ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বরেন্দ্র অঞ্চলের নির্জন বাথানবাড়িতে এসব তরুণ কারা?

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ১ আগস্ট ২০১৬

বরেন্দ্র অঞ্চলের নির্জন বাথানবাড়িতে এসব তরুণ কারা?

জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ বৃহত্তর রাজশাহীর বিচ্ছিন্ন বরেন্দ্র অঞ্চলে এরা কারা? এমনকি একেবারে নির্জন চলনবিলের যেখানে সেখানে নৌকাভর্তি যাত্রীরাই কারা? বরেন্দ্রর প্রায় বিশ থানার বাথানবাড়িতে এসব তরুণ যুবকের আস্তানা। প্রতিদিন এসব আস্তানায় সদস্য সংখ্যা বাড়ছে। বিভিন্ন চরাঞ্চলে যৌথ বাহিনীর অভিযানের মুখে সরে যাওয়া মানুষজন দ্রুত সরে যাচ্ছে বরেন্দ্র অঞ্চলের বাথান বাড়িতে। এসব বাথানবাড়ির অবস্থান বিশাল বরেন্দ্র ভূমির জনশূন্য বিচ্ছিন্ন দুর্গম এলাকায়। বিশেষ করে আমন বোরো মৌসুমে আবাদের সময়ে জমি চাষ করতে বহু কষ্টে কৃষকরা অবস্থান নিয়ে রাত কাটানোর জন্য যেসব বাথানবাড়ি করে রেখেছে সে এসব বাথান বাড়িতে অচেনা তরুণ-যুবকরা আসা-যাওয়া করছে সাঁওতাল বিদ্রোহ কিংবা তেভাগা আন্দোলনেও এসব বাথানবাড়ি তেমন একটা ব্যবহৃত হয়নি। কেবলমাত্র সর্বহারা আন্দোলন এবং একাত্তরে বরেন্দ্রর মহান মুক্তি যুদ্ধে বহু যুবক নিরাপদ দূরত্বে সরে যাবার ঠিকানা হিসাবে এসব নির্জন বাথানবাড়ি ব্যবহার করতেন। বিচ্ছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থা। জমি আবাদের সময় বরেন্দ্রর কৃষকরা পায়ে দলে ও গরুর গাড়ি ব্যবহার করে বাথানবাড়িতে অবস্থান নিয়ে আবাদের সময়টুকু থেকে আবার স্থায়ী ঠিকানা লোকালয়ে ফিরে যায় আগের দিনে কৃষক বিশুদ্ধ পানির অভাবে তৃষ্ণা মেটাত পুকুরের জল দিয়ে। নির্জন বিচ্ছিন্ন জঙ্গলে ভরা বাথানবাড়িতে সাপ জোঁকের ছড়াছড়ি ছিল। বর্তমানে এই অবস্থার তেমন একটা পরিবর্তন না হলেও আমন আবাদের জন্য জমজমাট হয়ে উঠেছে বাথানবাড়ি। কেরোশিনের কুপি জ্বালিয়ে রাত কাটানোর মধ্যে তেমন কোন আনন্দ না থাকলেও খুবই বাধ্য হয়ে বাথানবাড়ির পরিবেশ মানিয়ে নিয়ে কৃষকরা অবস্থান করত। কিন্তু এবার এসব জমি চাষকরা কৃষকদের মধ্যে বহিরাগতদের আগমনকে ভাবিয়ে তুলেছে। যদিও এসব বহিরাগত খাওয়া দাওয়া নিজেদের নিয়ে যাওয়া সামগ্রী ব্যবহার করছে। তবে মাঝে মধ্যেই তাদের খাবার আসছে শহর থেকে। কারা সরবরাহ করছে বা কাদের কাছ থেকে আসছে তা কেউ জানেনা। কিছুদিন ধরেই জমি চাষ, আবাদ ও ধান কাটার কামলার অভাব অনুভব করে আসছে বরেন্দ্রর কৃষকরা। কিন্তু এবার চিত্রটা কিছুটা ভিন্ন। বহিরাগত তরুণরা কামলার অভাব পূরণসহ মজুরি হাঁকছে অনেক কমে। মনে হবে বাথানবাড়ির আশ্রয়, আর প্রধান বাথানবাড়ির মালিক চাষীকে খুশি রাখতে তারা আবাদের কাজে নিজেদের ব্যবহার করে কৃপা ও সহানুভূতি আদায়সহ মজুরির পরিমাণও কম চাচ্ছে। বরেন্দ্রর অধিকাংশ আমন চাষী খুবই গরীব অথবা ভাগচাষী হওয়ার কারণে এসব যুবকের থাকার বিষয়ে সহযোগিতা দিচ্ছে। অপর পক্ষে তেমন কোন জিজ্ঞাসাবাদের মধ্যেও ঢোকার চেষ্টা করছেনা। তারা মানে যুবক ও মধ্য বয়সীরা কোন ধরনের বাধা সৃষ্টি না করে বাথান মালিকদের সহযোগিতা দেয়ার চেষ্টা করছে। রাজশাহীর তানোর ও গোদাগাড়ী নওগাঁর নিয়ামতপুর থানার বরেন্দ্র অঞ্চল চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা সংলগ্ন হওয়ায় বাথানবাড়িতে অবস্থানকারীরা মাঝে মধ্যেই রাতের অন্ধকারে শহরে চলে যায়। এ ছাড়াও একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে ধামইরহাট, পতœীতলা, বদলগাছি, মান্দা, রানীনগর, আত্রাই, পোরশা, গোমস্তাপুর, নাচোল, চাঁপাই সদরসহ পবা, দুর্গাপুর, বাগমারা, মোহনপুর, বড়াইগ্রাম, লালপুর, গুরুদাসপুর ও সিংড়া এলাকাতে এসব বহিরাগত আশ্রয় নিয়েছে। তবে বর্ষাকাল ও বন্যার কারণে নাটোর এলাকার নির্জন চলনবিলে বেড়েছে নৌকার সংখ্যা। বরেন্দ্র অঞ্চল খুবই উঁচু ও নির্জন বিচ্ছিন্ন হওয়ায় বর্ষাকালে জমিসহ কাঁচা রাস্তা লাল কাদা ভরে উঠলেও বন্যার মতো ডুবে যাবার মতো অবস্থা হয়না। তবে কাদার ভয়াবহতা এতটাই বেশি যে মানুষ কৃষি কাজ বা জমি আবাদ ছাড়া কেউ সমতল ভূমিতে নামেনা। নির্জন বাথানবাড়িতে যেতে কাদার মধ্যে হাঁটু পর্যন্ত দেবে যায়। এসব কাদা খুবই আঠাল। এদিকে চারঘাট, গোদাগাড়ী, শিবগঞ্জ, ভোলাহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরের পুরো সীমান্ত এলাকা চরাঞ্চল হবার কারনে হঠাৎ করেই বাহু মানুষ হেঁটে ও বা পদ্মা পেরিয়ে মালদহ ও মুর্শিদাবাদে অবস্থান নিয়েছে। বগুড়া, পাবনা চরাঞ্চলের বহু মানুষ বরেন্দ্রর বাথানবাড়ি কিংবা সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে চলে গেছে। বিশেষ করে সন্ত্রাসের জনপদ হিসেবে চিহ্নিত চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার প্রায় ৮টি ইউনিয়নের কয়েক হাজার যুবক ভারতে অবস্থান করছে। অনরূপ ভাবে নারায়ণপুর, বাগডাঙ্গা, আলাতুলী, দেবীনগর, ইসলামপুরসহ ৮/৯ ইউনিয়নের তরুণ ও যুবক শ্রেণীর লোকজন ঘরে নেই। এদের সিংহভাগ মাদক ও অস্ত্র সহ নানান ধরনের পণ্যের চোরাচালানে খুবই পটু ও দক্ষ।
×