ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

দ্রুততম মানব কে বোল্ট না গ্যাটলিন?

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ১ আগস্ট ২০১৬

দ্রুততম মানব কে বোল্ট না গ্যাটলিন?

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ অলিম্পিক এ্যাথলেটিক্সের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ইভেন্ট ১০০ মিটার স্প্রিন্ট। আর এটাকে আরও আকর্ষণীয় ও সবার দৃষ্টিকে নিবদ্ধ করে রেখেছেন সর্বকালের সবচেয়ে গতিধর মানব জ্যামাইকার উসাইন বোল্ট। কোনভাবেই তাকে দমানো যায়নি। ২০০০৮ সালে বেজিংয়ে এবং ২০১২ সালে লন্ডন অলিম্পিকে অপ্রতিরোধ্য বোল্ট জিতেছেন ১০০ মিটার, ২০০ মিটার ও ৪ী১০০ মিটার রিলেতে স্বর্ণপদক। এবারও তিনিই ফেবারিট। কিন্তু বোল্টের জন্য সবসময়ই বড় ধরনের আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অন্যতম প্রতিপক্ষ হিসেবে চ্যালেঞ্জের নাম হয়ে গেছেন যুক্তরাষ্ট্রের জাস্টিন গ্যাটলিন। দুর্দান্ত ফর্মেও আছেন এ স্প্রিন্টার। এবার রিও অলিম্পিকে বোল্টের শ্রেষ্ঠত্ব খর্বের জন্য উন্মুখ হয়ে আছেন গ্যাটলিন। গত বিশ্ব আসরে সামান্য ব্যবধানে হেরে গিয়েছিলেন। কিন্তু এবার বড় ধরনের ইনজুরি কাটিয়ে ওঠা বোল্টের বিপক্ষে গ্যাটলিন জিতবেন এমনটাই মনে করছেন অনেকে। যদিও বোল্ট ঘোষণা দিয়েছেন তার অলিম্পিক স্বর্ণপদক ধরে রাখার। বেজিং দিয়েই নিজের অলিম্পিক ক্যারিয়ারটাকে স্বর্ণ সাফল্য দিয়ে মোড়াতে শুরু করেছিলেন বোল্ট। মাত্র ৯.৬৯ সেকেন্ড টাইমিংয়ে জিতে নতুন অলিম্পিক ও বিশ্বরেকর্ড গড়েছিলেন। সেই বিখ্যাত বার্ডস নেস্ট অলিম্পিক স্টেডিয়ামেই গ্যাটলিনের মুখোমুখি হয়েছিলেন তিনি গত বছর বিশ্ব এ্যাথলেটিক্স আসরে। গত বছরটা ইনজুরির প্রকোপে প্রায় পুরোটা সময়ই ট্র্যাক এ্যান্ড ফিল্ড থেকে দূরে ছিলেন বিশ্বরেকর্ডধারী (৯.৫৮ সেকেন্ড) বোল্ট। তবে দারুণ ফর্মে ছিলেন গ্যাটলিন। তাই সবারই বিশেষ দৃষ্টি ছিল বিশ্ব আসরের দিকে। বছরের র‌্যাঙ্কিংয়ে গ্যাটলিন যেখানে এক নম্বরে, সেখানে বোল্টের অবস্থান ছিল ৬ নম্বরে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত স্প্রিন্ট সম্রাট বোল্টকে ছুঁতে পারেননি গ্যাটলিন। অবশ্য ন্যূনতম ব্যবধানেই হেরে যান। বোল্ট আবার হয়ে যান বিশ্বসেরা ৯.৭৯ সেকেন্ড টাইমিংয়ে জিতে। মাত্র ০.০১ সেকেন্ড বেশি সময় নিয়ে গ্যাটলিন জয় করেন রৌপ্য। এবার অলিম্পিকের আগে বোল্ট বড় ধরনের ইনজুরিতে পড়েছিলেন। হ্যামস্ট্রিংয়ের ইনজুরি তাকে বাধ্য করে জ্যামাইকার অলিম্পিক ট্রায়াল থেকে নাম প্রত্যাহার করতে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্রায় এক মাস পর ২২ জুলাই লন্ডন ডায়মন্ড লীগ মিটে ২০০ মিটারে ফিরেই আবার জিতে নিজের সামর্থ্য ফুরিয়ে যায়নি সেই প্রমাণটা দিয়েছেন জীবন্ত এ কিংবদন্তি। ১৯.৮৯ সেকেন্ড টাইমিংয়ে জিতেই বোল্ট ঘোষণা দেন, ‘সবাই বার বার জিততে চায়। আর আমি চাই রেকর্ড গড়তে। আমার লক্ষ্য অলিম্পিকে আবার ট্রিপল জয়। স্বর্ণপদক ধরে রাখতে চাই।’ ১৩ আগস্ট রিও’র দিকে সারাবিশ্ব তাকিয়ে থাকবে। কারণ সেদিনই বোল্ট-গ্যাটলিন লড়াই হবে স্বর্ণের জন্য। বিশ্বরেকর্ডধারী বোল্ট এ ইভেন্ট নিয়ে বলেছেন, ‘বিশ্বরেকর্ড সবসময়ই সেরাদের দখলে থাকে। কিন্তু এটা যেকোন সময় ভেঙ্গে যেতে পারে। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপসের পদকগুলোও চমৎকার অর্জন। কিন্তু সবাই জানে অলিম্পিকের মর্যাদা কতখানি। এটাই বিশ্বের সবচেয়ে বেশি আকর্ষণীয় এবং মনোযোগের কেন্দ্রে থাকে। যখন ১০০ মিটারের ফাইনাল হবে পুরো বিশ্বই বলবে- উসাইন বোল্ট দৌড়াচ্ছে, সবকিছু ছেড়ে চলো গিয়ে দেখি!’ বৃহস্পতিবার যখন রিও বিমানবন্দরে বোল্ট পৌঁছান তখন তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল তিনি এই দীর্ঘ ভ্রমণের মধ্যে রিওতে স্বর্ণ জেতার স্বপ্ন দেখেছেন কিনা? এ বিষয়ে বোল্ট বলেন, ‘আমি আসলে একটুও ঘুমাইনি। জেতার চিন্তায় সেটা আসেনি।’ তবে বেজিং বিশ্ব আসরের চাইতেও এবার রিও অলিম্পিকে বোল্টের সঙ্গে গ্যাটলিনের যুদ্ধটা অনেক কঠিন হবে। কারণ হ্যামস্ট্রিং ইনজুরি থেকে সবেমাত্র ফিরেছেন বোল্ট। আর একেবারে তরতাজা আছেন গ্যাটলিন। কিন্তু বেজিংয়ে যখন বোল্ট হারের শঙ্কায় ছিলেন, তখন বিশ্বব্যাপীই নানা ধরনের কথা হচ্ছিল। অনেকেই বলছিলেন, ‘যদি বোল্ট হারেন, তাহলে এই ক্রীড়াটিই বিলুপ্ত হয়ে যাবে’, ‘তিনি গ্যাটলিনকে কোনভাবেই জিততে দেবেন না’ ‘এই ক্রীড়ার ভবিষ্যত এখন বোল্টের হাতে’- ইত্যাদি। এবারও একই আলোচনা চারদিকে। বোল্টের সবচেয়ে বড় সমস্যা স্টার্টিংয়ে। সেটা কোনভাবেই কাটিয়ে উঠতে পারেননি পুরো ক্যারিয়ারে। সেটা কাটাতে পারলে হয় তো আরও বিস্ময়কর কোন টাইমিং উপহার দিতে পারতেন। তবে বোল্টের বিপক্ষে লড়াইয়ে সবসময়ই বাড়তি চাপে থাকেন গ্যাটলিন, আর সেটাই বার বার তাকে পরাজিত করে। ৩৪ বছর বয়সী এ স্প্রিন্টার কি এবার পারবেন রিও-তে সব পাল্টে দিতে? তবে বেজিং ব্যর্থতাকেই নিজের শক্তি হিসেবে দেখছেন এ মার্কিন স্প্রিন্টার। তিনি এ বিষয়ে বলেছেন, ‘রেসটা শেষ হওয়ার পর থেকেই আমি সামনের দিকে তাকিয়েছি, ভুলে গেছি সব। আবার যখন সময় আসবে তখন কি করব সেদিকেই আমার সব মনোযোগ। আমি শুধু নিজেকে নিয়ে ভাবতে চাই। আমার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার যে মনোভাব আছে, সেটার পর আমি হারি বা জিতি সেটা নিয়ে কোন দুঃখ থাকে না। কারণ, যে কেউ আমার বিপক্ষে দৌড়াক না কেন জিততে হলে অবশ্যই তাকে অনেক ভাল দৌড়ে বিশ্বসেরা হতে হবে।’
×