। ৬। যানবাহন তল্লাশির জন্য ভেহিকেল সার্চ মিররের ব্যবস্থা করা। ৭। প্রতিষ্ঠান/স্থাপনাসমূহের প্রবেশমুখে প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে লাগেজ স্ক্যানার স্থাপন করা। ৮। পর্যাপ্ত সংখ্যক প্রাইভেট সিকিউরিটি গার্ড নিয়োগ করা। ৯। প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে সশস্ত্র এমবডিড আনসার নিয়োগ করা।” ওই চিঠিতে আরও বলা হয়Ñ পুলিশের একার পক্ষে যেমন নাগরিক নিরাপত্তা প্রদান করা সম্ভব নয়, তেমনি সরকারের পক্ষেও এককভাবে নিরাপত্তা প্রযুক্তি স্থাপন করা সম্ভব নয়। এজন্য দরকার নাগরিক সহযোগিতা। সুনসান গুলশান সন্ধ্যায় গুলশান অনেকটাই সুনসান হয়ে পড়ছে। এক সিনিয়র বন্ধু বিদেশ থেকে এসে উঠেছেন সেখানকার একটি রেস্টহাউসে। ভদ্রলোকের স্যুটে গজল পরিবেশনার আয়োজন করা হয়েছিল। বন্ধুস্থানীয় অল্প ক’জন শ্রোতা ছিলেন। যাওয়া-আসার সময় হোটেলের লবিতে এবং খাবারকক্ষে কাউকেই দেখতে পেলাম না। গুলশানের প্রধান সড়কগুলোতে কোন যানজট নেই। সবচেয়ে খারাপ লাগলো সেখানকার বড় বড় রেস্তোরাঁগুলোর নির্জীব দশার কথা জানতে পেরে। নিজেও কিছুটা প্রত্যক্ষদর্শী তার। মধ্যরাত পর্যন্ত যেসব অভিজাত হোটেল-রেস্তরাঁয় জমজমাট আড্ডা চলত, একটা টেবিল দখলে পাওয়ার জন্য রীতিমতো অপেক্ষা করতে হতো, এখন সেখানে গ্রাহকদের বড়ই অভাব। খাঁখাঁ করছে। কয়েক জঙ্গী মিলে বিরাট একটা এলাকার প্রাণপ্রবাহ এভাবে নিস্তেজ করে দিল! এটাকে কি চলতে দেয়া উচিত? গুলশান আবারও সরব হয়ে উঠুকÑ শুধু এ সদিচ্ছা জানানোই যথেষ্ট নয়, আমাদের সেখানে গিয়ে ভয়কে জয় করতে হবে। ফিরিয়ে আনতে হবে গুলশানের গরিমা ও প্রাণচাঞ্চল্য। নির্বাচিত ফেসবুক পোস্ট বাংলা সাহিত্যের স্বনামধন্য লেখক মহাশ্বেতা দেবীর প্রয়াণে বহু লেখক-সাংবাদিক ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়েছেন। ঢাকায় জন্মগ্রহণকারী এ মহান লেখক সম্পর্কে কলকাতায় বসবাসকারী ঢাকার সাংবাদিক-লেখক উর্মি রহমান নিচের পোস্টটি দিয়েছেন ফেসবুকে। ‘নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি সময় মহাশ্বেতা দেবীর সাক্ষাতকার নিয়েছিলাম বিবিসি বাংলা বিভাগের জন্য। তিনি তখন বালীগঞ্জের কাছে একটি বাড়ির চিলেকোঠায় থাকতেন। অনেকক্ষণ কথা বলেছিলেন। তবে গোড়াতেই ধমক খেয়েছিলাম দু’বার। পরিচয় গিয়ে সাক্ষাতকারের কথা বলতেই একটু রূঢ়ভাবে বলেছিলেন, ‘সাহিত্য-টাহিত্য নিয়ে আমি ইন্টারভিউ দিই না।’ আমি যখন বললাম আদিবাসীদের নিয়ে তাঁর কাজ সম্পর্কে কথা বলতে চাই, তখন রাজি হয়েছিলেন। দ্বিতীয়বার ধমক খাই সাগর আর রূপককে রাস্তায় দাঁড় করিয়ে এসেছি বলে। ওরা ওপরে আসার পরে এক মহিলাকে ডেকে বলেছিলেন, ‘বাচ্চাটাকে কিছু খেতে দে। ও তো বিলেতে থাকে, বাংলা বলতে পারে না।’ আমি বলেছিলাম, রূপক বাংলা বলে। তখন বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশের ছেলে তো, বাংলা বলবেই। এখানকার ছেলেমেয়েরা তো হিন্দী বলে।’ এখন বাংলাদেশের বর্তমান প্রজন্মের কত শতাংশ বাংলা বলে আমি জানি না। মহাশ্বেতা দেবীর প্রয়াণে আমি আমার গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি।’ শনিবারের সান্ধ্যবৃষ্টি এবং কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কয়দিন রীতিমতো খরা। তারপর হঠাৎ করেই শনিবার সন্ধ্যায় মুষলধারে বর্ষণ। ঢাকাবাসী ভুলতেই বসেছিল এখন শ্রাবণ চলছে। সান্ধ্যবৃষ্টি মনে করিয়ে দিল বাংলার বর্ষার অবিরাম একটানা ধারাপতনের বাস্তবতা। রসিক কোনো ব্যক্তি অন্যমাত্রায় গেয়েই উঠতে পারেনÑ শাওন আসিল ফিরে...। মাত্র ঘণ্টা দেড়েকের বৃষ্টি। সেটিও অবশ্য ঢাকার মধ্যাঞ্চলে। মানে ধানম-ি-ফার্মগেট-শাহবাগ এলাকায়। উত্তরার দিকে কুড়ি মিনিটের ছিঁটেফোঁটা। পুরনো ঢাকায়ও তথৈবচ। সত্যি বলতে কী ঢাকা এখন এতটাই সম্প্রসারিত হয়ে গেছে যে তার কোন একটি নির্দিষ্ট এলাকায় বৃষ্টিপাত হলে অন্যত্র শুকনো খটখটা থেকে যেতেই পারে। যা হোক, দেড় ঘণ্টার বৃষ্টিতে উল্লিখিত ওই অঞ্চলে যথেষ্ট পরিমাণে পানি জমে গেল। তবে পান্থপথের ট্রাফিক সিগন্যাল থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত যাওয়ার সড়কে আড়াই শ’ গজ পরিমাণ পথ পুরোপুরি তলিয়ে গেল। সেখানে পেভমেন্টের ওপরেও হাঁটুপানি। রিক্সা আর মোটরকার সাহস করে পথটুকু পেরিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু টেম্পো বা সিএসজি অটোরিক্সা গোঁ ধরে বসলো পানি পার হবে না কিছুতেই। অল্পক্ষণের ভেতরেই জলজটের পাশাপাশি যানজট লেগে গেল। পুরুষ মানুষরা না হয় জুতো খুলে পাৎলুন গুটিয়ে পথটুকু পার হয়ে গেলেন। কিন্তু মহিলাদের কথাটি একবার ভাবুন। এই হলো আমাদের রাজকীয় রাজধানীর হালচাল। ওদিকে রাত নয়টার পর সাধারণত ফার্মগেট দিয়ে উত্তরাগামী এসি বাস পার হয় না। তার আগেই লাস্ট ট্রিপ চলে যায়। বৃষ্টির দিনের ব্যাপার আলাদা। বৃষ্টির কারণে জলজট লেগে যায়, অবধারিতভাবে যানজটও তৈরি হয়। ফলে সব নিয়মই বদলে যায়। ফার্মগেটে এসি গাড়ির যাত্রীদের দীর্ঘ লাইন। কানে এলো কয়েকটি সংলাপ। একজন বলছেন, এত মানুষ লাইনে! দুটো খালি বাস আসলেও সবাই যেতে পারবেন না। অন্যজনের রূষ্ট মন্তব্য : মিরপুর রুটের গাড়ির অভাব নেই। কুড়িটি গাড়ি আসার পর উত্তরা রুটের একখানা গাড়ির দেখা মেলে। সিটিংয়ের অনুমতি নেই। অথচ তিন নম্বর লোকাল বাসগুলো সিটিং হয়ে গেছে রাতারাতি, দাঁড়িয়ে লোক নেয় না। বিআরটিসির এসি বাস পারলে পাদানিতেও দশজন দাঁড় করায় আর তিন নম্বরের এই লাটসাহেবি। সত্যি রাজধানীর পরিবহন সেক্টরের নৈরাজ্য দূর হওয়ার নয় বলেই ধারণা হয়। যাদের এসব দেখার দায়িত্ব, সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব, তারা যদি সমস্যা আরও বাড়িয়ে তোলেন তাহলে ঢাকাবাসী পথে ভালভাবে চলবেন কিভাবে? ৩১ জুলাই ২০১৬ [email protected]
×