মোরসালিন মিজান ॥ চেনা চারপাশ। নিত্যদিন দেখা। এর পরও নতুন হয়ে ধরা দেয়। কিছু ছবিতে চোখ আটকে যায়। দৃশ্য নয় শুধু। দৃশ্যের গভীরে যাওয়ার সচেতন প্রয়াস। ক্যামেরার চোখে দেখা স্ব স্ব জগৎ মেলে ধরেছেন আলোকচিত্রীরা। শিল্পকলা একাডেমির একাধিক গ্যালারি জুড়ে চলছে জাতীয় আলোকচিত্র উৎসব। ঢাকা ইউনিভার্সিটি ফটোগ্রাফিক সোসাইটি- ডিইউপিএস আয়োজিত উৎসব বেশ উপভোগ্য হয়ে উঠেছে।
এর আগে দুটি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে টিএসসিতে। এবার আরও বড় পরিসরে শিল্পকলায় উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। বেশ ঘুচালো প্রদর্শনী। আগেই ছবি আহ্বান করা হয়েছিল। জমাও পরে অনেক। সেখান থেকে নির্বাচিত ছবিগুলো নিয়ে উৎসব। গ্যালারির দেয়াল জুড়ে বিচিত্র বিষয়ের উপস্থাপনা। অলি গলি ফুটপাথ থেকে প্রিয় রাজধানী শহরকে খুঁজে নেন আলোকচিত্রীরা। সাধারণ চোখে যা মূল তা এড়িয়ে যান। পছন্দের অনুষঙ্গ পাওয়া মাত্র আলো ফেলেন সেখানে। ওমনি নতুন মনে হয় সব। উদাহরণ হতে পারে আম্বিয়া আর শাখির তোলা বুটপালিশওয়ালার ছবিটি। জুতো সেলাই করার মুহূর্ত আলোকচিত্রী সচেতনভাবে এড়িয়ে যান। তার আলোকচিত্রে দেখা যায়, আয়েশি ভঙ্গিতে মোবাইল ফোনে কথা বলছেন বুটপালিশওয়ালা। পাশে রাখা বাক্সের গায়ে ডিজিটাল ব্যানার। সেখানে ক্রিকেট তারকা সাকিব আল হাসান। মোবাইল ফোনে কথা বলছেন তিনিও। দুজনের মধ্যে অভিনব সংযোগ গড়ে দেন যেন আলোকচিত্রী। সিয়াম রহমানের ক্যামেরায় বাস ভর্তি যাত্রী। এই যাত্রীরা তার কাছে গৌণ। বাসের ছাদে বহন করা একটি ছাগলকে মূল অনুষঙ্গ করেন তিনি। আর তখনই বিশেষ ব্যঞ্জনা নিয়ে হাজির হয় তার আলোকচিত্র। মিরাজ হোসাইনের ক্যামেরায় প্রাণহীন স্থবির থেমে যাওয়া জীবন। এই জীবনের কথা বলতে তিনি জং ধরা তালাবদ্ধ লোহার ফটককে আশ্রয় করেন। সাদা কালো পেইন্টিং যেন তার ক্যামেরার ক্লিক।
বর্ষাকাল বলেই হয়ত বৃষ্টি খুব প্রাধান্য পেয়েছে। শ্রাবণধারায় সিক্ত শহর, শহরের কোমল রূপ ফুটে উঠে কয়েকটি আলোকচিত্রে। কখনও চঞ্চল চিরযৌবনা বর্ষার সঙ্গে দেখা হয়ে যায়। ইফতেখার রাকিন, সাকিব ইমাম, শাফকাত খান বর্ষাকে স্বতন্ত্র উপস্থাপনা দেন। খোরশেদ আলম বর্ষাকে তুলে আনেন চলন্ত ট্রেনের ছাদ থেকে। পলিথিনের ভেতর থেকে উঁকি দেয়া মুখগুলোতে দুর্ভোগ নেই। হাসি রাশি আনন্দের অনিন্দ্য প্রকাশ।
প্রদর্শনীর আলোকচিত্রে শহর ঢাকার প্রাধান্য। তবে যেটুকু গ্রাম আর খোলা আকাশ দেখা যায়, উল্লেখ করার মতো সুন্দর। এসেছে সমুদ্রও। ওয়াইল্ড ফটোগ্রাফি আছে কিছু। মূল ছবির সঙ্গে সংযোজন বিয়োজন করে অনেকেই নিজস্ব শিল্পভাষা নির্মাণের চেষ্টা করেছেন। সব মিলিয়ে দেখার মতো আয়োজন। ২৯ জুলাই শুরু হওয়া উৎসব চলবে মঙ্গলবার পর্যন্ত।